খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করতে রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি এখনও না পাওয়ার পেছনে সরকারের হাত রয়েছে বলে সন্দেহ বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদের।
Published : 12 Feb 2018, 08:08 PM
তিনি বলেছেন, “বৃহস্পতিবার আমরা মামলার রায়ের কপি চেয়েছিলাম, সেদিন আমরা সত্যায়িত কপিটি পাইনি। আজকে এখন পর্য়ন্তও (বিকাল সাড়ে ৪টা) আমরা পাইনি বলে শুনেছি। এভাবে তারা (সরকার) রায়ের কপি দেওয়া নিয়ে গড়িমসি করে যাচ্ছে, করছে।”
জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় গত বৃহস্পতিবার ৫ বছরের কারাদণ্ডের রায় হওয়ার পর থেকে ঢাকার পুরনো কারাগারে বন্দি আছেন খালেদা জিয়া।
৬ শতাধিক পৃষ্ঠার এই রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পেলে হাই কোর্টে আপিল করে তার জামিন চাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে আছেন আইনজীবীরা।
সোমবার ঢাকায় এক আলোচনা সভায় গড়িমসির অভিযোগ তুলে মওদুদ বলেন, “একেকটা দিন দেরি করলে বেগম জিয়া আরও একদিনের জন্য কষ্ট পাবেন, এটাই তাদের মনের ইচ্ছা বলে মনে হয়। এত নিষ্ঠুর!
“জেলখানাতে যদি মানবিক আচরণ না করেন- তাহলে এই সরকারকে কী বলব? এই সরকার একটা অমানবিক সরকার, মানবতা বোধ নেই তাদের।”
একদিন আগে কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে আসা মওদুদ বলেন, “বেগম খালেদা জিয়াকে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়েছে। উনি বলছেন, আমাকে দোতলায় একটি কক্ষে রাখা হয়েছে। সিঁড়ি দিয়ে অনেক কষ্ট করে আমাকে উঠতে হয়, নামতে হয়।
“অথচ আমরা খবরের কাগজে দেখেছি তাকে রাখা হয়েছে না কি গ্রাউন্ড ফ্লোরে। আসলে না। প্রথম দিকে সরকার অনেক মিথ্যা প্রচার করেছিল- উনি ডিভিশন পেয়েছেন, ফাতেমাকে (গৃহকর্মী) দেওয়া হয়েছে সাথে থাকতে ইত্যাদি। এখন দেখা যাচ্ছে সব তথ্যই মিথ্যা ছিল।”
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ডিভিশন পেতে আদালতের অনুমতি লাগবে- কারা কর্তৃপক্ষের এই বক্তব্যের জবাবে সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ বলেন, “কীসের আদালতের অনুমতি লাগবে? আমি কারা সংস্কার কমিটির চেয়ারম্যান ছিলাম পাঁচ বছর। আমরা অনেক পরিবর্তন এনেছি, কারা সংস্কার করেছি।
“আগে এই ডিভিশনের জন্য আদালতে যেতে হত, অনুমতি নিতে হত। এসব আমরা (চারদলীয় জোট সরকার) তুলে দিয়েছি। আজকে তিন দিন যাবত সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা, সাবেক সাংসদ, দেশনেত্রীকে অমানবিক পরিবেশে রাখা হলো, ডিভিশন না দিয়ে নির্জন কারাবাসে রাখা হলো- এটা সম্পূর্ণভাবে সংবিধান পরিপন্থি।”
বর্তমান সরকারের আমলে নিজের কারাবন্দিত্বের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমি এই সরকারের আমলে দুই বার জেলে গেছি, কারাগারে আমার যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিভিশনে দিয়ে দিয়েছে। জিজ্ঞাসা করে নিন। বেগম জিয়ার ব্যাপারে আইন নতুন করে কোথায় থেকে আসল? এটা সরকার করেছে প্রতিহিংসার কারণে। বেগম জিয়াকে কষ্ট দিতে।
“আমরা বলতে চাই, বেগম খালেদা জিয়াকে যতই কষ্ট দেবেন, আপনাদের ভোট ততই কমতে থাকবে। প্রতিদিন বেগম জিয়া জেলে থাকবেন, প্রতিদিন আপনাদের ১০ লক্ষ ভোটারের ভোট কমে যাবে।
“আওয়ামী লীগকে কে বুদ্ধি দিল বেগম জিয়াকে জেলখানায় পাঠাতে হবে, পাঠালে বোধহয় বিএনপি একেবারে শেষ হয়ে যাবে। এটা ঠিক না। বিএনপি যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন সবচাইতে শক্তিশালী ও সবচাইতে ঐক্যবদ্ধ।”
মুক্তিতে দেরি করাতে ‘শোন এরেস্ট’
খালেদা জিয়ার কারামুক্তিতে দেরি করাতে সরকার বিভিন্ন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। এখন তারা আরেকটা ষড়যন্ত্রের জ্বাল বুনছে। বিভিন্ন পুরনো মিথ্যা-বানোয়াট মামলায় নেত্রীকে শোন এরেস্ট দেখানো হচ্ছে।
“উদ্দেশ্য একটাই নেত্রীর জামিন প্রাপ্তিকে প্রলম্ভিত করার জন্য, দীর্ঘায়িত করার জন্য, সরকারের এসব হচ্ছে ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড।”