অবৈধ ক্যাসিনো চালিয়ে তোলা টাকা ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিদেশে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
Published : 26 Sep 2019, 11:20 PM
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাম্প্রতিক অভিযানে ঢাকার আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের কাছে পাওয়া বিপুল অর্থের দিকে ইঙ্গিত করে বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহে জনসভায় বক্তব্যে এই অভিযোগ করেন তিনি।
ফখরুল বলেন, “ব্যাংক লুট করেছেন, হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন, প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়তে বাড়তে এমন জায়গায় গেছে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
“সব টাকা পাচার করে বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। কোথায়? সুইস ব্যাংকে। খোঁজ নিয়ে দেখবেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা সেখানে গেছে।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আজকে ক্যাসিনো বলেন, মেগা প্রজেক্ট বলেন, কারা অর্থ লুটে নিয়ে যাচ্ছে? যে কজন ধরা পড়ছে, তারা দেখবেন যুবলীগের নেতা।”
এর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদেরও যোগসাজশের ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “এই যুব লীগের নেতাদের কি এত সাহস? তারা একা একা এই কাজ করে যাচ্ছে? না। চুনোপুঁটি ধরে ক্ষমতাসীনরা দুর্নীতির গন্ধ দূর করতে চায়, ব্যর্থতা আড়াল করতে চায়।”
ক্যাসিনোর সঙ্গে যারা জড়িত, তারা আগে বিএনপিতে ছিল- ক্ষমতাসীনদের এই কথার জবাবে ফখরুল বলেন, “তাহলে ১২ বছর কী করলেন? আঙ্গুল চুষলেন? ১২ বছর খুঁজে পেলেন না এরা কোথাকার? ”
“তারপরেও একটা মানুষও এই দল ছেড়ে অন্য কোনো দলে যায়নি, একজনও বেগম খালেদা জিয়ার স্বপ্ন ছাড়া অন্য কিছু দেখে না। এটাই হচ্ছে বিএনপি, এটাই হচ্ছে স্বাধীনতা, এটাই হচ্ছে গণতন্ত্র।”
সরকারের নানা বাধার মধ্যেও ময়মনসিংহ জেলা শহরের রেলওয়ে স্টেশনের কৃষ্ণচূড়া চত্বরের এই জনসভা ‘সফল’ করার জন্য ময়মনসিংহবাসীসহ বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিনন্দন জানান ফখরুল।
জনসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, “এই সরকার লুটেরা সরকার, এই সরকার ক্যাসিনোবাদী সরকার। এরা জনগণের সরকার নয়।
“এই সরকারের দুঃশাসন, লুটপাটের কারণে দেশে অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে গেছে। সরকার এমন দেউলিয়া হয়ে গেছে যে, মহাসড়ক থেকে টোলের টাকা নিয়ে দেশ পরিচালনা করছে। এত টাকা গেল কোথায়? বাংলাদেশে গত পাঁচ বছরে ট্যাক্স তিনগুণ বেড়েছে, তা গেল কোথায়?”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “গত পরশুদিন সিলেটে জনসভা হয়েছে। আমার দুর্ভাগ্য আমি যেতে পারিনি। শুনেছি সেখানেও বাধা দেওয়া হয়েছে। তারপরও জনসভা সফল হয়েছে। যেখানেই বাধা আসছে সেখানেই জনগণ বাধা অতিক্রম করে সমাবেশ করছে।
“দেশনেত্রী, এখন থেকে যেখানেই বাধা আসবে সেখান থেকে প্রতিরোধ হবে- আপনার ভয়ের কিছু নাই।”
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “তারা নাকি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। তাদের মধ্যে যে পচন ধরেছে, অ্যান্টিবায়েটিক খেয়ে পচন রোধ করে তারা যদি একটু পরিচ্ছন্ন হতে চায়। দুই-একটা অ্যান্টিবায়েটিক খাইলে সরকার সুস্থ হয় না।
“শুনেছি, আপনাদের কাছে নাকি ৭৫০ কোটি … আছে, শুনেছি দুই টোকাই নাকি ধরা পড়ে অনেকের নাম বলছে। দয়া করে নামগুলো পত্রিকায় প্রকাশ করুন এবং পু্লিশের কাছে সোপর্দ করুন, আইনের হাতে তু্লে দিন।”
ময়মনসিংহ জেলা বিএনপির উদ্যোগে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এই বিভাগীয় সমাবেশ হয়। ময়মনসিংহ বিভাগ হিসেবে কার্য্ক্রম শুরু হওয়ার পর এটি বিএনপির প্রথম বড় সমাবেশ।
ময়মনসিংহ ছাড়াও আশেপাশের জেলা-উপজেলা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী এই জনসভায় যোগ দেন। স্টেশন রোড, গাঙিনার পাড়, মহারাজা রোড, ট্রাংক পট্টি রোড, জিসিগো রোডেও অবস্থান নেয় নেতা-কর্মীরা।
জনসভায় কর্মীদের হাতে খালেদা জিয়ার ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়, তার মুক্তির দাবিতে নানা স্লোগান ছিল তাদের মুখে।
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দেড় মাস আগে বিভাগীয় সমাবেশ শুরু করে বিএনপি; তার ধারাবাহিকতায় এটি পঞ্চম সমাবেশ।
ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও সর্বশেষ সিলেটে সমাবেশ হয়েছে।
ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি একেএম শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আখন্দ ওয়াহিদ ও মোতাহার হোসেন তালুকদারের পরিচালনায় সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম খান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, ফজলুর রহমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, ওয়ারেস আলী মামুন, কামরুজ্জামান রতন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, শামীমুর রহমান শামীম, আবদুল বারী ড্যানি, আবদুল্লাহ ফারুক, শামসুল আলম তোফা, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, সুলতানা আহমেদ, আনোয়ার হোসেইন, হাসান জাফির তুহিন, ময়মনসিংহের নেতা মাহবুবুর রহমান লিটন, মাহমুদুল হক রুবেল, নুরজাহান ইয়াসমীন, আরিফা জেসমিন, সারোওয়ার হোসেন বক্তব্য রাখেন।
আবদুল আউয়াল মিন্টু, আফজাল এইচ খান, সিরাজুল হক, সুলতান মো. বাবু, হুমায়ুন কবির খান, ইয়াসীন আলীও উপস্থিত ছিলেন জনসভায়।