খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় ভোটের আগে ‘সন্ত্রাসের রাজত্ব’ চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
Published : 12 May 2018, 06:23 PM
খুলনায় ভোট গ্রহণের দুদিন আগে শনিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “খুলনা থেকে আমাদের নেতারা চলে এসেছেন। নির্বাচনের আইন অনুযায়ী ৭২ ঘন্টা আগে চলে আসতে হয়। এখন ওখানে যেটা চলছে, যেটাকে বলে সন্ত্রাসের রাজত্ব।”
আগামী মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। তবে ইসি স্থানীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েনে অনাগ্রহী।
দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থা জানালেও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আগামী সংসদ নির্বাচনেও তাদের অংশ নিতে বিভিন্ন মহল থেকে আহ্বান জানানো হচ্ছে।
ফখরুল বলেন, “জাফরুল্লাহ ভাই ( ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরী) সবসময় বলেন যে, নির্বাচন ছাড়া যাবে না।
“কোন নির্বাচন? সেই নির্বাচনে কি আমি ভোট দিতে পারব? সেই নির্বাচনে কি আমি প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাতে পারব? যেখানে সমস্ত রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যবহার করা হচ্ছে আজকে নির্বাচনে তাদের জয়লাভের জন্য। সেই নির্বাচন কীভাবে আমরা করব?”
নির্বাচনের পরিবেশ দেশে ‘তৈরি হয়নি’ বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।
“দেশনেত্রীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে আটকিয়ে রাখবেন, তারেক রহমান সাহেবের বিরুদ্ধে হাজারো মিথ্যা মামলা তৈরি করে তাকে দেশে আসতে দেবেন না, আমাদের সমস্ত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৭৮ হাজার মিথ্যা মামলা, ২০ লক্ষ আসামি ….. হাত-পা বেঁধে আমাকে পুকুরে ফেলে দেবেন, আর বলবেন যে সাঁতার কাট! কীভাবে সাঁতার কাটব?”
‘মালয়েশিয়া থেকে শিক্ষা নিন’
মালয়েশিয়ায় সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফলাফল থেকে সবাইকে শিক্ষা নিতে বলেন বিএনপি মহাসচিব, যে নির্বাচনে ফের ক্ষমতাসীন হয়েছেন মাহাথির মোহাম্মদ।
তিনি বলেন, “মাহাথির মোহাম্মদের উপ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আনোয়ার ইব্রাহিম। মাহাথিরই তাকে দল থেকে বের করে দিয়ে জেলে দিয়েছিলেন বিভিন্ন রকম অপবাদ দিয়ে, মিথ্যা মামলা দিয়ে। সেই আনোয়ার ইব্রাহিমের পার্টিই এখন মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় পার্টিতে পরিণত হয়েছে। মাহাথির মোহাম্মদকে তারাই নিয়ে এসেছে।
“মাহাথির মেনে নিয়েছেন শেষ বয়সে এসে। মেনে নিয়ে একমত হয়ে আজকে নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোটে জয়লাভ করেছেন। জয়লাভ করে তিনি বলেছেন, আমি আনোয়ার ইব্রাহিমকে সাজা দিয়েছি, এটা ভুল করেছি।”
একবার ঢাকা সফরে আসা আনোয়ার ইব্রাহিমের মেয়ের সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাতের প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, “তিনি ম্যাডামকে বলেছিলেন, ম্যাডাম আপনি মূল প্রসেসের সঙ্গে থাকবেন। তাহলে আস্তে আস্তে কথা পৌঁছে যাবে বিশ্বের কাছে, পৃথিবীর কাছে। আজকে সেখান থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।”
বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ‘জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই’ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “মানুষকে এক করতে হবে। এক করে এই যে ভয়াবহ দানব তাকে সরানোর জন্য কাজ করতে হবে। মালয়েশিয়াতেও দেখা গেল জাতীয় ঐক্য। এই ধরনের ঐক্য না হলে এটা খুব ডিফিকাল্ট।”
পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর প্রসঙ্গ
মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে পত্রিকায় খবর আছে, একজন ড্রাইভার টঙ্গিতে, তাকে নিয়ে গেছে এবং পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। যখন মেডিকেল কলেজে নিয়ে এসেছে, চেষ্টা করেছে ডাক্তারকে দিয়ে বলানো যে এটা স্বাভাবিক মৃত্যু। আমাদের ছাত্রনেতাকে গ্রেপ্তার করার পর তাকে মেরে ফেলল। এরকম অনেক ঘটনা।
“আজকে আমাদের বিএনপি, ছাত্রদল,যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের কতজনকে গুম করে ফেলেছে, কতজনকে ক্রসফায়ারে দিয়েছে। এই আমাদের রাষ্ট্রের অবস্থা। কোথায় যাবেন? কার কাছে যাবেন? আজ তো বলেই মাছের রাজা ইলিশ, আর দেশের রাজা হচ্ছে পুলিশ। কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই।”
খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি এবং ডা. সামীউল আলম সুহানের উপর হামলার প্রতিবাদে বিএনপি সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাব আয়োজিত সভায় বক্তব্য রাখেন ফখরুল।
বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান মিয়ার সভাপতিত্বে ও ড্যাবের যুগ্ম মহাসচিব এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চুর পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ড্যাবের মহাসচিব অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আখতার হোসেন খান, শেরে বাংলানগর কৃষি বিশ্ববিদ্যলয়ের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি সেলিম ভুঁইয়া, এ্যাবের প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু।