বিএনপি চেয়ারপারসন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ‘জঙ্গি’ ফাইজুল্লাহ ফাহিমের জন্য ‘মায়া কান্না’ করছেন বলে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তার সমালোচনা করেছে বিএনপি।
Published : 30 Jun 2016, 03:31 PM
বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “দেশের একজন নেত্রী, তিনি (খালেদা জিয়া) কি জনগণের মনের আবেগের প্রতিধ্বনি করবেন না, তিনি কি মানুষের নিরাপত্তার কথা বলবেন না?”
মাদারীপুরে গত ১৫ জুন মাদারীপুরে সরকারি নাজিম উদ্দিন কলেজের গণিতের প্রভাষক রিপন চক্রবর্তীকে হামলার পর জনতা ফাহিমকে হাতেনাতে ধরে পুলিশে দেয়। পরে তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত। রিমান্ডে নেওয়ার পরদিন সকালে মাদারীপুরের একটি চরে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ গুলিবিদ্ধ হয়ে ফাহিম নিহত হন বলে পুলিশের দাবি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার জাতীয় সংসদে ফাহিমের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “যে লোকটা (ফাহিম) একজন কলেজ শিক্ষককে মারতে গিয়ে জনগণের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ে। তার জন্য খালেদা জিয়ার এত মায়াকান্না কেন এটা আমার প্রশ্ন?”
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের বিরুদ্ধে ফাহিমকে রিমান্ডে নিয়ে হত্যার অভিযোগ তুলে রুহুল কবির রিজভী বলেন, “এই হত্যা সাজানো বলে মানুষ বিশ্বাস করে। এটা সরকারের একটি কারসাজি বলে মানুষ বিশ্বাস করে।
“এভাবে যদি আপনার-আমার সন্তানকে, ছোট ভাইকে যদি ধরে নিয়ে হত্যা করে জঙ্গি সাজিয়ে, তখন মানুষের নিরাপত্তা থাকবে কোথায়? আমরা বলতে চাই, সেই নিরাপত্তার কথা ও মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিধ্বনি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারস বেগম খালেদা জিয়া।”
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে না নিয়ে এসে, তদন্ত না করে, বিচার না করে, বন্দুকযুদ্ধের নামে বন্দিকে দস্যুদের মতো হত্যা করে পরবর্তীতে সেই হত্যাকাণ্ড নিয়ে যখন প্রধানমন্ত্রীর মুখে মৃদুমন্দ হাসি ফুটে উঠে, সেই হাসি কি হায়েনার হাসি নয়?”
হেফাজতে থাকা বন্দিদের মৃত্যুর বিচার করার আশ্বাস দিয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত সরকারি বন্দিশালায় কোনো বন্দিকে হত্যা করা হলে তার জন্য সম্পূর্ণরূপে এই সরকার দায়ী। মানুষের খুনের অভিযোগে সরকারের নির্দেশদাতা ও সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হবেই, এটা দেশ ও বিদেশের সর্বস্বীকৃত বিধান।”
সম্প্রতি এক ইফতার অনুষ্ঠানে ঢাকার উত্তরার কলেজছাত্র ফাহিমকে হত্যার অভিযোগ তুলে ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর ‘সম্পৃক্ততার’ অভিযোগও তোলেন খালেদা জিয়া।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাম্প্রতিক বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন এবং জঙ্গি মোকাবেলায় সরকারের আগ্রহ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন দলের জ্যেষ্ঠ এই যুগ্ম মহাসচিব।
“সারা দেশে বছরব্যাপী যে চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তার কোনোটিতেও সুনির্দিষ্টভাবে কোনো হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি সরকার। প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ড এখন পর্যন্ত রহস্যঘেরা। জঙ্গিবাদ নেটওয়ার্ক উচ্ছেদে সরকার অনাগ্রহী বলেই জঙ্গিরা নির্বিঘ্নে তাদের অপতৎপরতা চালু রেখেছে।”
রিজভী বলেন, তারা মনে করেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলকে জঙ্গিবাদে যুক্ত করতেই সরকার ‘নিজে জঙ্গি সৃষ্টি করে’ দেশব্যাপী খুনোখুনি করাচ্ছে।
“সরকার তার অবৈধ স্বত্ত্বা নিয়ে উদ্বিগ্ন বলেই কখন কী ঘটে যায়- এই আশঙ্কায় সবসময় একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখতে চায়। নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতা সরকারের টিকে থাকার গ্যারান্টি।”
রাজধানীর সবুজবাগের বৌদ্ধবিহারের প্রধানকে হত্যার হুমকিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে তার যথাযথ নিরাপত্তার দাবিও জানান তিনি। ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিবের জামিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নিন্দাও জানান বিএনপির এই নেতা।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভীর পাশে অন্যদের মধ্যে ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবীর খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ ও সেলিমুজ্জামান সেলিম।