ভাই নাসিম ওসমানের আসনে আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন ব্যবসায়ী নেতা এ কে এম সেলিম ওসমান।
Published : 26 Jun 2014, 08:47 PM
নারায়ণগঞ্জ উপনির্বাচনে ৪০% ভোটের আভাস
ফল যাই হোক মেনে নেব: সেলিম ওসমান
নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে ৮২,৮৫৬ ভোট পেয়েছেন তিনি।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য এস এম আকরাম আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ৬৬,১১৪ ভোট।
রাতে রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সরওয়ার মোর্শেদ ১৪০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণা করলে তাতে সেলিম ওসমানের বিজয় নিশ্চিত হয়।
এই আসনে একটি কেন্দ্রের ফল স্থগিত রয়েছে। ওই কেন্দ্রের মোট ভোট সংখ্যা ২ হাজার ২৬। সেলিম ওসমান ১৬ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকায় তা ফলাফলে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
শুক্রবার সকালে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে জানান মিহির সরওয়ার মোর্শেদ।
আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা আকরাম এই নির্বাচনে কেন্দ্র দখলের চেষ্টার অভিযোগ করলেও নির্বাচন কমিশন বলেছে, ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। সেলিম আগে বলেছিলেন, ফল যাই হোক তাই মেনে নেবেন তিনি।
সেলিম বিজয়ী হওয়ায় আগের মতোই এই বন্দর নগরীতে ওসমান পরিবারের দুজন এখন সংসদ সদস্য। সেলিমের ছোট ভাই শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য।
৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে শামীমের পাশাপাশি তাদের বড় ভাই নাসিম ওসমান লাঙল প্রতীকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ আসনটিতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
নাসিম ওসমানের মৃত্যুতে শূন্য এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়ে রাজনীতিতে পা রাখেন বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হয়েও এতদিন রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন তিনি।
সেলিমকে চ্যালেঞ্জ করে প্রার্থী হওয়া আকরাম এই আসনে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়কও ছিলেন তিনি।
তিন বছর আগে মেয়র নির্বাচনের সময় মতদ্বন্দ্ব থেকে আওয়ামী লীগ ছেড়ে দেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আকরাম। পরে মাহমুদুর রহমান মান্না নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্যে যুক্ত হন তিনি।
নারায়ণগঞ্জে ভোটের দিনও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে গিয়ে সিইসির সঙ্গে দেখা করে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়ে আসেন মান্না।
ভোট চলাকালে দুপুরেই আকরাম অভিযোগ তোলেন, বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দেয়া হচ্ছে।
রাতে শহরের থানা পুকুর এলাকার বাড়িতে আকরাম এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে অনিয়ম, কারচুপি ও জালভোট দেয়ার অভিযোগ এনে ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করেন।
“শহর ও বন্দর উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে দখল করে জাতীয় পাটির প্রার্থীর লোকজন ব্যালট পেপারে সিল মারে। অভিযোগ করা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।”
অন্যদিকে বিজয়ের প্রতিক্রিয়ায় সেলিম ওসমান শহরের চাষাঢ়ার বাড়িতে সাংবাদিকদের বলেন, “এই বিজয়টা প্রয়োজন ছিল নারায়ণগঞ্জের মানুষের জন্য। নারায়ণগঞ্জ নিয়ে যে অপপ্রচার ছিল, তা বন্ধ হবে-সেটা আমি চাই।
“ওসমান পরিবারকে নারায়ণগঞ্জবাসী ভালোবাসে। এই নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে তা প্রমাণিত হয়েছে। এতদিন যেসব প্রপাগান্ডা আমাদের বিরুদ্ধে চালানো হয়েছে, প্রমাণিত হয়েছে-এসব মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।” “
নিজের সমর্থকদের কোনো বিজয় মিছিল না করার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
সেলিম ওসমান বলেন, “ভোটারদের ইচ্ছা অনুযায়ী জয়-পরাজয় হয়েছে। আমি আমার প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী এস এম আকরামকে চাচা হিসেবে সম্বোধন করেছি, প্রতীক আনার সময় তার পা ছুঁয়ে সালাম করেছি।
“আমি তার সহযোগিতা চাই। আমি আরো সহযোগিতা চাই, সাবেক সাংসদ আবুল কালামের সহযোগিতার প্রয়োজন আছে। আমরা সবাই মিলে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন করব।”
আকরামের ফলাফল প্রত্যাখ্যানের বিষয়ে তিনি বলেন, “এটা রাগ, ক্ষোভ, দুঃখের প্রকাশ। এটা বেশিক্ষণ থাকবে না। তার জায়গায় আমি থাকলেও আমিও তাই করতাম।”
সাত খুনের দুই মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন নিয়ে অনেকের মধ্যে গোলযোগের আশঙ্কা থাকলেও বিচ্ছিন্ন অভিযোগড় ছাড়া বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এর মধ্যে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে হুমকি দেয়ার অভিযোগ করেছেন ভোটে দায়িত্বরত পুলিশের এক কর্মকর্তা। সিইসি কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ বলেছেন, তারা এই অভিযোগ তদন্ত করে দেখবেন।
বিএনপির বর্জন এবং আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী না থাকার মধ্যে এই উপনির্বাচনে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে ভোটার উপস্থিতি তেমন দেখা যায়নি।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ সাংবাদিকদের বলেন, “সকালের তুলনায় দুপুরের পর ভোটার উপস্থিতিও বেড়েছে। ভোট পড়ার হার বরাবরের মতোই হবে বলে মনে করছি।”
গাজীপুর উপনির্বাচনেও ৩৮-৪০ শতাংশ ভোট পড়েছিল বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা।
অনেক ভোটারকে যেমন কেন্দ্রে যেতে দেখা যায়নি; তেমনি যারা ভোটকেন্দ্রে গেছেন, তারা আবার ভোটার ক্রমিকের হয়রানির অভিযোগ করেছেন।
ষাটোর্ধ্ব মালতি ঘোষ বলেন, “অনেকবার ভোট দিয়েছি। এইবার হয়রানি করছে বেশি। আর ভোটই দেব না।”
নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনার পর ভোটারদের মধ্যে মানসিক ভীতিও থাকায় ভোট নিয়ে অনেকের তেমন আগ্রহ ছিল না বলে জানান কয়েকজন।