নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় সমালোচিত সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানকে প্রতিবাদের ভাষা বোঝার পরামর্শ দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ‘লজ্জা থাকলে’ জাতীয় পার্টির ওই এমপি সংসদ অধিবেশনে যোগ দেবেন না।
Published : 22 May 2016, 03:25 PM
লাঞ্ছিত শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে দেখতে রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম।
১৪ দলের এই মুখপাত্র বলেন, “শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় যে ধরনের প্রতিবাদ হয়েছে, সেই ভাষা তাদের বোঝা উচিত। আমি মনে করি, তারা নৈতিকভাবে পরাজিত হয়েছে। ওই সংসদ সদস্যের যদি সামান্যতম লজ্জা থাকে, তাহলে তিনি অধিবেশনে যোগ দেবেন না।”
ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে একদল লোক গত ১৩ মে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে মারধর করে। পরে তাকে কান ধরিয়ে উঠ-বস করান প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সদস্য সেলিম ওসমান।
স্কুলের পরিচালনা পর্ষদ শিক্ষক শ্যামলকে সাময়িক বরখাস্ত করলেও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি জানিয়ে স্কুলের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়; পুনর্বহাল করা হয় ওই শিক্ষককে।
শিক্ষক ও আইনজীবীরা ওই ঘটনার জন্য সেলিম ওসমানসহ জড়িতদের ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন; সমালোচনা করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারাও।
সাংসদ সেলিম ওসমানসহ যাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে একটি একটি রুলও জারি করেছে হাই কোর্ট।
সেলিম ওসমান অবশ্য বলেছেন, ফাঁসি হলেও ওই ঘটনার জন্য তিনি ক্ষমা চাইবেন না। সংবাদ সম্মেলন করে এই সংসদ সদস্য দাবি করেছেন, শ্যামলকে তিনি ‘কান ধরাননি’, শিক্ষক নিজেই ধরেছেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নাসিম বলেন, “শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এ জন্য সংসদ সদস্যের ক্ষমা চাওয়া উচিত। এই ধরণের ঘটনার মাধ্যমে তিনি সকল সংসদ সদস্যকে অপমান করেছেন।”
২০১৪ সালের এপ্রিলে নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর তার ভাই সেলিম নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজেরও সভাপতি।
জাতীয় পার্টিকে দলীয় এই সাংসদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে নাসিম বলেন, “তিনি (সেলিম ওসমান) জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য।জাতীয় পার্টিরও দায়িত্ব রয়েছে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার।”
চিকিৎসাধীন এই শিক্ষককে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে জানালে সাবেক এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যারা এই ধরণের ঘটনা ঘটায় তারা মানবতার শত্রু। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার কথা বলেছি। এবিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমাদের অবস্থান কঠোর।”
শ্যামল কান্তি শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “তবে লাঞ্ছনার শিকার হওয়া একজন শিক্ষক মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। আমরা উনার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছি।উনি যতদিন চান এখানে চিকিৎসা নিতে পারবেন। এজন্য তাকে কোনো খরচ দিতে হবে না।”