গয়েশ্বর কারাগারে, তরিকুলপুত্র রিমান্ডে

ঢাকায় পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।

একই ঘটনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের ছেলে দলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে তিন দিন এবং আরও ৫৩ নেতাকর্মীকে দুই দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।

এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় গণশিক্ষা বিষয়কসহ সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনকে রমনা থানার পুরনো একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তিন দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।

পুলিশের রিমান্ড এবং আসামিদের জামিন আবেদনের শুনানি করে ঢাকার মহানগর মহানগর হাকিম মাহমুদুল হাসান বুধবার এই আদেশ দেয়।

জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় হাজিরা দিয়ে মঙ্গলবার বিকালে খালেদা জিয়া গুলশানের বাসায় ফেরার পথে হাই কোর্ট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় বিএনপিকর্মীরা। ওই ঘটনায় বেধড়ক পিটুনির শিকার হন কয়েকজন পুলিশ সদস্য, ভাংচুর হয় তাদের গাড়ি ও আগ্নেয়াস্ত্র।

এর আধা ঘণ্টার মাথায় পরীবাগে বিটিসিএল অফিস এলাকাতেও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

হাই কোর্ট মোড়ের ঘটনায় মঙ্গলবার গভীর রাতে শাহবাগ থানায় দুটি এবং পরীবাগের ঘটনায় রমনা থানায় একটি মামলা করে পুলিশ।

এর মধ্যে শাহবাগ থানার এসআই চম্পক চক্রবর্তীর দায়ের করা মামলায় ৮৭ জন এবং এসআই মো. রহিদুল ইসলামের দায়ের করা মামলায় ৮৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও অনেককে আসামি করা হয়।

আর রমনা থানার এসআই মহিবুল্লাহর করা মামলায় ১৪২ জনের নাম উল্লেখ করে আরও দুই থেকে আড়াইশ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।

পরীবাগে হামলার পরপরই ঘটনাস্থল থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ৩৬ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে উল্লেখ করা হয় মামলার এজাহারে।

তিনটি মামলাতেই ফৌজদারি দণ্ডবিধির কয়েকটি ধারার পাশাপাশি বিশেষ ক্ষমতা আইনে পুলিশের ওপর হামলা, দায়িত্ব পালনে বাধা, পুলিশ হত্যার উদ্দেশ্যে ঢিল নিক্ষেপ, জনগণের মধ্যে ভীতি ও ত্রাস সৃষ্টি এবং সম্পদের ক্ষতি করার অভিযোগ আনা হয়।

আসামিদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সুপ্রিম কোর্ট বারের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উদ্দীন খোকন, বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেলসহ অধিকাংশের নাম তিন মামলাতেই দেখা যায়।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (ফাইল ছবি)

বিকালে হামলার ঘটনার পর মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে গুলশান পুলিশ প্লাজার সামনে থেকে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আর অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে গ্রেপ্তার করা হয় শান্তিনগরের বাসা থেকে।

এছাড়া সোমবার রাতে ঢাকার একটি হোটেল থেকে আটক বিএনপি নেতা আনিসুর রহমান খোকনকে মঙ্গলবার বিকালে রমনা থানায় হস্তান্তর করে র‌্যাব।

বুধবার বিকালে খোকনসহ মোট ৫৭ জনকে ঢাকার হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। তাদের ৫৫ জনকে সাত দিন করে এবং আনিসুর রহমান খোকনকে গতবছর নভেম্বরের একটি মামলায় দশ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চাওয়া হয়।

বিএনপি নেতা গয়েশ্বরকে রিমান্ডে নেওয়ার কোনো আবেদন পুলিশের পক্ষ থেকে ছিল না। তিন মামলায় নাম থাকলেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার দেখায় এক মামলায়।

তার পক্ষে জামিনের আবেদন করে আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া শুনানিতে বলেন, “প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য তাকে মামলায় ঢোকানো হয়েছে। তিনি কখনোই কাউকে হামলার নির্দেশ দেননি।”

শুনানি শেষে জামিন নাকচ করে গয়েশ্বরকে রমনা থানার মামলায় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক মাহমুদুল হাসান। একই মামলায় অমিতকে পাঠানো হয় তিন দিনের রিমান্ডে।

এছাড়া রমনা থানার মামলায় গ্রেপ্তার ৩৫ আসামিকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হয়।

শাহবাগ থানার এক মামলায় ১৬ জন এবং অন্য মামলায় দুজনকে দুই দিনের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারক। অসুস্থতার কারণে ছাত্রদল নেতা ফরিদউদ্দিন জুয়েলকে কারা ফটকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হয়।

আর রমনা থানার পুরনো মামলায় আনিসুর রহমান খোকনকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পায় পুলিশ।

বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গ্রেপ্তার

ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হেলালও ‘আটক’