নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে সরকারের টানাপড়েনের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ‘অতি শিগগির’ দেয়া হবে।
Published : 24 Nov 2013, 07:08 PM
রোববার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকে বেরোবার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
‘সব ধরনের প্রস্তুতি’ থাকার পরও রোববার কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। সভা করে তফসিল চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে।
সিইসি বলেন, “এ বিষয়ে [তফসিল] বৈঠক হয়নি। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অতি শিগগির জানতে পারবেন।”
কবে নাগাদ কমিশন সভা হবে, তাও স্পষ্ট করেননি তিনি।
“[কমিশন সভা কবে] বলতে পারছি না। কালও [সোমবার] হতে পারে, পরশুও [মঙ্গলবার] হতে পারে।”
‘রাজনৈতিক সমঝোতার অপেক্ষায়’ তফসিল ঘোষণা বিলম্বের কারণ কি না- জানতে চাইলে সিইসি বলেন, “ভালো কথা বলেছেন আপনারা। সারাদেশ তাকিয়ে আছে। সবাই চায় সমঝোতা হোক। সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য দেশবাসীকে কী সাহায্য করা উচিত নয় কি?
“সত্যি সত্যি কি কোনো কথা হচ্ছে? আমাদের একটা কাটঅফ ডেট রয়েছে। সে ডেট-এর মধ্যে তফসিল করতে হবে।”
আচরণবিধি প্রকাশ
নির্বাচিত সরকারের অধীনে সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের সমান সুযোগ তৈরি করে আচরণবিধির সংশোধিত গেজেট প্রকাশ হয়েছে।
রাত ৮টায় ইসি সচিবালয়ে আচরণবিধির গেজেট পৌঁছেছে।
এতে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, প্রধান হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমমর্যাদার ব্যক্তি, সংসদ সদস্য ও সিটি করপোরেশনের মেয়রকে ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হলে তাদের আচরণবিধি মেনে প্রচারণায় অংশ নিতে হবে। সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের প্রকল্প অনুমোদন, ফলক উম্মোচন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব ব্যক্তিরা সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচনী কর্মসূচি বা কর্মকাণ্ডেও যোগ দিতে পারবেন না।
সংশোধিত আচরণবিধিতে ‘নির্বাচন-পূর্ব সময়’-এর সংজ্ঞায় তফসিল ঘোষণার পর থেকে ফলাফলের গেজেটে প্রকাশ পর্যন্ত সময়কে উল্লেখ করা হয়েছে।
নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করলে ৬ মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার জরিমানা এবং সর্বোচ্চ শাস্তি প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা বিদ্যমান আচরণবিধিতেই রয়েছে।
দিনভর ব্যস্ততা
সকাল থেকে সিইসি, চার নির্বাচন কমিশনার ও কমিশন সচিব নির্বাচন কমিশনে আসেন।
ইসি কর্মকর্তারাও ভোটের তফসিল ঘোষণার সব ধরনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করে রাখে। জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা উল্লেখ করে পরিপত্র-এর খসড়াও তৈরি রাখা হয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জাতির উদ্দেশে দেওা ভাষণ, তফসিলের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো পরিপত্রসহ যাবতীয় প্রজ্ঞাপনের ‘খসড়া’ প্রস্তুত করে রাখা হয়।
একজন নির্বাচন কমিশনার সংশোধিত আচরণবিধির গেজেট দ্রুত প্রকাশে আইন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ‘খুটিনাটি’ বিষয়ও ঠিক করে আসেন।
বিকালে সিইসির কক্ষে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে একে একে অন্য নির্বাচন কমিশনার অফিস ছাড়েন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ইসির সিঁড়ির কাছে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সিইসি।
