রোহিঙ্গা বিষয়ে সরকারের অবস্থান জাতির সামনে পরিষ্কার করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
Published : 19 Sep 2017, 04:02 PM
মঙ্গলবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা সংকট সৃষ্টি করে উগ্র জাতীয়তাবাদকে উসকে দেওয়া হয়েছে। এটা এই অঞ্চলের স্বাধীনতা, শান্তি, নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত ভয়ংকর দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে, যা এই অঞ্চলকে অশান্ত করে তুলতে পারে। এটা কারো জন্য ভালো হবে না।
“আমি সরকারকে বলব, অবস্থান পরিষ্কার করুন এবং সিদ্ধান্ত কিভাবে নেবেন জাতির সামনে পরিষ্কার করতে হবে।”
১৯৭৮ সালে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও ১৯৯২ সালে বেগম খালেদা জিয়ার শাসনমালে রোহিঙ্গা সংকট ‘সফলভাবে’ মোকাবেলার বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “এই সংকট মোকাবেলায় শহীদ প্রেসিডেন্ট যে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন, বেগম খালেদা জিয়া যে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন- আমি সরকারকে অনুরোধ করব এটা দেখুন। এটা জাতীয় ইস্যু, এটা বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগের ইস্যু নয়। বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা বার বার বলছি সহযোগিতার কথা।”
বিএনপিকে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ত্রাণ বিতরণ করতে না দেওয়ায় সরকারের সমালোচনা করেন তিনি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবেবাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের উদ্যোগে ‘রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের অবস্থান’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রথম থেকে সরকারের অবস্থান ‘অস্পষ্ট’ দাবি করে আমীর খসরু বলেন, “এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান কোথায় আমার কাছে অন্তত: পরিষ্কার নয়। কারণগুলো হচ্ছে যখন তারা(রোহিঙ্গারা) আসতে শুরু করেছে তখন তাদেরকে পুশব্যাক করা হলো। এই পুশব্যাকের এক পর্যায়ে গুলিও ফুটেছে, নৌকাও ডুবেছে, প্রাণহানি হয়েছে। এই ছিল তখন সরকারের অবস্থান।
“তার পরবর্তি অবস্থান হচ্ছে- যৌথ অভিযানের কথা বলা হলো তারপরে সরকারের অবস্থান হচ্ছে এদেরকে(রোহিঙ্গা) সন্ত্রাসী বলে এদের গায়ে একটা লেভেল দেওয়া হলো, এরা সন্ত্রাসী এরা আসলে আমাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। কোনো কোনো মন্ত্রীকে বলতে শুনলাম এরা মাদক পাচারকারী। এই রকম অবস্থানের পরে অনেকের কাছে মনে হয়েছে বাংলাদেশ সরকার ও মিয়ানমার সরকারের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়নি। যখন দেখল সারা বিশ্ব জেগে উঠেছে, বিশ্ব মানবতা জেগে উঠেছে, বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে তখন সরকারের হুঁশ হলো, তারা তাদের সুর পাল্টালো।”
তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা প্রশ্নে সারা বিশ্বে যখন প্রবল চাপ সৃষ্টি হয়েছে তখন উনারা (সরকার) বোধহয় মনে করছেন রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মানবতার দিক থেকে নয়, নৈতিক দিক থেকে নয়, রাজনৈতিকভাবে যখন ক্ষতিগ্রস্তের দিকে যাচ্ছেন, তখন দেখলাম প্রধানমন্ত্রী শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে গেলেন।
“আমি বলতে চাই সরকার যদি রাজনৈতিক অবস্থান থেকে, ভবিষ্যৎ চিন্তা করে লোক দেখানো কোনো অবস্থান নিয়ে থাকে, বাংলাদেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে সেই অবস্থানে গিয়ে কোনো লাভ হবে না। আমার মনে হয়, বাংলাদেশের মানুষ ইতিমধ্যে এই সরকারের অবস্থান সস্পর্কে অবহিত আছে।”
রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়ে এই অঞ্চলের কয়েকটি ‘শক্তিশালী দেশের’ এর ভূমিকারও সমালোচনা করেন আমীর খসরু।
আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা খালেদা ইয়াসমীন, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, আবুল কালাম আজাদ, স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলনের সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।