বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার পথে ধনী-সামরিক-বেসামরিক আমলাদের ‘অশুভ চক্র’ বাধা বলে মন্তব্য করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
Published : 14 Jun 2021, 05:43 PM
সোমবার সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বাধা অতি ধনী ক্ষুদ্র গোষ্ঠী, সামরিক-বেসামরিক আমলা গোষ্ঠীর নেক্সাস বা অশুভ চক্র।
“কোভিড-১৯ এর অভিজ্ঞতা বিশ্বে নতুন। কিন্তু এতে বিমূঢ় না হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জীবন ও জীবিকা রক্ষায় প্রথমেই যে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তা বিশ্বে প্রশংসা কুড়িয়েছে। কিন্তু দেশে অতি ধনী সামরিক-বেসামরিক আমলাগোষ্ঠী ও দুর্নীতিবাজদের পাকচক্রে প্রধানমন্ত্রী সেই প্রয়াস অনেকখানিই নিষ্ফল হয়েছে।”
স্বাস্থ্যখাতের অনিয়ম প্রসঙ্গে মেনন বলেন, “…সরকারি ক্রয়নীতির ব্যত্যয় ঘটিয়ে সরকারি টাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে টিকা সরবরাহের পরিণতি আমরা এখন হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছি। ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার আগেই মার্চ মাসে ৫০ লাখ ডেজের জায়গায় ২০ লাখ ডোজ এসেছিল। একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক স্বার্থে একক উৎসের উপর নির্ভরতা, ওই স্বার্থবুদ্ধিতা থেকে চীন ও রাশিয়ার টিকা, এমনকি দেশের বায়োটেকের টিকা ট্রায়াল করতে দেওয়া হয় নাই। ফলে এখন সমস্ত টিকা কার্যক্রম থমকে দাড়িয়েছে।”
প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করে মেনন বলেন, “অর্থমন্ত্রী জীবন-জীবিকার প্রধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর কথা বলেছেন। জীবনের দুরাবস্থার কথা আগেই বলেছি, এখন জীবিকার প্রশ্নেও একই কথা। করোনাকালে আড়াই কোটি মানুষ যারা দরিদ্র হয়ে গেলেন বাজেট তাদের জন্য কিছু করল না।
“এদের মধ্যে গরীব মানুষ, যেমন আছে, তেমনি আছে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তরা। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, তার বাজেট ব্যবসা বান্ধব। প্রকৃতপক্ষে এটা ব্যবসায়ী বান্ধব। তাও ক্ষুদ্র বা মধ্য উদ্যোক্তা নয়, বড়দের জন্যই সব ব্যবস্থা। করোনার প্রথম পর্বে প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্রস্তাবে ৩৫% অর্থ বিতরণ হয়নি। যে গরীব মানুষের জন্য দুই দফায় ২৫০০ টাকা করে দেয়া হয়েছে তার এক তৃতীয়াংশ অব্যয়িত, তারা পায়নি।”
মুক্তিযোদ্ধারদের গার্ড অব অনারে নারী কর্মকর্তা বাদ দেওয়ার বিষয়ে সংসদীয় কমিটির সুপারিশের সমালোচনা করে মেনন বলেন, “একটি বিষয় সকালে পত্রিকার সকালে পত্রিকায় পড়ে আমি স্তম্ভিত হয়েছি। মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সংসদীয় কমিটি মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনার দেওয়ায় নারী কর্মকর্তাদের না রাখতে বলেছেন। এটা নাকি ধর্মবিরোধী কাজ। জানাজায় মাহিলারা অংশগ্রহণ করতে পারে না বলে ফতোয়াও দিয়েছে। প্রথমত: গার্ড অব অনার, আর জানাজা এক নয়। একটি ধর্মীয় বিধি, আরেকটি সরকারী রীতি। এ ধরনের সুপারিশ কেবল দুঃখজনকই নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী।”
আওয়ামী লীগের ফারুক খান আলোচনা অংশ নিয়ে বলেন, “মূল চ্যালেঞ্জ রাজস্ব সংগ্রহ। কোভিডের কারণে লকডাউন ব্যবাসায় স্থবিরতা, চাকরিতে ছাঁটাই ইত্যাদি কারণে এটা চ্যালেঞ্জ। সকল বাজেট বাস্তবায়নই চ্যালেঞ্জিং। চলমান প্রকল্পগুলো বিভিন্ন কারণে সঠিক সময়ে হচ্ছে না। প্রকল্প পরিচালকেদর জবাবদিহিতার আওতায় আনা গেলে এটি সম্ভব।”
জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, “বৃহৎ বাজেট, বৃহৎ ঘাটতি। এটি টপ ডাউন বাজেট। আমলাতান্ত্রিক বাজেট। এই বাজেট তৈরির ক্ষেত্রে ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের সক্রিয় ভূমিকা নেই।”
জাসদের সংসদ সদস্য সদস্য শিরিন আকতার বলেন, “সমাজে ধন বৈষম্য বাড়ছে। ধনী আরও ধনী হচ্ছে।”
তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর করারোপ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং কৃষকদের নগদ সহায়তার পাশাপাশি কৃষিপণ্যমূল্য কমিশন গঠন করে কৃষকদের পাশে থাকার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
আলোচনায় আরও অংশ নেন আওয়ামী লীগের শাজাহান খান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ওয়াশিকা আয়শা খান, নারায়ন চন্দ্র চন্দ, তাহমিনা বেগম।