সময় নেই উল্লেখ করে রাজপথের আন্দোলনের জন্য ‘অতি দ্রুত’ প্রস্তুতি নিতে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
Published : 20 Feb 2022, 07:02 PM
রোববার বিকালে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “সময় খুব কম। আমাদেরকে অতি দ্রুত নিজেদেরকে সংগঠিত করতে হবে। এই ভয়াবহ সরকার যারা বেশিদিন ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। বাংলাদেশ একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
“আজকে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের স্মরণ করে, আমাদের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে স্মরণ করে আজকে আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অনুপ্রেরণায় আমরা সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ি। দেশনেত্রীকে মুক্ত করি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেশে নিয়ে আসি, দেশে সত্যিকার অর্থেই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করি।”
দেশের বর্তমান ‘সংকট’ উত্তরণে ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই’ বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, “এখন যে অবস্থা বা সংকট, এই অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হলে আমাদেরকে আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সমস্ত রাজনৈতিক দল ও মতকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যে গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এদেরকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবো।”
‘ওরা ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে ধূলিসাৎ করেছে’
ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনই ছিলো আমাদের জাতিসত্তা নির্মাণের প্রথম ভিত্তি। কিন্তু আজকে খুব দুর্ভাগ্যের কথা, সেই ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের যে চেতনা ছিলো, যে আশা-আকাঙ্খা ছিলো যে একটা স্বাধীন, সুস্থ, একটা গণতান্ত্রিক মুক্ত সমাজ নির্মাণ করা এবং তারই ধারাবাহিতায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা লড়াই করেছিলাম একটা স্বাধীন গণতান্ত্রিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ করবার জন্যে স্বপ্ন দেখেছিলাম। আজকে সেই আশা-আকাঙ্খা, সেই চেতনা আমাদের ধূলিসাৎ হয়ে গেলো।
“আমরা অত্যন্ত লজ্জার সঙ্গে ক্ষোভের সঙ্গে ধিক্কারের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, ১৯৭১ সালের আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে যে চেতনা ও আকাঙ্ক্ষা তাকে এই আওয়ামী লীগ নামের একটা দল, যে দলটি একেবারে সমস্ত মানুষের স্বপ্নগুলোকে ভেঙেচুরে শেষ করে দিয়েছে। আজকে ৭০ বছর পরেও সত্যিকার অর্থে আমরা একটি স্বাধীন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ আমরা নির্মাণ করতে পারি নাই।”
তিনি বলেন, “আজকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় যে যারা ভাষা আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছিলেন, তারা যা চেয়েছিলেন, আমরা কি বাংলা ভাষাকে সর্বস্তরে চালু করতে পেরেছি? পারিনি।
“উপরন্তু আমরা দেখছি, আামাদের শিক্ষাব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় ক্ষতির সম্মুখীন আমরা হচ্ছি যে, আমাদের বাংলা ভাষা আস্তে আস্তে সেখান থেকে চলে যাচ্ছে এবং আমাদের সন্তানেরা, আমাদের ছেলেরা তারা ভিন্ন পরিস্থিতি, ভিন্ন ভাষায় লেখাপড়া করছে এবং সবাই দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এই যে পরিস্থিতি এই পরিস্থিতির জন্য আমরা কখনোই আশা করিনি।”
‘দুর্নীতি দমন কমিশনও দুর্নীতিগ্রস্ত’
মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে দেখেছেন দুর্নীতিতে দেশ এখন ভরে গেছে। এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের যে কর্মকর্তা যিনি অনেকগুলো দুর্নীতি মামলার দেখেছেন, তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ দুর্নীতি দমন কমিশন আজকে পুরোপুরিভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফেলা হয়েছে।”
আইনমন্ত্রীর সঙ্গে এক উপদেষ্টার টেলিআলাপ ফাঁসের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “আমরা জানতে চাই- এই কথোপকথনের মধ্যে কী আছে? এই কথোপকথনের মধ্যে যে বিষয় সম্পর্কে বলা হয়েছে, সেই বিষয়ের তদন্ত চাই। এটি জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। নইলে জনগণের কাঠগড়ায় আপনাদের দাঁড়াতে হবে।”
রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে মহান ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভা হয়। ওমিক্রনের দাপট কমে আসায় এক মাস পর এই প্রথম বিএনপির কয়েক হাজার নেতা-কর্মী এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “ভাষা আন্দোলনের শিক্ষা হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করা, এই ভাষা দিবসে আমাদের শিক্ষা হচ্ছে আমাদের মাথা নত না করা, এই ভাষা আন্দোলনের শিক্ষা হচ্ছে যদি রুখে দাঁড়ানো যায় সাহসের সাথে, তাহলে সেই দাবিকে আদায় করার শিক্ষা।”
ভাষা আন্দোলন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে সবাইকে সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে এবং দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন বক্তব্য রাখেন।