স্থায়ী কমিটিতে স্থান না পাওয়ায় মন খারাপ বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের। চট্টগ্রামে তার সমর্থকরা বলছেন, রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়েও নিতে পারেন তিনি।
Published : 09 Aug 2016, 08:52 AM
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান নোমানকে এবারও একই পদেই রেখেছেন দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
তবে তাকে টপকে স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হয়েছে চট্টগ্রামের আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং কক্সবাজারের সালাহ উদ্দিন আহমেদকে।
আমীর খসরু আগের কমিটিতে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছিলেন। সালাহ উদ্দিন ছিলেন যুগ্ম মহাসচিব। খসরুর আগে চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি ছিলেন নোমান।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে নোমানের সঙ্গে চট্টগ্রামের দুই প্রভাবশালী নেতা সাবেক মন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও এম মোরশেদ খানও রয়েছেন। নোমানের মতো তারাও মন্ত্রী ছিলেন।
দীর্ঘদিন ধরে বিএনপিতে যুক্ত নোমানকে নতুন কমিটিতে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি বলে মনে করেন তার সমর্থকরা। তারা কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যানের পদ ছাড়তে তাকে চাপও দিচ্ছেন।
চট্টগ্রামে বিএনপির কয়েকজন নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নোমান আশা করেছিলেন তাকে স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হবে। কিন্তু শনিবার ঘোষিত কমিটিতে নিজের স্থান দেখে হতাশ তিনি।
নোমান সমর্থক এক নেতা বলেন, “নোমান ভাই অনেক ত্যাগের বিনিময়ে চট্টগ্রামে বিএনপিকে গড়ে তুলেছেন, তার অবদান সবচেয়ে বেশি। একসময় যাদেরকে তিনি হাতে ধরে রাজনীতিতে এনেছেন, তারাই এখন গুরুত্বপূর্ণ পদ পাচ্ছেন। অথচ তাকে মূল্যায়ন করা হল না।”
“তাকে অসম্মান করা হয়েছে। তার ওই পদে থাকা উচিৎ নয়। তার অনুসারীরা পদ থেকে পদত্যাগের জন্য তাকে নানাভাবে অনুরোধ করছেন,” বলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নেতা।
নোমান সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছি। প্রত্যাশা ছিল যথাযোগ্য পদ পাব। দলের নেতাকর্মীদের মতো আমারও মন কিছুটা খারাপ।”
কমিটি ঘোষণার পরপরই ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে পদত্যাগের ঘোষণা দেন মোসাদ্দেক আলী ফালু।
ভাইস চেয়ারম্যান পদ ছাড়ছেন কি না- জানতে চাইলে সরাসরি উত্তর না দিয়ে নোমান বলেন, “সমর্থক, নেতা-কর্মীরা ফোন করছে, বলছে পদ ছেড়ে দিতে। তাদের সাথে বিভিন্ন বিষয় শেয়ার করছি, ভাবছি। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছি না।”
সমর্থকদের আবেগের মূল্য রয়েছে মন্তব্য করে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক বলেন, “তাদের এখনও কিছু বলিনি, শুনছি। সব মিলিয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসব।”
তবে ঘোষিত স্থায়ী কমিটির দুটি পদ শূন্য রয়েছে। পরে তা পূরণ করা হবে বলে বিএনপি মাহসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন।
এদিকে নোমানকে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য পদে রাখার দাবি জানিয়ে চট্টগ্রামের ৫১ নেতা-কর্মী রোববার গণমাধ্যমে এক বিবৃতি পাঠিয়েছেন। দাবি পূরণ না হলে দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের বিরত রাখার হুমকিও দিয়েছেন তারা।
চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম চট্টগ্রামের আহবায়ক আবদুস সাত্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিনি (নোমান) দল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ত্যাগ শিকার করে রাজনীতি করে যাচ্ছেন। তাকে যথাযোগ্য পদ নিয়ে সম্মান করা উচিৎ ছিল।”
ভাইস চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দিতে তাকে চাপ দিচ্ছেন কি না- জানতে চাইলে সাত্তার বলেন, “তার আত্মসম্মান বোধ রয়েছে। সমর্থকদের চাপ এং অভিমান থেকে হয়ত তিনি এ কথা ভাবতে পারেন।”
ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতিতে আসা নোমান ছাত্র ইউনিয়ন, ন্যাপ (ভাসানী) হয়ে গত শতকের ৮০ এর দশকে বিএনপিতে যুক্ত হন। তার ভাই আবদুল্লাহ আল হারুন ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা।
নোমান বিভিন্ন সময়ে দলের কেন্দ্রীয় ও চট্টগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
মুক্তিযোদ্ধা নোমান চট্টগ্রাম থেকে দুই দফায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন।