যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় উল্লেখ করে তাতে নাক না গলাতে পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
Published : 17 Dec 2013, 04:15 PM
‘ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের’ সমর্থক হিসেবে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডে উদ্বেগ প্রকাশ করে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে প্রস্তাব উত্থাপনের প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার এই আহ্বান জানান তিনি।
সোমবার পাকিস্তান পার্লামেন্টে পাস হওয়া প্রস্তাব নিয়ে মঙ্গলবার এক আলোচনা সভায় বক্তব্যে ইসলামাবাদের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ পাঠাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে পাস হওয়া প্রস্তাবের বিষয়ে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবে।
একাত্তরে হত্যা-ধর্ষণের দায়ে গত বৃহস্পতিবার কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী রাজপথে নেমে এর প্রতিবাদ জানায়।
এর ধারাবাহিকতায় মৃত্যুদণ্ডে উদ্বেগ জানিয়ে সোমবার পাকিস্তান পার্লামেন্টে প্রস্তাব তোলেন জামায়াতের জাতীয় পরিষদ সদস্য শের আকবর খান। উদ্বেগ ও কাদের মোল্লার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ওই প্রস্তাব পাসও হয়।
এরপর প্রতিক্রিয়ায় সচিবালয়ে অনির্ধারিত এক সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা ইনু বলেন, “কাদের মোল্লার পক্ষে কথা বলে পাকিস্তান প্রমাণ করল, তারা এখনো শোধরায়নি, একাত্তরের নীতি থেকে সরে আসেনি।
“তারা ভুল স্বীকার করেনি। আশা করি, তারা ভুল পথ থেকে সরে আসবে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর চেষ্টা করবে না।”
মৃত্যুদণ্ডে দুঃখ প্রকাশ করে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান বলেছেন, “বাংলাদেশ হওয়ার আগ পর্যন্ত এক ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের একজন অকুণ্ঠ সমর্থক ছিলেন কাদের মোল্লা। তার মৃত্যুতে প্রতিটি পাকিস্তানি শোকার্ত ও মর্মাহত।”
তবে জাসদ সভাপতি ইনু আশা প্রকাশ করেছেন, একাত্তরে গণহত্যার জন্য পাকিস্তান ক্ষমা চেয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সহায়তা করবে।
মঙ্গলবার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক আলোচনা সভায় সুরঞ্জিত জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে নিয়ে পাকিস্তান পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাসের নিন্দা জানান।
তিনি বলেন, “আমাদের অবশ্যই বলতে হবে, সার্বভৌম বাংলাদেশের শক্তিশালী স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা এ রায় দিয়েছে। এ ব্যাপারে অন্য কোনো দেশের পার্লামেন্টের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার নেই। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এর প্রতিবাদ করা উচিত।”
“সমস্ত বিশ্বে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জানিয়ে দেয়া উচিত, দীর্ঘ শুনানি শেষে, সব বিচারিক প্রক্রিয়া মেনে আপিল বিভাগের মাধ্যমে এই রায় কার্যকর হয়েছে। টোকিও ট্রায়াল এবং ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের কনভেনশন অনুযায়ী আইসিটি আইন করা হয়েছে।”
তথ্যমন্ত্রী বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
“তারা যে বিষয়ে কথা বলেছে, তা বাংলাদেশের সম্মানের সঙ্গে জড়িত, এটি দুর্ভাগ্যজনক ও কূটনৈতিক শিষ্টাচার পরিপন্থি।”
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে ইনু বলেন, “উচ্চ আদালতের বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সাজা কার্যকর করা হয়েছে। তড়িঘড়ি করে বিচার করা হয়নি। পাকিস্তানের কথা বিভ্রান্তিকর, তথ্যনির্ভর নয়।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সুরঞ্জিত বলেন, “পাকিস্তান যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায়কে জুডিশিয়াল কিলিং বলছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। তারা একবারও ৩০ লাখ মানুষ হত্যা এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির কথা বলেনি।”
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে পাকিস্তান সহায়তা করবে আশা প্রকাশ করে ইনু বলেন, দেশি-বিদেশি যতই ষড়যন্ত্র হোক না কেন, বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ চালিয়ে যাবে।
কাদের মোল্লার ফাঁসির পর দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবিরের নাশকতা এবং সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানান সুরঞ্জিত।
“যুদ্ধকালীন গণহত্যার দায়ে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে সাতক্ষীরার সংখ্যালঘুদের দোষ কী “
“এ বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে,” সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।