বাংলাদেশ জাসদের আবেদন পুনঃপর্যালোচনায় ইসি

জাতীয় সংসদে দুজন সংসদ সদস্য থাকা স্বত্ত্বেও বাংলাদেশ জাসদের নিবন্ধন নাকচ হওয়ার পর দলটির জেলা-উপজেলা কমিটির তালিকাসহ পুনর্বিবেচনার আবেদন আমলে নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে ইসি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 August 2018, 05:58 PM
Updated : 12 August 2018, 05:58 PM

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধন পেতে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর নির্ধারিত সময়ে ৭৬টি দল আবেদন করে নির্বাচন কমিশনে। সাত মাস ধরে আবেদন যাচাই-বাছাই ও প্রাথমিকভাবে টিকে থাকা দলগুলোর দলিলাদি পর্যালোচনা করে  ‘নিবন্ধন  অযোগ্য’ দলের তালিকা জানিয়ে দেওয়া হয়।

আগ্রহী দলগুলোকে নিবন্ধন অযোগ্য জানিয়ে দেওয়ার পর শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশ জাসদ নিবন্ধনযোগ্য কি না, তা পুনরায় যাচাই করা হচ্ছে।

রোববার নিবন্ধন যাচাই-বাছাই কমিটির দায়িত্বশীল ইসির উপ সচিব আব্দুল হালিম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে ৭৬টি দল আবেদন করেছিল শেষ পর্যন্ত সবাইকে আমরা ‘না’ করে দিয়েছি।

”কিন্তু বাংলাদেশ জাসদের একটি আবেদন পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত দিয়েছে ইসি। এজন্যে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত চলছে।”

তিনি জানান,  “বাংলাদেশ জাসদের এটি নতুন কোনো আবেদন নয়। সংসদ সদস্য রয়েছে উল্লেখ করে একটা আবেদন নাকচ হওয়ায় জেলা-উপজেলা কমিটির তালিকা দিয়েছিল দলটি। সেই আবেদনই আমলে নেওয়া হয়েছে।

“আগামী ১০ দিনের মধ্যে মাঠ পর্যায়ের তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।”

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু নেতৃত্বাধীন জাসদে ভাঙনের পর আলাদাভাবে সক্রিয় রয়েছে জাসদের অন্য অংশটি। শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও নাজমুল হক প্রধান নেতৃত্বাধীন এই অংশ এখন বাংলাদেশ জাসদ নামে নিবন্ধন চাইছে।

নিবন্ধন অযোগ্য ঘোষণা হওয়ার পর জাতীয় সংসদে দুজন সংসদ সদস্য থাকার পরও বাংলাদেশ জাসদকে নিবন্ধন না দিলে নির্বাচন কমিশন প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে হুঁশিয়ার করেছিল দলটি।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, কমিশনের তিনটি শর্তের মধ্যে একটি পূরণ হলে একটি দল নিবন্ধনের যোগ্য বিবেচিত হয়। নতুন কোনো দলকে নিবন্ধন পেতে হলে শেষ শর্তটিই পূরণ করতে হয়।

শর্তগুলো হলো- ১. দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কোনো জাতীয় নির্বাচনের আগ্রহী দলটি যদি অন্তত একজন সংসদ সদস্য থাকেন; ২. যে কোনো একটি নির্বাচনে দলের প্রার্থী  অংশ নেওয়া আসনগুলোয় মোট প্রদত্ত ভোটের ৫ শতাংশ পায়। ৩. দলটির যদি একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ [২১টি] প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং অন্তত ১০০টি উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সম্বলিত দলিল থাকে

রোববার বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান,  “গেল সপ্তাহে  নিবন্ধন আবেদন আমলে নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে এমন চিঠি দিয়েছে ইসি।

“আমাদের প্রথমেই জানিয়েছিল সংসদ সদস্য থাকলেও নিবন্ধন দেওয়া হবে না। ওই চিঠি পেয়েই আমরা জেলা-উপজেলা কমিটির তালিকা দিয়ে পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করি। বিশেষ কোনো ফেভার কিংবা নতুন আবেদন নয়, নির্ধারিত সময়ে আবেদন করেছি বলেই তা আমলে তদন্ত করা হচ্ছে।”

মাঠ পর্যায়ে ৩৭টি জেলার কমিটি ও শতাধিক উপজেলার সমর্থকদের তালিকা যাচাই শেষে নিবন্ধন পাবে বলে আশা করেন হাতি অথবা আনারস প্রতীকে আবেদন করা দলটি।

তবে এরপরও নিবন্ধন না পেলে আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়ে নাজমুল হক প্রধান বলেন, “আমাদের সংসদ সদস্য থাকার পরও নিবন্ধন দিল না; এখন মাঠে তদন্ত চলছে। সব কিছু ঠিক থাকার পরও নিবন্ধন না দিলে আমরা আদালতে যাব।”

২০০৮ সালে নিবন্ধন পদ্ধতি চালু হওয়ার পর এখন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোই কেবল ভোটে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়। বর্তমানে ৪০টি  নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে।

গণ আজাদী লীগ- কংগ্রেসও টিকল না

এবার নিবন্ধন আগ্রহীদের মধ্যে বাংলাদেশ গণ-আজাদী লীগ ও  বাংলাদেশ কংগ্রেস নামে দুটি দলের মাঠ পর্যায়ের তদন্ত করে  দলটির অনেক জেলার প্রতিবেদন নেতিবাচক পেয়েছে ইসি।

শর্ত পূর্ণাঙ্গভাবে পূরণ করতে না পারায় দুটি দলকেই নিবন্ধন অযোগ্য বলে চিঠি দেওয়া হয়।

গেল সপ্তাহে ইসির চিঠি পেয়েছেন জানিয়ে গণ-আজাদী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ খান  ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের চেয়ারম্যান কাজী রেজাউল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আলাদাভাবে বলেছেন, তারাও ইসির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন করবেন।

ইতোমধ্যে জোনায়েদ সাকি নেতৃত্বাধীন গণসংহতি আন্দোলন দলটির নিবন্ধনের আবেদন বাতিল হওয়ার  সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে স্মারকলিপি দিয়েছে।

ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলনের শুনানি ১৯ অগাস্ট

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বেসরকারি সংস্থা প্রশিকার চেয়ারম্যান কাজী ফারুক আহমেদের গড়ে তোলা রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলনের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে।

এ নিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনে আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৯ অগাস্ট শুনানিতে ডাকা হয়েছে দলটির সাধারণ সম্পাদককে।

রোববার ইসির উপ সচিব আব্দুল হালিম খান এ সংক্রান্ত চিঠি ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদকের কাছে পাঠিয়েছেন।

আরও খবর