সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের জন্য সংলাপের উদ্যোগ না নিলে শিগগিরই রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
Published : 13 Sep 2014, 04:04 PM
দেশে সংঘাত ও অস্থিরতা না চাইলেও দাবি আদায়ে আন্দোলন ছাড়া উপায় থাকবে না বলে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
শনিবার বিএনপি সমর্থিত প্রকৌশলীদের এক সমাবেশে খালেদা জিয়া বলেন, “আমরা দেশে অশান্তি, সংঘাত, অস্থিরতা ও রাজপথের উত্তাল আন্দোলনে সহসা যেতে চাই না। আমরা এখনো এবং আমি আজ আবারো সরকারকে আলোচনা ও সংলাপের পথে ফিরে আসার আহবান জানাচ্ছি। আলোচনার মাধ্যমে সকলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার উপযোগী একটি নির্দলীয় সরকার কাঠামোর ব্যাপারে সমঝোতায় আসার আহ্বান জানাচ্ছি।”
স্বল্প সময়ের মধ্যে সংলাপের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি নেত্রী বলেন, “জনগণ এমন একটি সংলাপের জন্য অনির্দিষ্টকাল বসে থাকবে, তা মনে করার কোনো কারণ নেই।
“সংলাপের উদ্যোগ না নিলে জনগণের দাবি আদায়ে চাপ প্রয়োগের জন্য দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে শিগগিরই আমাদের রাজপথে আন্দোলনে নামতে হবে।”
সরকারবিরোধী আন্দোলনে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এ্যাব) উদ্যোগে ‘উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্র’ শীর্ষক এই সভা হয়।
কর্মসূচি শুরুর আগে ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে প্রয়াত স্বামী বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, ছেলে তারেক রহমান ও নিজের আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, “বিএনপি একটি সহিষ্ণু গণতান্ত্রিক দল। আমরা সংগঠন গুছাচ্ছি। আমাদের সংগঠনগুলোকে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত ও বিন্যস্ত করছি। অন্যান্য সমাজ শক্তিগুলোকে সমন্বিত করছি। আমরা জনগণের কাছে যাচ্ছি। আমাদের বক্তব্য তুলে ধরছি, তাদের মতামত শুনছি।”
সরকারের সমালোচনা করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেন, “দুর্নীতি, লুণ্ঠন, অনিরাপত্তা, অস্থিতিশীলতা, সন্ত্রাস, আইনের শাসন ও ন্যায় বিচারের অনুপস্থিতিতে মানুষ আজ উৎকণ্ঠিত, অস্থির ও জর্জরিত। জনগণের ভোটাধিকার লুণ্ঠিত। জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকার বল প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসে আছে। ফলে দেশে গণতন্ত্র নেই।”
ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং দেশের সম্পদ বাইরে পাঁচারের অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, “দেশে এক অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। এটা চলতে পারে না। দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। সংবিধান, রাষ্ট্র, জাতীয় ইতিহাস, জনগণের জীবন-জীবিকা ও অধিকার আজ তছনছ করা হচ্ছে। এরকম অবস্থা বেশি দিন চলতে থাকলে শুধু বাংলাদেশ নয়, এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতাই হুমকির মুখে পড়বে।
“যেভাবে স্বেচ্ছাচারী শাসন চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যেভাবে গণতান্ত্রিক উদার রাজনৈতিক ধারাকে স্তব্ধ করে দিতে চাইছে, তাতে কেবল উগ্রবাদী ও চরমপন্থী শক্তির উত্থান ও বিস্তারের আশঙ্কাই বাড়তে পারে।এতে দেশের ভবিষ্যৎ আরো অন্ধকারে ছেয়ে যাবে।”
বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার উদ্যোগের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, “গণতন্ত্র হত্যা করে আওয়ামী লীগই দেশে একদলীয় স্বৈরশাসন কায়েম করে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের কাছে দিয়েছিল। সেই ক্ষমতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিচারপতিদের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম জুডিশিয়াল গঠনের মধ্য দিয়ে।
“আজ সেই ক্ষমতা আবার অনির্বাচিত সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হচ্ছে। এতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব হবে। ন্যায় বিচারের সুযোগ আরো সংকুচিত হয়ে পড়বে।”
জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
অতীতের ভুল-ত্রুটি শুধরে ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনার কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন বলে জানান খালেদা জিয়া।
“আমি অনেকবার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছি। এসব দায়িত্ব পালনে আমার অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ হয়েছে। অতীতের ভুলভ্রান্তি ও ক্রুটিগুলোও আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি। তার আলোকে দেশের বিরাজমান সমস্যা-সংকট নিরসন ও একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে আমরা হাতে নিয়েছি বিস্তৃত কর্মপরিকল্পনা। ওই পরিকল্পনার আওতায় বাংলাদেশের সব মেধা, যোগ্যতা, সামর্থ্য ও কর্মশক্তিকে আমরা এক মোহনায় মেলাবো,” বলেন তিনি।
সমাবেশ থেকে এ্যাবের সভাপতি আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবি জানানো হয়।
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রকৌশলী আ ন হ আখতার হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান, ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী, সদস্য সচিব অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া এ্যাবের মহাসচিব প্রকৌশলী হারুন উর রশীদ, প্রকৌশলী মহসিন আলী, সৈয়দ মুনসেফ আলী, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, খালিদ হাসান চৌধুরী, গোলাম মওলা, মহিউদ্দিন আহমেদ সেলিম, মনিরুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম খান, এ কে এম জহিরুল ইসলাম, ড. ইকবাল, হেলাল উদ্দিন তালুকদার, অধ্যাপক সাব্বির মোস্তফা খান, একরামুল হক বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান।
সমাবেশে প্রকৌশলীদের পাশাপাশি বিএনপির নেতাদের মধ্যে সেলিমা রহমান, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, অধ্যাপক আবদুল মান্নান, আবদুল হালিম, জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, নুর মোহাম্মদ খান, আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, নাজিম উদ্দিন আলম, শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, হাবিবুর রহমান হাবিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মূর্তজা, পিপলস লীগের চেয়ারম্যান গরীবে নেওয়াজ, ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের প্রধান সেলিম ভুঁইয়া, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মহসিন মিয়া এবং বিভিন্ন জেলা থেকে আসা প্রকৌশলীরা উপস্থিত ছিলেন।