জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ অগাস্টের সব শহীদদের হত্যাকাণ্ডের পেছনের কুশীলবদের বিচারের জন্য কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতারা।
Published : 27 Aug 2020, 02:00 AM
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বুধবার এক ওয়েবিনারে এই দাবি জানান তারা। অনুষ্ঠানটি আওয়ামী লীগের ফেইসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার হয়।
সংগঠনের সদস্য সচিব শেখ ফজলে নূর তাপসের সঞ্চচালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। অন্যদের মধ্যে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন, আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক কাজী নজিবুল্লাহ হিরুসহ আরও অনেক খ্যাতিমান আইনজীবী এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় অংশ নেন।
আব্দুল মতিন খসরু বলেন, “ভুয়া আইন প্রণয়নের মাধ্যমে একাত্তরের পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুসহ যারা ১৫ আগস্ট শহীদ হয়েছিলেন তাদের বিচার বন্ধ করেছিল। এ রকম আইন থাকা সত্ত্বেও সাংবিধানিকভাবে বিচার করা সম্ভব ছিল। কেননা এমন আইন প্রণয়ন করার ক্ষমতা সংসদেরও নেই। তাই আইনের চোখে ওই আইনের কোনো মূল্যই ছিল না। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে যারা ছিল তাদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি।”
একই দাবি জানিয়ে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, “একুশ বছর আমরা বিচার পাইনি পিতা-মাতা হত্যার। অন্যায়ের বিচার হবে এটাই একজন ভুক্তভোগীর দাবি। মানবতার দোহাই দিয়ে অপরাধীদের দেশে না ফেরত পাঠানো কোনোভাবেই সমীচীন নয়।
“জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি করছি।”
অবিলম্বে কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে আইনমন্ত্রীর উদ্দেশে এএম আমিন উদ্দিন বলেন, “এটা করতে হবে যাতে জিয়াসহ যারা এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ছিল তাদের সবার মরণোত্তর বিচার করা যায়। যাতে করে জাতি জানতে পারে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা ছিল।”
অ্যাডভোকেট কাজী নজিবুল্লাহ হিরু বলেন, “১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ সকল শহীদদের হত্যাকাণ্ডের পেছনে জড়িতদের বিচারের জন্য কমিশন গঠনের দাবি জানাচ্ছি। অবিলম্বে কমিশন গঠন করুন।”
শ ম রেজাউল করিম বলেন, “আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে যদি জাতি প্রকৃত অপরাধীদের না চিনতে পারে তাহলে কোন দিনই জাতীয় বেঈমানদের মুখোশ উন্মোচন হবে না। একুশে আগস্ট খালেদা জিয়া জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেও খুনিদের দেশ থেকে পালাতে সাহায্য করেছিল। এখন আমার মনে হয়, শেখ হাসিনাকে রক্ষা না করলে বাংলাদেশ রক্ষা হবে না, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ রক্ষা হবে না, তেমনিভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ রক্ষা হবে না।”
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যে সরাসরি এ বিষয়ে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, “আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারের সময় দেখি সাক্ষীরা বলছে, বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয়েছিল তখন তিনি বলেছেন, আমাকে এইখানে হত্যা কর। মানুষ কিন্তু তার জীবন বাঁচানোর জন্য শেষ চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি তা করেননি। বঙ্গমাতা খুনিদের বলেছিল, আমাকে এখানেই হত্যা করো, আমি কোথাও যাব না। বঙ্গবন্ধু শিখিয়েছেন, একটা দেশকে পরিচালনা করার যে অবকাঠামো দরকার সেটা হচ্ছে একটা সংবিধান। একটা দেশ যখনই উদীয়মান হচ্ছিল, ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়।
“বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, আমার দেখা গণচীন আমরা অলৌকিকভাবে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে পেয়েছি। এই বইগুলো পড়লে মনে হয় বঙ্গবন্ধু আমাদের সাথেই আছেন। এই বইগুলো আমাদের পড়তে হবে এবং নতুন প্রজন্মকেও পড়াতে হবে। রেডিও-টিভিতে বইগুলোর উপর প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে এবং বিজয়ীদের পুরস্কৃত করতে হবে। এভাবে নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে জানতে উদ্বুদ্ধ হবে।”
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, “ইতিহাসবিদদের মতে অমর থাকেন তারাই যারা কিছু লিখে যান। ১৫ আগস্ট আমরা জাতির পিতাকে হারিয়েছি, কিন্তু আমার মনে হয় তিনি আছেন, উনি আছেন আমার অনুভূতিতে। এই অনুভূতির কারণ হল বঙ্গবন্ধু আমাদের জন্য যে লেখাগুলো রেখে গেছেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, আমার দেখা নয়াচীন এসব পড়লেই অনুভব করা যায়। আর এসবের পেছনে একমাত্র অনুপ্রেরণা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। তার অনুপ্রেরণায় তিনি লিখে গেছেন।”
সভাপতির বক্তব্যে ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, “আজ জাতিসংঘ বঙ্গবন্ধুকে বলছে বিশ্ববন্ধু। বঙ্গবন্ধুর অমরত্ব এখানেই, তিনি বলেছেন, মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দিব; এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ্। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এবং তিনি কিন্তু সেটা করে দেখিয়েছেন। আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। এটা প্রমাণ করে বাঙালি জাতির প্রতি তার আনুগত্য ছিল, ভালোবাসা, প্রেম সব কিছু ছিল।”
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা আব্দুল বাসেত মজুমদার, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাংসদ অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী, অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান বক্তব্য দেন।