দিল্লিতে সংঘটিত দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর কতটুকু শোভনীয় হবে, সেই প্রশ্ন রেখেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
Published : 03 Mar 2020, 12:50 AM
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির উদ্যোগে ‘স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন দিবস’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্যে তিনি এই প্রশ্ন রাখেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ১৭ মার্চ ঢাকায় আসছেন।
ফখরুল বলেন, “মোদী সাহেব আসছেন পাশের দেশে থেকে; ভালো কথা। আপনি কখন আসছেন? যখন সেখানে দিল্লিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট (ডনাল্ড ট্রাম্প)উপস্থিত হয়েছেন সেই সময়ে একটা নিকৃষ্টতম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
“অভিযোগ আসছে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও মহল থেকে আপনার দল এই দাঙ্গার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। সেই সময়ে বাংলাদেশে আপনার আসাটা কতটুকু শোভনীয় হচ্ছে, কতটুকু কাজে দেবে সেটা অবশ্যই আপনার চিন্তা করার দরকার।”
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার বিভিন্ন অমীমাংসিত সমস্যার কোনো সমাধান না হওয়া নিয়ে ‘সরকারের ব্যর্থতার’ সমালোচনাও করেন ফখরুল।
বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী হিসেবে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবকে সম্মান না জানানোর সমালোচনাও করেন বিএনপি মহাসচিব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখা অনেককে স্মরণ করে না দাবি করে তিনি বলেন, “স্মরণ করে না এম এ জি ওসমানীকে, স্মরণ করে না মওলানা ভাসানীকে এবং তারা কখনোই স্বীকার করতে চায় না স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে সমস্ত মানুষ জড়িত ছিল।”
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরের সমালোচনা করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বলেন, “নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশে আসবে, আমরা দুই হাত প্রসারিত করে থাকবো তাকে বুকে আগলিয়ে নেওয়ার জন্যে। কিন্তু যে সময়ে তিনি বাংলাদেশে আসছেন সেই সময়ে দুই হাত প্রসারিত করে থাকা নয়, দুই হাত শক্ত করে রাখা তাকে ফেরাবার জন্য।
“যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে, অসাম্প্রদায়িক মানবের দেশ ভারত যে দানবীয় ব্যবহার করেছে তারপর তার (নরেন্দ্র মোদী) এই মুহুর্তে বাংলাদেশে আসা এবং তাকে স্বাগত জানাতে না পারা আমাদের জন্য দূঃখজনক।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন আওয়ামী লীগ এককভাবে করতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন কাদের সিদ্দিকী।
“সেই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং জন্মদিন পালিত হয় তাহলে বাংলাদেশের সমগ্র লোককে নিয়ে সেটা পালন করা উচিৎ এবং করতে হবে। শুধু আওয়ামী লীগ সরকার যদি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করে… করতে পারে; কিন্তু বাংলাদেশের নেতা, বাংলাদেশের পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী একা আওয়ামী লীগের পালন করার কোনো অধিকার নেই।”
মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান কাদের সিদ্দিকী বলেন, “শেখ লুৎফর রহমানের ছেলে শেখ মুজিবুর রহমান শেখ হাসিনার বাবা হতে পারেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আ স ম আবদুর রবের বাবা, সিরাজুল আলম খানের বাবা, নুরে আলম সিদ্দিকীর বাবা, তোফায়েল আহমেদের বাবা, বলতে গেলে আমারও বাবা।
“তাহলে আমার বাবার জন্মদিন, আ স ম আবদুর রবের বাবার জন্মদিন, শাহজাহান সিরাজের বাবার জন্মদিন, লতিফ সিদ্দিকীর বাবার জন্মদিন পালন করতে হলে আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। দেশের প্রতিটি মানুষের বঙ্গবন্ধু, শুধু আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু নয়।”
বঙ্গবন্ধুকে জনবিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে অভিযোগ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, “আমি কালকেও গ্রামে গিয়েছিলাম, একজন মানুষের মুখেও বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকীর কথা শুনি নাই। যা আছে রেডিও-টেলিভিশনে আছে, পত্র-পত্রিকায় আছে, মানুষের মুখে নাই, মানুষের বুকে নাই। আপনাদের মতো অপদার্থের কারণে শেখ মুজিব জনবিচ্ছিন্ন হচ্ছে।”
জেএসডি সভাপতি একাত্তরে স্বাধীনতার পতাকা প্রথম উত্তোলনকারী ডাকসুর তৎকালীন ভিপি আ স ম রব বলেন, “সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্দিকে, শাহবাগ থেকে শহীদ মিনার, নিউ মার্কেট থেকে রেলভবন পর্যন্ত এই জায়গায় লক্ষ জনতা-শিশু, কারফিউ ছিল, হরতাল ছিল। ছোট শিশুকে বাবা-মা কোলে করে নিয়ে এসেছে। এর মধ্যেই লক্ষ জনতার সমাবেশ হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে।
“আজকে ৫০ বছর পরে মুজিববর্ষ, যারা ভোট ডাকাতি করে, যারা ক্যাসিনো চালায়, টাকা বিদেশে নিয়ে যায়, যারা জনগণের অধিকার-কর্তৃত্ব স্বীকার করে না সেই ভোট ডাকাতদের ক্যাসিনো, দুর্নীতি করে, জুয়া, মদ যারা খায় তাদের মুজিববর্ষ পালন করার কোনো অধিকার নাই।”
সরকারের সমালোচনায় নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “আজকে ২ মার্চ ভোটাধিকার দিবস ঘোষণা করা হয়েছে, যখন ভোটই নাই, ভোটের অধিকার নাই, মানুষ ভোট দিতে যায় না।”
“এখানে প্রধান বক্তা হিসেবে মোদী সাহেবকে ছাড়া আর কাউকে দরকার নাই। কারণ ওরা(সরকার) মনে করছে মোদী ছাড়া বোধহয় আর ক্ষমতায় থাকা যাবে না। পরিস্থিতি এতই যদি খারাপ হয় আমি স্পষ্ট কণ্ঠে বলতে চাই, মোদীকেও দিয়েও ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। বাংলাদেশের সমস্ত মানুষ আপনাদের বিপক্ষে।”
জেএসডির কার্য্করী সভাপতি সা কা ম আনিসুর রহমান খান কামালের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় গণস্বাস্থ্য সংস্থার জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির আবদুল মঈন খান, গণফোরামের রেজা কিবরিয়া, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জেএসডির তানিয়া রব, সিরাজ মিয়া, ছানোয়ার হোসেন তালুকদার, শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূর বক্তব্য রাখেন।
পরে আ স ম রবকে হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন ডাকসুর বর্তমান ভিপি নূর।