‘সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদ, লুটপাটতন্ত্র, গণতন্ত্রহীনতা নিপাত যাক’ স্লোগানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) একাদশ কংগ্রেস শুরু হয়েছে।
Published : 28 Oct 2016, 04:21 PM
শুক্রবার বিকালে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সংগীত গেয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে কংগ্রেসের সূচনা হয়।
চার দিনের কাউন্সিলের শেষ দিন ৩১ অক্টোবর গুলিস্তানের কাজী বশির মিলনায়তনে (মহানগর নাট্যমঞ্চ) রুদ্ধদ্বার অধিবেশনে চূড়ান্ত হবে দলের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা; গঠন করা হবে নতুন নেতৃত্ব।
কংগ্রেসে যোগ দিতে শুক্রবার দুপরের আগে থেকেই হাতে লাত পতাকা নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা নেতা-কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনস্থলে জড়ো হতে শুরু করেন।
তাদের অনেকের গায়ে ছিল লাল টি-শার্ট; মাথায় লাল রঙের ক্যাপ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলন মঞ্চও তৈরি করা হয়েছে লাল কাপড়ে ঘিরে।
ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, চীন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়াসহ ১২টি দেশের কমিউনিস্ট পার্টি থেকে ২৬ জন প্রতিনিধি এবারের কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন।
কংগ্রেসের উদ্বোধনীতে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম জাতীয় পতাকা এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমদ পার্টির পতাকা উত্তোলন করেন।
পরে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে সম্মেলন মঞ্চের পাশে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন।
এবারের কংগ্রেসের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এর আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “আমরা মনে করি, বাংলাদেশের প্রধান বিপদ চারটি- সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, লুটপাটতন্ত্র ও গণতন্ত্রহীনতা।
“চার দশক ধরে আমরা এই বিপদের মধ্যে বসবাস করছি। বর্তমানে দেশে বৈষম্য বাড়ছে, ঘুষ-দুর্নীতি বাড়ছে, সাধারণ মানুষের সঙ্কট তাদের জীবনযাত্রাকে অসহনীয় করে তুলছে। গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে উন্নয়ন আগে, গণতন্ত্র পরে।”
আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন দলটির এক সময়ের জোটসঙ্গী সিপিবির সভাপতি। বিপরীতে সরকারের বিরোধিতায় বিএনপি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না বলে তার মূল্যায়ন।
“হাওয়া ভবনের কথা কেউ ভুলে যায়নি। জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়া এবং হঠকারী সন্ত্রাসী নীতি অনুসরণের ফলে জনগণ তাদের উপর আস্থা রাখতে পারছে না।
“আমরা বরাবর বলে আসছি, মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ইতিহাসের টার্নিং পয়েন্ট। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সমস্ত প্রগতিশীল শক্তির ঐক্যের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী বাম বিকল্প শক্তি গড়ে তোলা- এটাই এবার আমাদের কংগ্রেসের মূল আহ্বান,” বলেন তিনি।
সারাদেশে থেকে ৬৮৩ জন প্রতিনিধি এবারের কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে ২১৭ জন নারী এবং ১৭ জন ‘আদিবাসী’। পর্যবেক্ষক থাকবেন ১০৮ জন।
কংগ্রেস উপলক্ষে শনিবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের (২য় তলা) কনফারেন্স কক্ষে ‘সাম্রাজ্যবাদ, নয়া উদারনীতিবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদ’ বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সেমিনার হবে। কংগ্রেসে যোগ দিতে আসা বিদেশি প্রতিনিধিরা সেখানে আলোচনায় অংশ নেবেন।
পাশাপাশি শনি ও রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মহানগর নাট্যমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে।