সংসদে সরকারের সমালোচনায় সবাই, জবাব প্রধানমন্ত্রীর

বিএনপি করত বরাবরই, তার সঙ্গে যোগ হয়েছিল জাতীয় পার্টি, বাজেট অধিবেশনে এসে শরিক দলগুলোর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতারাও সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2021, 03:37 PM
Updated : 29 June 2021, 03:37 PM

বাজেট অধিবেশনের শুরু থেকে ধারাবাহিক সমালোচনার পর মঙ্গলবার আলোচনার সমাপনী দিনে দাঁড়িয়ে তার জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা।

সমালোচনাকারী নেতাদের ‘উপলব্ধির’ ঘাটতি রয়েছে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

গত ৩ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল ২০২১-২২ অর্থ বছরের জন্য ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন।

মহামারীকালে পরে দুই দিন আলোচনা করে চলতি ২০২০-২১ অর্থ বছরের সম্পূরক বাজেট পাস হয়। সপ্তাহখানেক বিরতি দিয়ে টানা চার দিন ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনা চলে। এরপর আরও ১০ দিন বিরতি দিয়ে দুই দিন বাজেটের ওপর আলোচনা হয়।

সব মিলিয়ে শতাধিক সংসদ সদস্য এবার বাজেটের উপর আলোচনা করেন। সম্পূরক বাজেটসহ বাজেটের উপর ছয় দিনে ১৫ ঘণ্টার মতো আলোচনা হয়।

এর আগে গত বছর বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত বাজেট অধিবেশন হয়েছিল। নয় দিনের ওই বাজেট অধিবেশনে ১৮ জন সংসদ সদস্য ৫ ঘণ্টা ১৮ মিনিট আলোচনা করেছিলেন।

বিএনপির সংসদ সদস্যরা দুর্নীতি নিয়ে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন সংসদে। তাদের পাশাপাশি প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরাও একই ‍সুর তোলেন।

এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইন্যু সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেন।

আওয়ামী লীগ সদস্যদের মধ্যে সাবেক ডেপুটি স্পিকার আলী আশরাফই সরকারের সমালোচনার সূত্রপাত ঘটান।

গত ৬ জুন সংসদে সম্পূরক বাজেটের উপর আলোচনাকালে তিনি অর্থ পাচারের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “বাজেট তো দিচ্ছি। বাস্তবায়নের জন্য সদিচ্ছা থাকতে হবে। দুর্নীতি ও অর্থ পাচার… কিছু কিছু লোক… মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বে মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। সেই দেশে আজকে ঘৃণা, লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়। এত বড় বড় কিছু চোর, যাদের নাম ওঠে।”

১৭ জুন পটুয়াখালী-৩ আসনে আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা গলায় ‘আর কোনো দাবি নাই, ত্রাণ চাই না- বাঁধ চাই’ লেখা প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে বক্তব্য দিয়ে আলোচনার জন্ম দেন।

শাহজাদা বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পর তিনি ত্রাণ নিয়ে নিজ নির্বাচনী এলাকায় গিয়েছিলেন। সেখানে জনগণের রোষানলে পড়তে হয়েছে। উপকূলের অনেক সংসদকেই এই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।

সোমবার সরকারের ‘আমলানির্ভরতার’ সমালোচনায় সরব হন প্রবীণ নেতা, সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

তিনি বলেন, “সব সংসদ সদস্য করোনার সময় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমি আমার নিজের এলাকায় ৪০ হাজার মানুষকে রিলিফ দিয়েছি। এখন আমাদের জেলায় জেলায় দেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা।

“মানুষ মনে করে আমরা যা দিই, এটা প্রশাসনিক কর্মকর্তারাই দেন। অথচ প্রশাসনিক যারা কর্মকর্তা, তারা কিন্তু যানইনি। যাকে দেওয়া হয়েছে, তিনি এখন পর্যন্ত যাননি। এটা কিন্তু ঠিক নয়। একটা রাজনৈতিক সরকার এবং রাজনীতিবিদদের যে কর্তৃত্ব কাজ, সেটা কিন্তু ম্লান হয়ে যায়।”

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের (রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম) কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তোফায়েল বলেন, “নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জন্য নির্ধারিত স্থান যেখানে আছে, সেখানে থাকা উচিৎ।”

তারপর জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদও এই প্রসঙ্গ তুলে উষ্মা প্রকাশ করেন। আরও কয়েকজন সংসদ সদস্য বলেন, রাজনীতিবিদদের গুরুত্বহীন করা হচ্ছে।

মহামারীকালে জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসেন সংসদ সদস্যরা। ছবি: পিএমও

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে এসব সমালোচনার জবাবে শেখ হাসিনা মঙ্গলবার বলেন, “বাজেট নিয়ে বিরোধী দলীয় সদস্যরা, আমাদের এমপিরা এবং বাইরেও অনেকে আলোচনা-সমালোচনা করেছেন।

“কিন্তু তারা পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পেরেছেন কি না, তাদের বক্তব্য ‍শুনলে আমি সন্দিহান হয়ে পড়ি। বোধ হয় উপলব্ধিটা তাদের নেই। তবে তারা বিষয়টি বুঝবেন, এটা আমরা প্রত্যাশা করি।”

মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামালের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বাজেট আলোচনা শেষ হয়। এরপর পাস হয় অর্থ বিল।

বুধবার পাস হচ্ছে ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেট। সংসদে ৫৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে ডজনখানেক সংসদ সদস্যের ছাঁটাই প্রস্তাব নিষ্পত্তির পর নির্দিষ্টকরণ বিল-২০২১ পাস হবে। এর মাধ্যমে শেষ হবে নতুন অর্থ বছরের বাজেট পাস কার্যক্রম।

বাজেট পাসের পর রাষ্ট্রপতির তাতে সম্মতি দিলে ১ জুলাই নতুন অর্থ বছর থেকে তা বাস্তবায়ন ‍শুরু হবে।