বঙ্গবন্ধুর হত্যার নেপথ্যে কী তা খুঁজতে কমিশন হলো না কেন: ফিরোজ

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার নেপথ্যে কী ছিল তা খুঁজতে এখনো কমিশন গঠন করা কেন হয়নি তা সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2020, 06:21 PM
Updated : 15 Nov 2020, 06:21 PM

রোববার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে আনা সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতাকে শ্রদ্ধা জানাতে ১৪৭ বিধিতে সাধারণ প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

ফিরোজ রশীদ বলেন বলেন, “আজ পর্যন্ত আপনারা (আওয়ামী লীগ) একটি কমিশন গঠন করতে করলেন না। যারা আত্মস্বীকৃত খুনি তাদের বিচার করতে পারছি। কিন্তু এর পেছনে কী ছিল?”

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পেছনের কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচনে একটি জাতীয় কমিশন গঠন করা হবে বলে গত ১ সেপ্টেম্বর জানিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। কিন্তু তার কোনো অগ্রগতি এখনও প্রকাশ পায়নি।

হত্যাকাণ্ডের সাড়ে চার ঘণ্টা আগে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতের কথা তুলে ধরে ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা বলেন, “মনি ভাইয়ের (শেখ ফজলুল হক মনি) মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সেদিন আমাদের ডেকে পাঠিয়েছিলেন।

“রাত সাড়ে ১১টায় আমাদের ডাকলেন। চারদিকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমাদের একটি কথা মাত্র বলেছিলেন, ‘তোমাদের সতর্ক থাকতে হবে। তোমাদের যুবলীগের একটি ছেলেও যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আমি এক্সপেল করে দেব।’”

এরপর শেখ মনির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর একান্ত আলাপচারিতার কথা তুলে ধরে ফিরোজ রশীদ বলেন, “আমরা নীচে দাঁড়িয়ে থাকলাম। মনি ভাই নিচে নেমে একটি সিগারেট ধরিয়ে চলে গেলেন। একটা কথাও বললেন না, মুখটা মলিন ছিল।

“কী ষড়যন্ত্র ছিল, যেটা বঙ্গবন্ধু মনি ভাইকে বললেন? আর পরদিন… আমরা জানতে পারতাম যদি বেঁচে থাকতেন বঙ্গবন্ধু।”

২৫ মার্চে আরেকবার বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “ওই সময় আমরা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছি; ক্যাম্পে আছি, থমথমে পরিবেশ। আমরা বঙ্গবন্ধুর বাসায় গেলাম। তিনি নিচে নেমে আসলেন; বললেন, ‘তোমরা যাও। তোমাদের সমস্ত ব্যবস্থা আমি করেছি, যুদ্ধের প্রস্তুতি নাও। ভয়ংকর যুদ্ধ হবে।’

“বঙ্গবন্ধু তো প্রথম রাতেই যুদ্ধের ঘোষণা করে দিয়েছেন। মানুষ ঘোষণার কথা বলে একটি অস্বস্তি সৃষ্টি করতে চায়।”

বিরোধী দলের এই সাংসদ ক্ষমতাসীন দলের কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “আজকে এত সমর্থন আওয়ামী লীগের! সবখানে আওয়ামী লীগ। কোথায় কাকে রাখতেছেন? তাদের হিসাব করছেন? এই ছেলেটি কখনো ছাত্রলীগ করেছে, একদিন জয়বাংলার স্লোগান দিয়েছে? তার বাবা-দাদা আওয়ামী লীগ করছেন? আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান? তদবিরে যাকে-তাকে কী পয়েন্টে বসিয়ে দিচ্ছেন।”

পরে জাতীয় সংসদে আনা প্রস্তাবের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বিরোধী দলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেন, “শেখ মুজিব ও স্বাধীন বাংলাদেশ অবিচ্ছেদ্য। এটা হঠাৎ করে হয়নি। এর সঙ্গে অনেক ত্যাগ, তিতীক্ষা, শ্রম জড়িত। তিনি জীবনের এক চতুর্থাংশ সময় জেল খেটেছেন মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য।

“পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চেয়ে তৎকালীন পূর্ব বাংলার মানুষের অধিকার আদায় তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বঙ্গবন্ধুকে দলীয় গণ্ডিতে আবদ্ধ রাখা সমীচীন নয়। সব দলের জন্য তিনি জাতির পিতা।“