বিএনপির সাংসদ রুমিন ফারহানার এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা হিসেবে জাতির প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে দিনরাত পরিশ্রম করছেন তিনি, সব প্রতিষ্ঠানকে আরও সক্রিয় করতেই তার এই প্রচেষ্টা।
Published : 11 Sep 2019, 06:56 PM
এভাবে কাজ না করে তার নেত্রী খালেদা জিয়ার মতো ‘বেলা ১২টা পর্যন্ত ঘুমিয়ে কাটালেই’ তিনি খুশি হতেন কি না সেই প্রশ্নও করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
বুধবার জাতীয় সংসদে রুমিন তার প্রশ্নে দেশে ‘বর্তমানে মানুষ হত্যা হতে মশা মারা পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রয়োজন হয়’ দাবি করে এটাকে রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়া, অকার্যকর হওয়ার ইঙ্গিত বহন করে বলে অভিযোগ করেন।
‘প্রাতিষ্ঠানিক সফলতা একটি কার্যকর রাষ্ট্রের পূর্বশর্ত’ উল্লেখ করে রুমিন প্রশ্ন করেন, “এই অকার্যকর প্রতিষ্ঠানগুলো কি রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারের সার্বিক ব্যর্থতার চিত্র বহন করে না?”
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বিএনপির এই সংসদ সদস্যদের প্রশ্নকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত, অসংসদীয় ও অবান্তর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ওই সংসদ সদস্য ‘মানুষ হত্যা‘ আর মশা মারাকে একই সমতলে নিয়ে এসেছেন।
“তা না করে সংসদ সদস্যের (রুমিন ফারহানা) নেত্রী খালেদা জিয়ার মতো দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঘুমিয়ে কাটালেই কি প্রশ্নকারী খুশি হতেন?”
বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং তার ছেলে তারেক রহমানের কর্মকাণ্ডে ‘অকার্যকর রাষ্ট্রের উদাহরণ’ তৈরি হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, “রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসত রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন ব্যক্তির কাছ থেকে। প্রধানমন্ত্রী ঘুমিয়ে থাকতেন, সিদ্ধান্ত নিতেন তার পুত্র হাওয়া ভবন থেকে। মন্ত্রী-সচিবেরা হাওয়া ভবন থেকে নির্দেশের অপেক্ষায় প্রহর গুণতেন।”
অপরদিকে তার সরকার আমলে দেশে বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, “আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি প্রবৃদ্ধিতে বিশ্বসেরার জায়গা করে নিয়েছে। এসব আপনাআপনি হয়নি। সকলের পরিশ্রম রয়েছে। প্রতিষ্ঠান অকার্যকর থাকলে এসব অর্জন সম্ভব হত না। রাষ্ট্রযন্ত্র কাজ করছে বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।”
অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “যেখানেই থাকি না কেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জনগণের ভালো-মন্দ দেখার দায়িত্ব আমার। আমি তো আর ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেশ চালাই না। ১২টায় ঘুম থেকে উঠি না।
“২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫ ঘণ্টা আমার ঘুমের সময়। বাকি সময়টায় আমি সার্বক্ষণিক চেষ্টা করি দেশের কোথায় কী হচ্ছে সেগুলো নজরে রাখার। এটাকে আমি নিজের কর্তব্য বলে মনে করি।”
রুমিন ফারহানার প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করলে এদেশে বিএনপির অস্তিত্ব থাকত না।
“আওয়ামী লীগ মানুষ হত্যার রাজনীতি করে না। প্রতিহিংসার রাজনীতিতেও বিশ্বাসী নয়। আমরা যদি তাই বিশ্বাস করতাম তাহলে এদেশে বিএনপির অস্তিত্ব থাকত না। কারণ বিএনপির দ্বারা আমরা যে পরিমাণ হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হয়েছি তা আর কেউ হয়নি।”
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের ‘সম্পৃক্ততার’ অভিযোগ পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মেজর জিয়াউর রহমান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ আমার মা, তিন ভাই এবং অন্তঃসত্ত্বা ভাইয়ের স্ত্রীসহ আমার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের রক্তে রঞ্জিত হয়ে খুনিদের সহায়তায় ক্ষমতায় বসেছিলেন। জিয়াউর রহমান এ দেশে হত্যা, ক্যু, অপরাজনীতি শুরু করে। ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাটের সংস্কৃতি চালু করে। একটা পুরো প্রজন্মকে নষ্ট করে দেয় জিয়াউর রহমান। এ কারণে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যের মুখে মানুষ মারার বিষয়টি অবলীলায় চলে আসে।”
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে বাংলাদেশ যাতে ন্যায্য হিস্যা পায় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও সতর্কতা নেওয়া হয়েছে।
“শুল্ক মৌসুমে তিস্তার পানি প্রবাহ হ্রাসের বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে এবং এটি সুরাহার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। পানি প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য ভারতের সাথে আমাদের জোর কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত আছে।”
ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কারণে এখনও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সই না হওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। তাদের সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। এ বছর অক্টোবর মাসে ভারত সফরের সময়ও আমি এ বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব।”
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সর্বশেষ অগ্রগতি বিষয়ে সংরক্ষিত আসনের রুমানা আলীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার প্রশ্নে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ভীতি কাজ করছে। ২২ আগস্ট ২০১৯ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের তারিখ ঠিক করা হয়। যাবতীয় প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও কোনো রোহিঙ্গা ফিরে যেতে সম্মত না হওয়ায় প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হয়নি।”
বাংলাদেশের অব্যাহত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ শিগগিরই রাখাইন রাজ্যে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করবে এবং দ্রুত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।