বিএনপির ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের’ আন্দোলনকে ‘গণঅভ্যুত্থানের’ রূপ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
Published : 02 Sep 2021, 06:53 PM
বৃহস্পতিবার দুপুরে দলের প্রতিষ্ঠবার্ষিকীর উন্মুক্ত আলোচনা সভায় তিনি নেতা-কর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়া আহ্বান জানিয়েছেন।
ফখরুল বলেন, “আজকে আমাদের দায়িত্ব বিএনপির নেতা হিসেবে, কর্মী হিসেবে দেশের সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সমস্ত গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে আজকে আমাদেরকে অবশ্যই এ যুদ্ধে জয়লাভ করতে হবে।
“বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে এবং এই দেশে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে (আসুন) আমরা দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলি, গণঅভ্যুত্থান গড়ে তুলি। যার মাধ্যমে পরাজিত হবে এই স্বৈরাচারী, একনায়ক কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগের সরকার এবং জনগণের বিজয় হবে।”
আওয়ামী লীগ নেতারা সারাক্ষণ বিএনপির বিরুদ্ধে ‘বিষোদ্গার করে’- এমন অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, “তারা (আওয়ামী লীগ) যদি নিজেদেরকে একবার জিজ্ঞাসা করার চেষ্টা করে যে, তাদের অবদান কী এদেশের জন্য?”
“আওয়ামী লীগের ইতিহাস এদেশের আত্মাকে বিক্রি করবার ইতিহাস, আওয়ামী লীগের ইতিহাস এদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করবার ইতিহাস।”
ক্ষমতাসীনরা এখন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ‘জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়’ বলেও মন্তব্য করেন দলটির মহাসচিব।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ‘মিথ্যা মামলায়’ সাজা দিয়ে সরকার আটক করে রেখেছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “সেই নেত্রী এদেশে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের পতাকা যেদিন হাতে তুলে নিয়েছিলেন জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পরে, সেদিনও অনেক মনে করেছিল যে, বিএনপি বোধ হয় শেষ, বিএনপি ধ্বংস, আর বিএনপি জেগে উঠবে না।
“কিন্তু বিএনপি ফিনিক্স পাখির মত জেগে উঠেছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। ৯ বছর তিনি পথে-প্রান্তরে চারণ কবির মতো গান গেয়ে গণতন্ত্রের গান গেয়েছেন দেশকে মুক্তি করেছেন এবং আজকেও এই গণতন্ত্রের জন্য তার সমস্ত সুখ-আয়েস ত্যাগ করে, আত্মীয়-স্বজন ত্যাগ করে তিনি গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠার জন্য কারা অন্তরীণ হয়ে আছেন।”
সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, মিথ্যাচার করে গোয়েবলসীয় কায়দায় সত্যকে মিথ্যা প্রমাণ করে কোনো লাভ হবে না। আর মানুষের অধিকার দাবিয়ে রেখেও কোনো লাভ হবে না।”
জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বিএনপি তার ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই উন্মুক্ত আলোচনা সভা হয়। মিলনায়তনের বাইরেও নেতা-কর্মীদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়। জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া আর তারেক রহমানের নামে স্লোগান দিচ্ছিলেন তারা।
অনুষ্ঠান উপলক্ষে জাতীয় ও দলীয় পতাকা, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতিকৃতি দিয়ে সাজানো হয় মিলনায়তন। কোরআন তেলোয়াত ও দোয়া অনুষ্ঠানের পর জাতীয় ও দলীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে এই আলোচনা সভা শুরু হয়।
সামরিক আইন প্রশাসক থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রক্ষমতায় আসা জেনারেল জিয়া ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর ছয়টি রাজনৈতিক দল ও মতের অনুসারীদের এক মঞ্চে এনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি গঠন করেন।
১৯৮১ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়া নিহত হওয়ার কিছুদিন পর বিএনপির হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। এখন পর্যন্ত তিনিই বিএনপির নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তবে তিনি দুর্নীতির দায়ে কারাগারে যাওয়ার পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়েছেন ছেলে তারেক রহমান।
আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘“৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের লক্ষ্য একটি- এই স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ভবিষ্যতে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে এসে রাজনীতি করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দেওয়া।
“সেজন্য আমাদের স্লোগান হোক, অঙ্গীকার হোক, শপথ হোক- স্বৈরাচার হটাও, দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও।”
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “‘ওরা নিজেদের সকল ব্যর্থতাকে চাপা দেওয়ার জন্য অত্যন্ত হৃদয় স্পর্শ করা একটা ইস্যুকে সামনে এনে আমাদেরকে ব্যর্থ রাখতে চায়। হ্যাঁ এটার আমরা জবাব দেব। প্রকৃষ্ট জবাব হল এই সরকারের পতন ঘটিয়ে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান। ”
জিয়ার কবর নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ কয়েকজন মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর শাহজাহান ওমর বীর উত্তম বলেন, “কয়েকজন মন্ত্রী ইদানিং বলা শুরু করেছে জিয়াউর রহমান সাহেব যে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তার প্রমাণ দিতে হবে। আরে ব্লাডি ফুল তুমি কে? তুমি কি মুক্তিযোদ্ধা?”
চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের লাশ নেই- প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, “ লেফটেন্যান্ট কর্নেল জয়নুল আবেদীনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধায়নে জিয়াউর রহমানের লাশ কবরে (চন্দ্রিমা উদ্যান) নামানো হয়েছে। জয়নুল নিজেও কবরে নেমেছিলেন। অথচ তারা বলে যে, কবরে লাশ নেই!”
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে এবং বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদউদ্দিন চৌধুরী ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীমের সঞ্চালনায় এ আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান ও আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, যুব দলের সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, ছাত্র দলের ফজলুর রহমান খোকন বক্তব্য দেন।
বিএনপির শওকত মাহমুদ, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শিরিন সুলতানা, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আবদুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, আকরামুল হাসান, নিপুণ রায় চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত মেজর আক্তারুজ্জামান, অঙ্গসংগঠনের আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, হেলেন জেরিন খান, শাহ নেসারুল হক, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, এসএস জাহাঙ্গীর, ইকবাল হোসেন শ্যামলসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।