মাদারীপুরে কলেজ শিক্ষক হত্যাচেষ্টার সময় ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তারের পর ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত গোলাম ফাইজুল্লাহ ফাহিম ‘শিবিরকর্মী’জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যায় কারা জড়িত তা স্পষ্ট হয়ে গেছে।
Published : 18 Jun 2016, 10:28 PM
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক ইফতার অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আজকের যে গুপ্তহত্যাগুলি; আমরা বলেছিলাম- আমাদের কাছে তথ্য আছে, আজকে যা আপনাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে।
“মাদারীপুরে প্রভাষক রিপনকে হত্যার জন্য যে চেষ্টা করলো, আপনারা নিজেরাই দেখেছেন, সে একজন শিবিরের কর্মী। কাজেই এই গুপ্তহত্যাগুলি যে সুপরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে, আমার মনে হয় এই ঘটনার পর কারো কোনো সন্দেহ থাকা উচিৎ নয়।”
গত বুধবার সরকারি নাজিম উদ্দিন কলেজের গণিতের শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীর উপর হামলার সময় ঘটনাস্থল থেকে ফাহিমকে ধরে পুলিশে দেয় জনতা। রিমান্ডে থাকা অবস্থায় শনিবার সকালে পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন তিনি।
গুপ্তহত্যা বন্ধ এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা প্রকাশ্যে মানুষ মেরেছিল, জনগণ তাদের প্রতিহত করেছে। আর এখানে কিন্তু রিপনকে যারা আঘাত করেছে তাকে কিন্তু জনগণই ধরেছে।
সাংবাদিকদেরও সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশের মাটিতে ‘কোনো রকম’ সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের স্থান নাই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “হুমকি ধমকি যতই দেওয়া হোক না কেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে, বিচার হবে এবং দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে।”
শেখ হাসিনা জানান, তার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিককেও হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধী ও ‘আগুন সন্ত্রাসে’ জড়িতদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এরা কিন্তু থেমে নাই। আপনারা দেখেছেন টিউলিপকে একেবারে লিখিত চিঠি দিয়ে এবং সে চিঠির ভাষা এরকম; যে তোর নানাকে হত্যা করেছি, তোকে তোর মা-খালাসহ হত্যা করব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই ভাষা শুনে আমার মনে পড়ছে বিএনপির নেত্রী কিছুদিন আগেই বলেছিল যে, হাসিনামুক্ত বাংলাদেশ চাই। এর অর্থটা কী? মানে আমাকেও খুন করতে চায়।”
যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘হত্যার উদ্দেশ্যে’ এফবিআই এজেন্টকে ঘুষ দেওয়ার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “লন্ডনে বসে এই যে হুমকিটা দেওয়া। এক কুলাঙ্গার সেখানে বসে আছেন। ব্রিটিশ সরকার তাকে কেন সেখানে জায়গা দিয়েছেন জানি না।”
আহসানউল্লাহ মাস্টার ও শাহ এমএস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডে ‘বিএনপির সম্পৃক্ততার’ কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “যাদের চরিত্র এমপি হত্যা করা, মানুষ হত্যা করা, প্রকাশ্য আগুনে পুড়িয়ে মারা, গুপ্তহত্যা করা; লন্ডনে ব্রিটিশ সরকার যাকে বসিয়ে রেখেছেন আদর দিয়ে, সে যাবার পরেও কিন্তু তাদের ওখানে এমপি হত্যা হচ্ছে, আজকে টিউলিপ হুমকি পাচ্ছে।
“আমি আশা করি যে, ব্রিটিশ সরকার এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন।”
বক্তব্যে সাংবাদিকদের বিভিন্ন বিষয় নিয়েও কথা বলেন তিনি।
সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ভোগ করার পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি তাদের দায়িত্বশীলতার কথাও মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
সাংবাদিকদের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
সাংবাদিকতার নীতিমালা নিয়ে তিনি বলেন, “পৃথিবীর সব দেশেই একটা নীতিমালার ভিত্তিতে চলে। আপনারা যদি কেউ মনে করেন এটা সাংবাদিকতা নিয়ন্ত্রণের জন্য; তা কিন্তু নয়। একটা নীতিমালার ভিত্তিতেই কিন্তু চলতে হয়।
“কয়েক দিন আগে আপনারা দেখেছেন, বিবিসিও এক তথ্য প্রকাশ করে দিল যার কোনো ভিত্তি ছিল না, ভিত্তিহীন। কিন্তু একটা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নামকরা মিডিয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটবে বা এ ধরনের প্রচার করবে এটা আমাদের কাছে কখনোই কাম্য ছিল না।”
টেলিভিশন টকশোতে সরকারের সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় সমালোচনা দরকার। তবে সেই সমালোচনাটাও যেন গঠনমূলক হয়, নিয়ম-নীতিভিত্তিক হয়, সমাজের কল্যাণের ওপর ভিত্তি করে হয়। অসংলগ্ন যেন না হয় অবশ্যই সে বিষয়ে সকলকে দৃষ্টি দিতে হবে।”
সাংবাদিকদের জন্য নবম ওয়েজ বোর্ডের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখন নবম ওয়েজ বোর্ডের কথা আপনারা বলেছেন। অবশ্যই এটা মালিকদের সঙ্গে কথা বলতে হবে যেন নবম ওয়েজ বোর্ড ঘোষণা করা হয়। মন্ত্রী এখানে আছেন। আমি অনুরোধ করব এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে।”
প্রেসক্লাবে দৃষ্টিনন্দন, সুন্দর ও আধুনিক একটি বহুতল ভবন হবে বলে আশা করেন তিনি।
ইফতার অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাফর ওয়াজেদ, সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, ডিইউজে সভাপতি শাবান মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী বক্তব্য দেন।
ইফতারের পর সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী।