বাজেট অধিবেশনে উপস্থিত বিরোধী দলকে নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ‘তাচ্ছিল্যপূর্ণ’ কথায় বেদনাহত হয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।
Published : 07 Jun 2014, 05:07 PM
বিএনপিবিহীন দশম সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী মুহিত, যা নবম সংসদে ঘটেনি।
শুক্রবার অর্থমন্ত্রী বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এবার অবশ্য বিরোধী দল ছিল, তা যেমন ধরনের বিরোধী দলই হোক না কেন।”
সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসার পাশাপাশি আবার সরকারে অংশগ্রহণকারী জাতীয় পার্টির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নের প্রেক্ষাপটে এরশাদ আমলে দুই বার বাজেট প্রস্তাব্কারী মুহিতের এই বক্তব্য আসে।
শনিবার বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ বলেন, “মাননীয় অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে আমি মর্মাহত হয়েছি।
“এই প্রথম বাজেট অধিবেশনে বিরোধী দল উপস্থিত ছিল। তার উচিত ছিল, বিরোধী দলকে স্বাগত জানানো। তা না করে তিনি যে তাচ্ছিল্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন, আমি তার তীব্র নিন্দা জানাই।”
মুহিতের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া সাংবাদিকরা এরশাদের কাছে জানতে চাইলে পাশে বসা জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু বলে উঠেছিলেন, “এটা তার (অর্থমন্ত্রী)ব্যক্তিগত বক্তব্য...”
বাবলুর কথা শেষ না হতেই এরশাদ বলেন, “এটা তার ব্যক্তিগত বক্তব্য হবে কেন?”
এরপরই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান তার প্রতিক্রিয়া জানান।
বাজেট প্রস্তাবের সময় সংসদে উপস্থিত থাকলেও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাননি।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, “আমি তার পক্ষ থেকেই সংবাদ সম্মেলন করছি।”
২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটকে ‘স্বপ্নবিলাসী’ উল্লেখ করে এরশাদ বলেন, “অতীতের কোনো বাজেটই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেনি, এবারো করবে না। কারণ এই বাজেট স্বপ্নবিলাসী এবং এর ভিত নড়বড়ে।”
সুশাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে বিদেশি বিনিয়োগ শূন্যের কোঠায় নেমে আসার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগও ব্যাহত হবে বলে সরকারকে সতর্ক করেন তিনি।
বাজেটের ঘাটতি ৬৭ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা যোগান দিতে গিয়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে বলে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের শঙ্কা।
“বলা হয়েছে, বৈদেশিক সাহায্য হিসেবে আসবে ২৪ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। এ যাবৎকালের মধ্যে এক বছরে বৈদেশিক সাহায্য হিসেবে ২৪ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা কখনো পাওয়া যায়নি। বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থ না পেলে সরকারকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হবে।”
“সরকার ঋণ নিলে বেসরকারি উদ্যোক্তারা কম ঋণ পাবেন।অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ নিলে নতুন করে অর্থ ছাপতে হবে। এতে দেখা দেবে মূল্যস্ফীতি।”
অর্থমন্ত্রী ৭ দশমিক ৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন, তা-ও অর্জনযোগ্য নয় বলে মনে করেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান।
“আসলে এখানে তিনি জাতিকে একটি স্বপ্ন দেখিয়েছেন, যা সফল হওয়া সম্ভব নয়।”
সংবাদ সম্মেলনে এরশাদের সঙ্গে বাবলু ছাড়াও ছিলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এস এম ফয়সল চিশতি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, আব্দুস সবুর, সুনীল শুভ রায় প্রমুখ।