ভারত ভাগের পর ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে যে ছাত্রসংগঠনটির জন্ম, অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে শনিবার বাহাত্তর বছর পূর্ণ করছে সেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
Published : 04 Jan 2020, 09:56 AM
প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এর নাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’। পাকিস্তান আমলেই ‘মুসলিম’ শব্দটি ছেঁটে ফেলা হয়। স্বাধীনতার পর নাম হয় ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’।
প্রতিষ্ঠালগ্নে নাইমউদ্দিন আহম্মেদকে আহ্বায়ক করে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর আরমানিটোলায় ছাত্রলীগের প্রথম সম্মেলনে দবিরুল ইসলাম সভাপতি ও মোহাম্মদ আলী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
ছয় দশকে সংগঠনটি পেরিয়েছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ আর নব্বইয়ের দশকের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের ঝঞ্ঝামুখর সময়।
ছাত্রস্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলের অনেক সঙ্কটকালীন সময়ে ছাত্রলীগ আন্দোলনের নেতৃত্বের কাতারে থাকলেও সাম্প্রতিক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সমালোচনার মুখে থাকা সংগঠনটি এখন ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের জন্য লড়ছে।
গত সেপ্টেম্বর মাসে দুর্নীতির অভিযোগে সংগঠন থেকে বাদ পড়েন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।
ছাত্রলীগের উপর বড় সাংগঠনিক ধাক্কার পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবার দুপুরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান ও পুনর্মিলনী হচ্ছে।
দুপুর আড়াইটায় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন।
ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ১১১টি সাংগঠনিক জেলার সাবেক বর্তমান নেতারা আজকের এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। আমরা সবাইকে আমন্ত্রণ জানানোর চেষ্টা করেছি।”
নানা বিতর্ক, অনিয়ম আর অভিযোগের বেড়াজাল ভেঙে সোনালী অতীত ফিরিয়ে আনতে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান থেকে ছাত্রলীগের নেতাদের নির্দেশনা দেবেন শেখ হাসিনা।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছাত্রলীগ সব সময়ই নেত্রীর আবেগের জায়গা। তাই নেত্রী নিজেই ছাত্রলীগের দেখভাল করেন।
“যেহেতু সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য অব্যাহতি পেয়েছে,এবং এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এটাই প্রথম প্রোগ্রাম, সুতরাং আজকে নেত্রী ছাত্রলীগ নেতাদের দিক-নির্দেশনা দিবেন। ছাত্রলীগকে সঠিকভাবে চলতে বার্তা দেবেন তিনি।”
৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটি উৎসবমুখর করতে নানা প্রস্তুতি নিয়েছে ছাত্রলীগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে আঁকা হচ্ছে সাত দশকের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস- ‘চিত্রপটে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’।
সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শুরু হয় ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিকতা। সকাল ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কাটা হয় কেক।
৬ জানুয়ারি সোমবার সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে হবে রক্তদান কর্মসূচি। ৭ জানুয়ারি সকালে কোমলমতি শিক্ষার্থদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ ও বিকালে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে শীতবস্ত্র বিতরণ করবে ছাত্রলীগ।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা জানান ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়।
জয় বলেন, “প্রতিবছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রা থাকলেও এবার আমরা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও পুনর্মিলনী হচ্ছে।”
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন সফল করতে মোট নয়টি উপ-কমিটি করা হয়েছে। সেসব কমিটি প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জয়।
তিনি বলেন, “ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের সঙ্গে দেশের সকল মানুষকে যুক্ত করে আনন্দ ভাগাভাগি করতে চাই।”