মন্ত্রিত্বের পর দলীয় পদও খোয়ালেন মুরাদ

অডিও কেলেঙ্কারিতে প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো মুরাদ হাসানকে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকও জামালপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2021, 10:27 AM
Updated : 7 Dec 2021, 03:11 PM

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে এক ‘জরুরি’ সভায় এই সিদ্ধান্ত হয় বলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ জানান।

জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘দলীয় ভাবমূর্তি বিনষ্ট, অগঠনতান্ত্রিক ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে’ মুরাদ হাসানকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।     

জেলা আওয়ামী লীগের এ সিদ্ধান্ত মঙ্গলবারই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে পাঠানো হবে বলে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহামেদ চৌধুরী জানান।

জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদকের পদে হারালেও দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থাকবে মুরাদের। সে বিষয়ে কেবল কেন্দ্রীয় কমিটিই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।   

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হলে তখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাতনিকে নিয়ে ‘নারীবিদ্বেষী’ মন্তব্য করে সম্প্রতি বিএনপি নেতাদের সমালোচনায় পড়েন মুরাদ হাসান।

এরপর একটি টেলিফোন আলাপের অডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে একজন অভিনেত্রীর সঙ্গে অশালীন ভাষায় কথা বলতে এবং হুমকি দিতে শোনা যায় এক ব্যক্তিকে। বলা হচ্ছে, ওই ব্যক্তি মুরাদ হাসান।

এ নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যেই সোমবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, মুরাদকে পদত্যাগ করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর মঙ্গলবার দুপুরে ইমেইলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন মুরাদ হাসান। সেখানে তিনি লেখেন, প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে ‘ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছায়’ তিনি পদত্যাগ করতে চান।

জামালপুরের আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান তালুকদারের ছেলে মুরাদ ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকেটে জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী, মেস্টা ও তিতপল্যা) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ সালে তিনি দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য হন।

২০১৯ সালে শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মুরাদ। ওই বছর মে মাসে তাকে স্বাস্থ্য থেকে সরিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের খবরে তার নিজের নির্বাচনী এলাকা জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে আনন্দ মিছিল করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সেখানে তার কুশপুতুলও পোড়ানো হয়।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহামেদ চৌধুরী সে সমই জানান, মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় তাদের দলীয় কার্যালয়ে জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে মুরাদ হাসানের বিষয়ে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেবেন তারা।

মুরাদের প্রাথমিক সদস্যপদের বিষয়ে প্রশ্ন করলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হবে। দলের দায়িত্বশীল পদে থাকা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে, তিনি যত বড় নেতাই হোন না কেন, তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।”

দল থেকে বহিষ্কার হলে অনিশ্চয়তায় পড়বে মুরাদের সংসদ সদস্য পদ। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন স্পিকার।”