পোস্টারে খালেদার ছবি ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন আওয়ামী লীগের

বিএনপি প্রার্থীদের নির্বাচনী পোস্টারে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি ব্যবহার নিয়ে আপত্তি জানিয়ে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপ চেয়েছে আওয়ামী লীগ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Dec 2018, 07:12 PM
Updated : 21 Dec 2018, 08:28 PM

নিজেদের দাবির পক্ষে যুক্তি দিয়ে দলটির নেতারা বলছেন, দুর্নীতির মামলায় কারাবন্দি খালেদা জিয়া এখন দলের চেয়ারপারসনের দায়িত্বে নেই, তার জায়গায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করা তারেক রহমান দণ্ড নিয়ে ফেরারি আসামি।

এছাড়া মনোনয়নপত্রে ‘মিথ্যা তথ্য’ উপস্থাপনের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের প্রার্থিতা বাতিলেরও আবেদন জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচটি ইমামের নেতৃত্বে দলটির একটি প্রতিনিধি দল শুক্রবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠকে এসব দাবি জানান।

আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সন্ধ্যা সোয়া ৬টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা।

বৈঠক শেষে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এইচটি ইমাম বলেন, “খালেদা জিয়া বর্তমানে দলের চেয়ারম্যান পদে বহাল নেই, তাই নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী তার ছবি ব্যবহার করা যাবে না। অন্যদিকে তারেক রহমান একজন ফেরারি আসামি। তাই তারেকের ছবি নির্বাচনী পোস্টারে ব্যবহার করা যাবে কি না, সেই বিষয়টি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বিবেচনার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

“পোস্টার সম্পর্কে পরিষ্কার বলা হয়েছে, নির্বাচনী পোস্টারে ছবি থাকবে দলের যিনি সভাপতি তার, বর্তমান সভাপতির ছবি এবং প্রার্থীর ছবি। বিএনপি তারা প্রচার-প্রচারণায় খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া দুইজনের ছবি ছাপাচ্ছেন। এটি তো আইনের সুস্পষ্ট লংঘন। বর্তমান সময়ে খালেদা জিয়া তো সভাপতি নন বিএনপির। বর্তমান সভাপতি তাদের মতে তারেক রহমান।”

দুর্নীতির দুই মামলায় ১০ ও ৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি। তিনি কারাগারে যাওয়ার পর তার ছেলে দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান পদাধিকার বলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের দায়িত্বে আসেন।

তারেক রহমান দুর্নীতির দুই মামলায় ৭ ও ১০ বছর এবং হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার রায় মাথায় নিয়ে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশের আইনের দৃষ্টিতে তিনি এখন পলাতক।

বিএনপির গঠনতন্ত্রের সপ্তম ধারায় বলা ছিল, দুর্নীতি পরায়ণ ব্যক্তি বিএনপির কোনো পর্যায়ের কমিটির সদস্য কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ‘অযোগ্য’ বিবেচিত হবেন। সেই বিপদ এড়াতে খালেদার প্রথম রায়ের আগে সপ্তম ধারা বিলুপ্ত করে বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হয়।

ওই সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে এক ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনে একটি আবেদন করেছিলেন। সেখানে সাড়া না পেয়ে অক্টোবরের শেষে তিনি হাই কোর্টে গেলে আদালত এক মাসের মধ্যে ওই আবেদন নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেয় ইসিকে। আর ওই আবেদনের নিষ্পত্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে বলা হয়।

এরমধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হলে লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বিএনপির প্রার্থী বাছাইয়ে অংশ নেন তারেক রহমান। আওয়ামী লীগ এ বিষয়ে আপত্তি তুললে সে সময় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, দণ্ডিত তারেক রহমান দেশে না থাকায় বিষয়টি নিয়ে তাদের করার কিছু নেই।

নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে শুক্রবারের বৈঠকে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে আচরণ বিধি লংঘনের অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

এইচটি ইমাম বলেন, “মওদুদ আহমদ দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি একটি নির্দেশনা দিয়েছেন- যেখানে নির্বাচনী সমাবেশ হবে, সেখানে একটি লাঠির মাথায় ধানের শীষ প্রদর্শন করা হবে। এটি আচরণ বিধির সুস্পষ্ট লংঘন। কয়েকদিন আগে আমরা পল্টনে এসব লাঠির নির্মম ব্যবহার দেখেছি।”

বিষয়টি আমলে নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছেন বলে জানান তিনি।

জামায়াত নেতাদের প্রার্থিতা বাতিলের অনুরোধ জানানোর কথা তুলে ধরে ইমাম বলেন, “হাই কোর্ট থেকে জামায়াতের কয়েকজন প্রার্থীর বিষয়ে একটি তালিকা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তারা মনোনয়ন ফরমে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেছেন।

“দলের জায়গায় তারা তো লিখেছে বিএনপি, কিন্তু তারাতো বিএনপির নয়-যেটা বিভিন্ন পত্রিকায় এসেছে। মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেছেন। তাদের মনোনয়ন বাতিলযোগ্য। আমরা কমিশনকে জামায়াতের মনোনয়ন বাতিলের অনুরোধ করেছি।”

নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে অনুমোদন পাওয়া ১১৮টি এনজিওর মধ্যে চারটি নিয়ে আপত্তির কথা আবারও নির্বাচন কমিশনে তুলেছেন বলে জানান তিনি।

ওই চার সংস্থা হল- খান ফাউন্ডেশন, ডেমোক্রেসি ওয়াচ, লাইট হাউজ এবং মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ।

এইচ টি ইমাম বলেন, “নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে এমন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া যাবে না, যারা কোনো দল, ব্যক্তি বা বিশেষ কোনো প্রতিষ্ঠানের আদর্শের প্রতি অনুগত। এই চারটি প্রতিষ্ঠান বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।”

এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও আক্রমণের প্রতিকার চেয়ে এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত কমিশনে জমা দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

ইমাম বলেন, “সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা ও আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। এই বিষয়টি এর আগেও আমরা কমিশনে জানিয়েছি। আজও আমরা লিখিতভাবে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে অবগত করেছি এবং এর প্রতিকার চেয়েছি।

“সারা দেশে আমাদের কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছে অথচ বিএনপি-জামায়াত উল্টো অভিযোগ করে যাচ্ছে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন থেকে এ ধরনের ঘটনা আমরা প্রতিদিন নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে ধরব।” 

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমাদের কোনো আস্থাহীনতা নেই। এখানে ভিন্নমত থাকতেই পারে। এটি একটি কোর্টের মতো, সেখানে একজন নোট অব ডিসেন্ট দিতেই পারে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সকলের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে।”

প্রতিনিধি দলে আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, এ বি এম রিয়াজুল কবির কাওসার ও নজিবুল্লাহ হিরুসহ কয়েকজন ছিলেন।