তফসিলের বিষয়ে সিইসির ভাষণের খসড়াও প্রস্তুত রাখা হয়। ইসির অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে সিইসির ভাষণের কপি নিয়ে পর্যালোচনাও হয়। রোববার পর্যন্ত ইসির পছন্দের তারিখ ছিল ৫ জানুয়ারি।
ভাষণের খসড়ায় দশম সংসদ নির্বাচনের ভোটের তারিখ রাখা হয় ৫ জানুয়ারি। সেক্ষেত্রে মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় ৬ ডিসেম্বর, বাছাই ৮ ও ৯ ডিসেম্বর ও প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর উল্লেখ করা হয়।
সোমবারের মধ্যে তফসিল দেওয়া হবে বলে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ চাঁদপুরে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
কমিশন সভায় এ তারিখ ফের পর্যালোচনা হতে পারে বলে জানায় ইসি কর্মকর্তারা।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ভোটের শেষ সময়ের আর বাকি দুই মাস। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে বলেছেন, ৪০-৫০ দিন সময় রেখে ইসি তফসিল ঘোষণা করা হবে। এক্ষেত্রে ৫ থেকে ১৩ জানুয়ারির মধ্যে ভোটের তারিখ রাখতে হবে।
তফসিল দেয়ার সময় সব দলের অংশগ্রহনে প্রয়োজন হলে মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ দিতে পুনতফসিল করার সময়ও হাতে রাখে ইসি। এছাড়া ভোট শেষ হওয়ার পরে ফলের গেজেট প্রকাশ, শপথ ও কয়েকটি এলাকার পুনভোট [ভোটকেন্দ্র বন্ধ থাকলে] করার অতিরিক্ত সময়ও রাখতে হয়।
দশম সংসদের তফসিল ঘোষণার জন্যে ভোটের দিনের আগে ন্যূনতম ৩৮ দিনের প্রস্তাবনা তুলে ধরবে ইসি সচিবালয়। এক্ষেত্রে মনোনয়ন দাখিল ১০-১২ দিন, যাচাই-বাছাই দু’দিন করে ৪ দিন, প্রত্যারের সময় ৭ দিন ও প্রচারণার জন্যে ১৫ দিন সময় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
গত নয়টি সংসদ নির্বাচনে ভোটের জন্য সর্বোচ্চ ৭৮ দিন ও সর্বনিম্ন ৪২ দিন রেখে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে কখনো কখনো পুনঃতফসিলও করে। এক্ষেত্রে ৩৭দিন-৩৯ দিন পর্যন্ত সময় রাখা হয়।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার কর্মকর্তারা জানান, প্রথম সংসদ নির্বাচনে ৬০ দিন, দ্বিতীয় ৫৪ দিন, তৃতীয় ৪৭ দিন, ৪র্থ ৬৯ দিন পঞ্চম ৭৮ দিন, ষষ্ঠ ৪৭ দিন, সপ্তম ৪৭ দিন, অষ্টম ৪২ দিন এবং নবম সংসদ নির্বাচন ৪৭ দিন সময় নিয়ে তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
একমাত্র অষ্টম সংসদ নির্বাচনেই সবচেয়ে কম সময়ে ভোট হয়। সর্বশেস নব সংসদে সব দলের অংশগ্রহণে পুনঃতফসিল করতে হয়েছে।
আইজিপির চিঠি
বিকালে পুলিশ মহা পরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পৌঁছে ইসি সচিবের কাছে।
শান্তিপূর্ণভাবে ভোট অনুষ্ঠান ও মাঠ পরর্যায়ের নির্বাচন কার্যালয়ে নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে সব ধরনের সহায়তার কথা তুলে ধরেন তিনি।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক ম হামিদ রাত ৮টার দিকে কমিশন সচিব মোহাম্মদ সাদিকের সঙ্গে দেখা করেন।
নির্বাচনের তফসিল নিয়ে সিইসির জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণ প্রচারের সময় নির্ধারণে বিষয়ে তিনি এসেছেন কি না, তা জানাননি।
সর্বশেষে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণের মাধ্যমে নবম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিলেন।
প্রতিবারই জাতীয় নির্বাচনের তফসিল এভাবেই হয় বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা।