কারাবন্দি অবস্থায় বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টুর মৃত্যুকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ বলছে তার পরিবার।
Published : 03 May 2015, 07:05 PM
রোববার বিকালে পুরান ঢাকার হাজারীবাগের বাসায় পিন্টুর মা হোসেনে আরা, স্ত্রী নাসিমা আখতার কল্পনাসহ পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের কাছে এই অভিযোগ তুলে ধরেন।
হোসনে আরা বলেন, “আমার ছেলেকে রাজশাহীতে নিয়ে খুন করা হয়েছে। এই সরকারের অনেক গুম-খুনের মতো আমার ছেলেকেও রাজশাহীতে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে।”
কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, “আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। আল্লাহ তুমি বিচার কর।”
পিলখানা হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক সাংসদ পিন্টুকে রোববার দুপুরে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং হাসপাতালের চিকিৎসক জানিয়েছেন, পিন্টুর ‘হার্ট অ্যাটাক’ হয়েছিল।
পিন্টুর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে তার স্ত্রী নাসিমা আখতার কল্পনা দুই দফা মূর্ছা যান বলে পরিবারের সদস্যরা জানান।
বিকালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমার স্বামী কিছুতেই মরতে পারে না। তাকে হত্যা করা হয়েছে। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।”
দুপুর মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর থেকেই হাজারীবাগের সাবেক সাংসদ পিন্টুর মনেশ্বর রোডের বাসায় জড়ো হন লালবাগ, হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীরচরের কয়েক শ’ বিএনপিকর্মী।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ বেশ কয়েকজন নেতা পিন্টুর বাসায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান।
বেলা ৩টার দিকে পিন্টুর ভাই নাসিম আহমেদ রিন্টু লাশ নেওয়ার জন্য রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা হন।
যাওয়ার আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী হাই কোর্ট বিশেষায়িত হাসপাতালে রেখে তার চিকিৎসা করাতে নির্দেশ দিয়েছিল। এরপরও আমার ভাইকে গত ২০ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে রাজশাহী নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকি’সার ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে আমরা জানতে পেরেছি।”
রিন্টু অভিযোগ করেন, অসুস্থ হওয়ার পরও পিন্টুকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা পাননি।
পিন্টুর মা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “আমরা ছেলেকে বিডিআর হত্যার ঘটনায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জড়িয়ে মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। এরপর তাকে কারাগারে নিয়ে এভাবে হত্যা করা হল।”
২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র এবং আসামিদের পালাতে সহযোগিতার অভিযোগে ২০১৩ সালে পিন্টুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত।
সম্প্রতি হয়ে যাওয়া সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণ থেকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন কারাবন্দি পিন্টু। কিন্তু যাচাই বাছাইয়ে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়।
পিন্টুর ছোট বোন ফেরদৌসী আহম্মেদ মিষ্টি বলেন, “ভাই অসুস্থ অবস্থাতেও লোক মারফত আমাদের খোঁজ-খবর নিয়েছে। তিনি অসুস্থ, তারপরও তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি।”
একই অভিযোগ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও রাজশাহীর সংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু।
তিনি জানান, শনিবার তিনি কারাগারে গিয়েছিলেন নাসির উদ্দিন পিন্টুর সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু তিনি অসুস্থ জানিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ দেখা করতে দেয়নি।
“হাসপাতালের চিকিৎসকরা আমাকে জানিয়েছেন, কারাগারে নাসির উদ্দিন পিন্টুকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও ওষুধ সরবরাহ করা হত না। এ কারণে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। কারা কর্তৃপক্ষের অবহেলার করণে তার মৃত্যু হয়েছে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান ডা. রইছ উদ্দিন বলেন, পিন্টু হৃদপিণ্ড, কিডনি, ডায়াবেটিস, রক্তচাপ এবং চোখ ও বুকের সমস্যায় ভুগছিলেন।
কারাগার থেকে শনিবার হাসপাতালের পরিচালকের কাছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। সে অনুযায়ী শনিবার বিকালে পিন্টুর চিকিৎসার জন্য কারাগারে যান ডা. রইছ।
কিন্তু সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খান ‘চা খাইয়ে’ তাকে জেল সুপারের অফিস থেকেই ‘বিদায় করে দেন’ বলে অভিযোগ করেন এই চিকিৎসক, যিনি বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের রাজশাহী শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, “রোগীর অবস্থা ভাল ছিল না বলেই পরের দিন এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।”
সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খান বলেন, “২৫ এপ্রিল পিন্টুর ফলোআপ চিকিৎসার ডেট ছিল। ওই দিন তাকে মেডিকেলে দেখিয়ে আনা হয়েছিল। আজ দুপুরে তিনি বুকের ব্যথার কথা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নেওয়া হয়।”
তবে শনিবার ডাক্তারকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি বলে যে অভিযোগ বিএনপি করেছে সে বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি।
নাসিম আহমেদ রিন্টু জানান, রাজশাহী থেকে মরদেহ ঢাকায় আনার পর আজিমপুরে তাদের বাবার কবরে পিন্টুকে দাফন করা হবে।