Published : 12 Dec 2014, 01:38 PM
চট্টগ্রামের রাজনীতিতে দেশের বড় দুই দলের এ দুই নেতা ‘মামা-ভাগিনা’ হিসেবে পরিচিত।
শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক পূর্বদেশের দ্বিতীয় বর্ষ পূর্তিতে শুভেচ্ছা জানাতে এলে মহিউদ্দিন ও নোমানের সামনেই এ মন্তব্য করেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ও রাউজান উপজেলার চেয়ারম্যান এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল। মহিউদ্দিন ও নোমানের বাড়িও একই এলাকায়।
নোমান নগরীর মোমিন সড়কে পূর্বদেশ কার্যালয়ে আসেন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। কিছুক্ষণ পর এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুলকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তিন দফা মেয়রের দায়িত্ব পালন করা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
বর্ষপূর্তির কেক কাটার সময় বাবুলের কানে কানে কিছু বলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। এরপরই মহিউদ্দিন ও নোমানের মাঝে দাঁড়ানো বাবুল তাদের দেখিয়ে বলেন, "দুজনই আমাদের রাউজানের লোক। আমরা চাই রাউজানের দুজনই মেয়র নির্বাচন করুক। মামা-ভাগিনার মেয়র নির্বাচন চাই আমরা।"
এ সময় মহিউদ্দিন চৌধুরীকে উচ্চস্বরে হাসতে দেখা যায়। আবদুল্লাহ আল নোমানও মুচকি হাসেন। তবে এ বিষয়ে দুজনের কেউই কোনো মন্তব্য করেননি। এর পরপরই অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে যান নোমান।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে বর্তমান মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনজুর আলমের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের জুলাইয়ে। আইন অনুযায়ী মেয়াদ শেষের দিন থেকে ১৮০ দিন আগের যে কোনো সময় নির্বাচন করতে হবে। আর এ কারণে এখন থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে জল্পনা কল্পনা শুরু হয়ে গেছে।
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন ও বর্তমান মেয়র মনজুর আলম ইতোমধ্যে নির্বাচনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। দলের সিদ্ধান্তের আগেই স্থানীয় পর্যায়ে প্রচারণা চালানোর অভিযোগে নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালামকে নোটিশও দিয়েছে নগর আওয়ামী লীগ।
মেয়র মনজুর আলমের দলীয় কর্মসূচিতে কম সক্রিয় থাকার বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম বিএনপিতে সমালোচনা আছে। অন্যদিকে আবদুল্লাহ আল নোমান বিগত বিএনপি সরকারে বন ও পরিবেশ এবং প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
পূর্বদেশের বর্ষপূতিতে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন মনজুর আলমও। তবে নোমানকে নির্বাচনে প্রার্থী দেখতে চেয়ে রাউজান উপজেলার চেয়ারম্যানের মন্তব্যের আগেই তিনি অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে যান।
মেয়র পদে নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন কিনা জানতে বিএনপি নেতা নোমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে তার ব্যক্তিগত সহকারী নূরুল আজিম হিরু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোথাও গিয়ে কেউ বলে দিলেই তো আর হলো না। মেয়র নির্বাচনে উনার (নোমান) কোনো আগ্রহ বা পরিকল্পনা নেই।
"উনি (নোমান) সামাজিক অনুষ্ঠানে গিয়েছেন। সেখানে এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল কেন এ ধরনের রাজনৈতিক মন্তব্য করেছেন সেটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন।"
মহিউদ্দিন চৌধুরী ২০১০ সালের করপোরশন নির্বাচনে নিজের রাজনৈতিক শিষ্য ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনজুর আলমের কাছে প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। এর আগে ১৯৯৪ সাল থেকে প্রায় ১৬ বছর টানা তিন বার তিনি চট্টগ্রামের মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নগরীর কোতোয়ালি আসনে 'মামা-ভাগিনা' হিসেবে পরিচিত নোমান ও মহিউদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিলেন নোমান। তবে মেয়র পদে নির্বাচনে তারা কখনো মুখোমুখি হননি।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নগরীর ডবলমুরিং (চট্টগ্রাম-৯) আসনে বিএনপির মনোনয়নে আবদুল্লাহ আল নোমান, আওয়ামী লীগ থেকে আফসারুল আমিন এবং সে সময়ে আওয়ামী রাজনীতিতে যুক্ত মনজুর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এ ত্রিমুখী লড়াইয়ে বিজয়ী হন আফসারুল আমিন।