২৭ ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানীর তিনটি বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে ‘রহস্যজনক’ মনে করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
Published : 26 Nov 2020, 04:40 PM
সোমবার মধ্যরাতে মহাখালীর সাততলার বটতলা মসজিদ রোডের বস্তিতে আগুন লেগে পুড়ে যায় আড়াই শতাধিক ঘর। তাতে সর্বস্ব হারান ঘরগুলোর বাসিন্দা নিম্ন আয়ের মানুষ।পরদিন মঙ্গলবার বিকালে মোহাম্মদপুরের জহুরী মহল্লায় বিজলী বস্তিতে আগুন লেগে শতাধিক ঘর পুড়ে যায়। এর কয়েক ঘণ্টার মাথায় মঙ্গলবার রাত ২টার পর কালশী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বাউনিয়া বাঁধ বি ব্লকের বস্তিতে আগুনে অন্তত ৪৩টি বস্তি ঘর এবং ১২টি দোকান পুড়ে যায়।
এসব অগ্নিকাণ্ডের পেছনে দখল-পাল্টা দখলের দ্বন্দ্ব থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন মির্জা ফখরুল।
বৃহস্পতিবার বিকালে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এই রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে রাজধানীর উক্ত তিনটি বস্তির অসংখ্য নিম্ন আয়ের মানুষ ঘরবাড়ি, সম্পদ, অর্থ, পরিধেয় বস্ত্র এমনকি রান্না করার সম্বলটুকু হারিয়ে দিশেহারা।
“আমি নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে বস্তিতে অগ্নিকাণ্ড এবং দখল-পাল্টা দখল, দখলের সাথে জড়িত চিহ্নিত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “বস্তির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের মদদপুষ্টরা ষড়যন্ত্র করে এসব আগুন লাগিয়েছে বলে ভুক্তভোগী বস্তিবাসীদের ধারণা। আগুন লাগিয়ে দখল-পাল্টা দখল, অসৎ প্রক্রিয়ায় কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া, অবাধে মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির দৌরাত্ম্য নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে তারা বেপরোয়া।”
তিনটি অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের স্থায়ী পুনর্বাসন, পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ ও আর্থিক সহযোগিতার দাবি জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, “গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়ে্ছে, বিগত তিন বছরে ঢাকায় বিভিন্ন বস্তিতে ৯৫৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই পর্যন্ত একটিরও অভিযোগপত্র দিতে পারেনি। মূলত ক্ষমতাসীন দলের মদদপুষ্ট ভূমিদস্যু মহলের যোগসাজশ ও অবৈধ প্রভাব এর মূল কারণ। রাজধানীর বস্তিসমূহে বিভিন্ন সময় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়ে একদিকে ভূমিদস্যুরা প্রচুর অর্থ-বিত্তের মালিক বনে যাচ্ছে।
“অন্যদিকে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া অসহায় মানুষ অগ্নিকাণ্ডের কারণে এক বস্তি থেকে অন্য বস্তিতে ছুটে বেড়াচ্ছে একটা মাথা গোজার ঠাঁইয়ের জন্য। এতদসত্ত্বেও সরকার, প্রশাসন কিংবা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এই বিষয়গুলো ন্যূনতম ভ্রুক্ষেপ না করে নির্বিকার থাকছে।”
সরকারের এই আচরণকে ‘চরম মানবতাবিরোধী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, “জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার কিংবা সিটি করপোরেশন না থাকার চরম বিপদের মুখোমুখি হয়েও ভুক্তভোগী মানুষরা সাহায্য সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অগ্নিকাণ্ডে যারা সম্বলহীন- এরা এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ত্রাণ সামগ্রী পায়নি বলে জানা গেছে। এহেন পরিস্থিতিতে তারা শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে অত্যন্ত মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
“সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা উন্নয়নের জোয়ারের কথা বলতে বলতে হয়রান হয়ে যাচ্ছেন। অথচ দেশে প্রকৃত অর্থে কিসের উন্নয়ন হচ্ছে তা এসব বস্তি ও বস্তিবাসীর দিকে তাকালেই সেই চিত্র ফুটে ওঠে।”