সংসদে বিরোধীদের তোপের মুখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী

মহামারীর এই সময়ে স্বাস্থ্যখাতে ‘অব্যবস্থাপনার’ অভিযোগে সংসদে বিরোধীদের তোপের ‍মুখে পড়লেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক দাবি করেছেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ ‘খুবই সফলতা’ দেখিয়েছে।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2021, 12:20 PM
Updated : 7 June 2021, 12:23 PM

জাতীয় সংসদে সম্পূরক বাজেট পাসের প্রক্রিয়ায় আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা সোমবার মন্ত্রীর সমালোচনা করেন।

এসময় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের মঞ্জুরি দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধী সংসদ সদস্যরা বিভিন্ন ছাঁটাই প্রস্তাব করেন। এক পর্যায়ে তারা করোনাভাইরাসের টিকা, ‘দুর্নীতি ও অনিয়মের’ প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।

স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, “কেনাকাটায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দুর্নীতির ডিপো। কিভাবে এই মন্ত্রণালয়ের সংস্কার করবেন, তা স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সুস্পষ্টভাবে জানাতে হবে।

“স্বাস্থ্য খাত নিয়ে কথা বলতে বলতে বেহাল হয়ে গেছি। স্বাস্থ্য বিভাগকে সংস্কারের আওতায় আনতে হবে। বেহাল দশা থেকে রক্ষা করতে কমিটি গঠন করতে হবে।”

করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে ভারত কেন ‘চুক্তির বরখেলাপ করল’ এই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “কবে করোনার টিকা কার্যক্রম শুরু হবে সেটা স্পষ্টভাবে জানাতে হবে। প্রয়োজনে টিকা আনা উন্মুক্ত করে দিতে হবে”

বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, “জিডিপির অন্তত পাঁচ শতাংশ এই খাতে বরাদ্দ দেওয়া উচিত ছিল। দক্ষিণ এশিয়ায় সব দেশে বরাদ্দ বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি।

“করোনাকালে ভারত স্বাস্থ্যখাতে আগের বছরের তুলনায় ১৩৭ শতাংশ বেশি বরাদ্দ দিয়েছে। বাংলাদেশে বেড়েছে মাত্র ১২ শতাংশ। করোনাকালেও বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি। যেটুকু বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তাও ব্যবহার হয়নি।”

১০ মাসে স্বাস্থ্যখাতে বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা- এডিপির মাত্র ২৫ শতাংশ ব্যয় হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “এখন আবার নতুন বরাদ্দ চাইছে। কেন ৭৫ শতাংশ অব্যবহৃত রয়ে গেছে তার জবাব স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে দিতে হবে।”

রুমিন বলেন, “প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার জেলায় জেলায় আইসিইউ স্থাপন করতে বলেছেন। কিন্তু দেড় বছরে মাত্র ৫টি জেলায় নতুন আইসিইউ স্থাপন করা হয়েছে।”

সচিবালয়ে প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তার সমালোচনা করে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত আসনের রওশন আরা মান্নান প্রশ্ন তোলেন “আইন কেন নিজের হাতে তুলে নেওয়া হল? নিজেরা কেন অত্যাচার করল?”

সরকারি নথি ‘চুরির চেষ্টার’ অভিযোগে গত ১৭ মে সোমবার স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের এক কর্মকর্তার কক্ষে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়।

পরে রাতে তাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয় এবং অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও দণ্ডিবিধির কয়েকটি ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

বিএনপির সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন বলেন, “সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের গলা চিপে ধরে হেনস্তা করেছেন, এটা হতে পারে না।”

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, “অসুস্থ মানুষ, তাও মহিলা, তাকে এভাবে হেনস্তা করা যায়? এটা নিয়ে জাতিসংঘ, সারা পৃথিবী কথা বললো। আমাদের মুখটা কোথায় গেল?”

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, “আপনি একজন সজ্জন ব্যক্তি। আপনার বাবা আমার সাথে মন্ত্রী ছিলেন। আপনাকে আমি চিনি। অত্যন্ত ধনাঢ্য পরিবারের ছেলে আপনি। কিন্তু আপনারতো কর্তৃত্ব নেই, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যা হচ্ছে!’

“হাসপাতালে অক্সিজেন নেই। এখন দরকার অক্সিজেন। সেটা না এনে আনা হচ্ছে এমআরআই, সিটিস্ক্যান মেশিন। পাঠানো হচ্ছে  উপজেলায়। তারা সব সাজিয়ে রেখে দিয়েছে। চালাতে পারে না।”

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর জবাব

তবে সংসদ সদস্যদের সমালোচনার মুখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক কার্যত চুপই ছিলেন। তিনি এসময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ফাইল ছবি

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, “ওষুধের কোনো ঘাটতি হয়নি। অক্সিজেনের অভাব কখনোই হয়নি। আমেরিকায় যে চিকিৎসা এখানেও একই চিকিৎসা হয়েছে।

টিকাদান কার্যক্রম চলমান আছে এবং আরও টিকা কিনতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এসব কারণে মৃত্যুর হার দেড় শতাংশ। পৃথিবীতে এই হার আড়াই শতাংশ।”

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া টিকা সরবরাহ করতে পারছে না। চীন, রাশিয়া, আমেরিকা থেকে ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে চুক্তিও হয়েছে।

মহামারীতে সরকারির হাসপাতালে প্রতিটি ব্যক্তির জন্য সাধারণ শয্যায় চিকিৎসা নিতে ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। যারা আইসিইউতে ছিল তাদের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে সরকারের পক্ষ থেকে খরচ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ ‘খুবই সফলতা দেখিয়েছে’ দাবি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন “এ কারণে জীবনযাত্রা প্রায় স্বাভাবিক আছে।”