সময়ের আবেদন নাকচ করে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই দুর্নীতি মামলায় বাদীর সাক্ষ্য চালিয়ে যাওয়ায় বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপাসনের আইনজীবীরা।
Published : 15 Jan 2015, 10:30 AM
বৃহস্পতিবার জিয়া এতিমখানা ও জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় শুনানির ধার্য দিনে আদালতে না এসে খালেদা জিয়া আইনজীবীর মাধ্যমে সময়ের আবেদন করেন।
ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদার এদিন ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে খালেদাকে রেহাই দিলেও সাক্ষ্য পেছানোর আবেদন নাকচ করলে শুরু হয় হৈ চৈ।
পরে খালেদার আইনজীবীরা লিখিতভাবে বিচারকের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেন।
সোয়া পাঁচ কোটি টাকা দুর্নীতির এ দুই মামলায় অভিযোগ গঠনকারী বিচারক বাসুদেব রায়ের প্রতিও কয়েক দফা অনাস্থা জানিয়েছিলেন খালেদা।
তার নিয়োগ এবং অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার আবেদন সর্বোচ্চ আদালতে নাকচ হয়ে যায়।
নতুন বিচারক বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনের মতো এ মামলার বিচারে বসেন।
অনাস্থার আবেদনের পর তিনি খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের হাই কোর্ট থেকে আদেশ নিয়ে আসতে বলেন।
মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর রশিদের বাকি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৯ জানুয়ারি দিন রেখেছেন তিনি।
গুলশানের কার্যালয়ে ‘অবরুদ্ধ’ থাকায় খালেদা জিয়া আদালতে আসতে পারছেন না- এ কারণ দেখিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে খালেদাকে অব্যাহতির আবেদন করেন তার আইনজীবীরা।
ওই আবেদনে সায় দিলেও খালেদার সাক্ষ্য পেছানোর আবেদন না মঞ্জুর করে বিচারক মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর রশিদের জবানবন্দি শোনা শুরু করেন।
এ সময় আদালতে হৈ চৈ করেন খালেদার আইনজীবীরা। পরিস্থিতি শান্ত হলে আবার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বাদানুবাদের মধ্যে চলতে থাকে বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ। এক পর্যায়ে বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ফের হট্টগোল শুরু করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
পরে সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবি রেখে পরবর্তী দিন রাখেন বিচারক।
জিয়া অরফ্যানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় গত ৭ জানুয়ারি খালেদার অনুপস্থিতিতে বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ চালিয়ে যান এই আদালতের বিচারক।
তার চার দিন আগে গুলশানে নিজের কার্যালয়ে এসে পুলিশের ঘেরাও ও ব্যারিকেডে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন খালেদা।
গত ৫ জানুয়ারি থেকে লাগাতার অবরোধের মধ্যেই দুর্নীতি মামলার শুনানির নির্ধারিত দিন বৃহস্পতিবার হরতালের ডাক দেয় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল। রিয়াজ রহমানকে গুলি ও তার গাড়ি পোড়ানোর প্রতিবাদে এই কর্মসূচি দিয়েছে তারা।
হাজিরার দিন থাকলেও খালেদা জিয়া আদালতে যাচ্ছেন না বলে সকালে তার আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকন জানিয়েছিলেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশি ঘেরাও অবস্থায় গুলশানের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে ম্যাডামকে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদের চেয়ারে বসে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, উনি (ম্যাডাম) কেবল বাসায় যেতে পারবেন।
“তাহলে তিনি কীভাবে আদালতে আসবেন? তাকে তো স্বাভাবিক চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না, কার্যালয়ে বন্দি।”
গত ৩ জানুয়ারি রাত থেকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় ঘিরে রেখেছে পুলিশ।
৮৬ নম্বর সড়কে দুই পাশে জলকামান ও পুলিশের লরি দিয়ে রাস্তা আটকে রাখা হয়েছে। কার্যালয়ের ফটকের সামনে পুলিশের দুই স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনি রয়েছে।
গতবছর ১৯ মার্চ জিয়া এতিমখানা ও জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিচার শুরু করেন এ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়।
জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টের নামে অর্থ আত্মসাতের মামলায় খালেদার ছেলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও আসামি।
মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামালউদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ এবং জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান এই মামলার আসামি।
সালিমুল ও শরফুদ্দিন জামিনে রয়েছেন। কামাল সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এই মামলা করে দুদক।
দুদকের সহকারী পরিচালক হারুন এই মামলায় খালেদা, তারেকসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ৫ অগাস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
খালেদাসহ চারজনের বিরুদ্ধে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলারও বাদী হারুন-অর-রশিদ। এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
এদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু হতেই পলাতক। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে।