বন্দর নগরীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রবল প্রতাপের বিরুদ্ধে এক রকম চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া আ জ ম নাছির বসবেন সেই চেয়ারে, যেই চেয়ারে টানা ১৬ বছর আসীন ছিলেন মহিউদ্দিন।
নিজের দলে প্রবীণ নেতা মহিউদ্দিন এবং ভোটে আরেক প্রবীণ এম মনজুর আলমকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হলেন ৫৮ বছর বয়সী আ জ ম নাছির; যিনি বলেছিলেন, ভোটের মাঠে তারুণ্যই তার শক্তি।
ভোটের লড়াইয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনজুর প্রতিদ্বন্দ্বী নাছিরের দিকে ইঙ্গিত করে চট্টগ্রামকে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে না দেওয়ার আহ্বান রেখেছিলেন নগরবাসীর কাছে।
কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরে ভোটগ্রহণের মাঝ পর্যায়ে নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি রাজনৈতিক জীবনেরও ইতি টানার ঘোষণা দেন গত পাঁচ বছর মেয়র এবং তার আগে বহু বছর কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী মনজুর।
দিনভর ভোটগ্রহণের পর ভোররাতে গণনা শেষে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন যে ফল ঘোষণা করেন, তাতে নাছিরের হাতি প্রতীকে ভোট দেখা যায় ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬১টি।
মোট ৭১৯টি কেন্দ্রের সবগুলোর ফলাফলে কমলা লেবু প্রতীকে মনজুর পেয়েছেন ৩ লাখ ৪ হাজার ৮৩৭ ভোট। দুজনের ভোটের ব্যবধান ১ লাখ ৭০ হাজার ৫২৪।
পাঁচ বছর আগে নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মহিউদ্দিনকে প্রায় এক লাখ ভোটে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন মনজুর। ওই হারের শোধ এবার নিলেন দলের মধ্যে মহিউদ্দিনবিরোধী শিবিরে থাকা নগর সাধারণ সম্পাদক নাছির।
তবে দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় নাছিরের এই জয়কে কালিমালিপ্ত করেছে কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ।
মনজুরের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “৮০ শতাংশ ভোট কেন্দ্রই দখল হয়ে গেছে।”
তবে নাছিরের নাগরিক কমিটি ভোট জালিয়াতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, পোলিং এজেন্ট না পাঠিয়েই তাদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনজুর।
মনজুরের উন্নয়ন আন্দোলনের সব অভিযোগের জবাব দিয়েছেন নাছির এভাবে- “আমি একজন খেলোয়াড়। খেলার মাঠে আমার বিপক্ষে কেউ খারাপ খেললে তার ব্যর্থতা তো আমার নয়।”
গত শতকের ’৮০ এর দশকে ছাত্রলীগে নেতা হিসেবে রাজনীতিতে পরিচিতি পাওয়া নাছির পরে পরিচিত হয়ে ওঠে ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে।
১৯৮৫ সালে চট্টগ্রাম ব্রাদার্স ইউনিয়ন যাত্রা শুরু করলে তখন সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন নাছির। ২০১১ সাল থেকে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক তিনি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক নাছির ক্রিকেট কমিটি অফ ঢাকা মেট্রোপলিটনেরও চেয়ারম্যান।
পঁচাত্তর পরবর্তীতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হয়েই ছাত্রলীগে ছিলেন নাছির। তবে ’৯০ এর দশকে এসে ভিন্ন পথে চলতে শুরু করেন তিনি।
দুই বছর আগে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর আওয়ামী লীগে নাছিরের কর্তৃত্ব বাড়ে। অন্যদিকে গত নির্বাচনের হারের সময় থেকে নগর সভাপতি মহিউদ্দিনের প্রতাপ কমছিল।
তারপরও এবারের ভোটে মেয়র প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন মহিউদ্দিন। কিন্তু দলের কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত তার পক্ষে যায়নি। তাই পিছু হটেন তিনি। কথা দিলেও নাছিরের সঙ্গী হয়ে মহিউদ্দিনের প্রচারে না নামাটা সবারই নজরে পড়েছে।
নাছির তার প্রচারে গত পাঁচ বছরে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনজুরের ব্যর্থতার দিকটিই ভোটারদের সামনে এনে মেগাসিটি গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন নিজের নির্বাচনী ইশতেহারে।
নগরীর দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়ে ভোট চাওয়া নাছির বারবারই বলে আসছিলেন, চট্টগ্রামকে ঘিরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের যে উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা রয়েছে, তিনি নির্বাচিত হলে তা পরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়িত হবে।
ভোটের দিনও সংবাদ সম্মেলনে এসে নিজের জয়ের আশাবাদ প্রকাশ করে নাছির বলেন, “যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তা পূরণ করব।”