হেফাজতে ইসলামের দাবি মেনে সুপ্রিম কোর্ট থেকে ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদের মিছিল থেকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠায় গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারকে পেটানোর হুমকি দিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতারা।
Published : 29 May 2017, 11:32 PM
সোমবার রাতে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনটির মিছিল থেকে শাহবাগে ইমরান সরকারকে অবাঞ্ছিতও ঘোষণা করা হয়।
শাহবাগে মিছিল শেষে সমাবেশে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, “এই ইমরান এইচ সরকারকে শাহবাগে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি।
“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে যেখানে ইমরান এইচ সরকার ও সনাতনকে (সংস্কৃতিকর্মী) যেখানেই দেখা হবে, সেখানে কুত্তার মতো পেটানো হবে।”
তিন বছর আগে ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বিএনপির ‘বড় নেতাদের নেড়ি কুত্তার মতো’ পেটানোর হুমকি দিয়ে সমালোচনায় পড়েছিলেন।
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান ছাত্রলীগেরই রংপুর মেডিকেল কলেজ শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি শেখ হাসিনা সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদের জামাতা।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালে শাহবাগে গণজাগরণের আন্দোলনের সূচনায় অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে এর আহ্বায়কের দায়িত্ব নেন ইমরান। শুরুতে ছাত্রলীগ এই মঞ্চের সঙ্গে থাকলেও পরে সরে যায়, এখন বাম ছাত্র সংগঠনগুলো ও কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন মঞ্চে সক্রিয়।
গণজাগরণবিরোধী হেফাজতের ‘দাবি মেনে’ পাঠ্যপুস্তকে বিভিন্ন লেখা বাদ দেওয়ার পর সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট থেকে ভাস্কর্য সরানোর দাবিকে শেখ হাসিনা সমর্থন জানানোর পর প্রতিক্রিয়া আসে মঞ্চের কর্মীদের কাছ থেকে।
গত বৃহস্পতিবার ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ইমরান বলেছিলেন, মৌলবাদীদের ‘তুষ্ট করতে নোংরা রাজনৈতিক খেলায়’ নেমেছে সরকার, ‘আখের গোছাতে ব্যবহার করছে’ ধর্মকে।
ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদে পরদিন শাহবাগে গণজাগরণের মিছিলে ‘ছি ছি হাসিনা, লজ্জায় বাঁচি না’ স্লোগান ওঠে; ওই মিছিলে ইমরান সরকার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
ওই স্লোগানের ভিডিও ফেইসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।
তার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে সোমবার রাতে মিছিল বের করেন সংগঠনটির এক দল নেতা-কর্মী।
অর্ধশত নেতা-কর্মীর ওই মিছিলে কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান রনি ও আদিত্য নন্দীও ছিলেন।
শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক রাব্বানী বলেন, “মঞ্চের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে জনসম্মুখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বিদ্রুপাত্মক স্লোগান দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মানহানি করেছেন।”
প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বিদ্রুপাত্মক স্লোগান দেওয়ায় মামলা করার হুমকিও দিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতারা।
ভাস্কর্য সরানোর পক্ষে অবস্থান জানিয়ে রাব্বানী বলেন, “পৃথিবীর কোথাও ন্যায়বিচার প্রতীক হিসেবে জাস্টিসিয়া ভাস্কর্য নেই।
“কোর্টের সামনে সেটা স্থাপন করা হয়েছে, কিন্তু জাতীয় ঈদগাহের পাশে থাকায় জামাত থেকে দেখা যায়। তাই সরানোর পরামর্শ দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। প্রধান বিচারপতি বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরিয়েছেন, সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন তিনি।”