চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
Published : 07 May 2016, 06:55 PM
শনিবার ৭০৩ ইউপির ভোটের পর ঢাকায় নির্বাচন কমিশন (ইসি) কার্যালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে আধ ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, “নির্বাচনের নামে যা ঘটছে তাতে মানুষ নির্বাচন শব্দটা আর বেশি সম্মানের সঙ্গে নেবে না। নির্বাচন যদি গ্রহণযোগ্য না হয়, তার যথাযোগ্য পরিচিতি হারিয়ে ফেলে, নির্বাচনে এখন যা ঘটছে তাতে নির্বাচনের পদবঞ্চনা হয়; তাহলে মানুষ নির্বাচনের কথা এরপর শুনতে চাইবে না।”
নজরুল ইসলাম খান বলেন, প্রথম দফা থেকে চার ধাপের ভোট পর্যন্ত নানা অভিযোগ দেওয়ার পরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি; বরং অবনতি হয়েছে।
“সেই কেন্দ্র দখল, ভয়ভীতি প্রদর্শন, জোরজবরদস্তি করে ফল নিজেদের পক্ষে আনা- সবাই অব্যাহত রয়েছে। সিইসিকে আমরা বরাবরের মতো একই কথা বলে এসেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সিইসির আশ্বাসের পর পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে।”
‘সঠিক নির্বাচনী ব্যবস্থা’ ও গণতন্ত্রকে ‘টিকিয়ে রাখতে’ বিএনপি কাজ করে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে গ্রহণযোগ্য রাখতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যাতে মানুষ গণতন্ত্র ও নির্বাচনের বিষয়ে আস্থা স্থাপন করতে পারে। চার ধাপের ভোটের পরও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত দলীয়ভাবে হবে।”
ছয় ধাপের এ ভোটের জন্য গত ১১ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপের তফসিল ঘোষণা হয়। ৪ জুন ষষ্ঠ ধাপের ভোটের মধ্য দিয়ে এ নির্বাচন শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।
স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে তৃণমূলের এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে।
তফসিল ঘোষণার পর শনিবারের ভোটের আগ পর্যন্ত ৭০ জনেরও বেশি লোকের প্রাণহানি হয়; শনিবার ভোট নিয়ে আরও দুই জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
‘জাল ভোটের মহোৎসব চলেছে’
চতুর্থ ধাপের এই ভোটের পর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনেও ‘নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংসের’ একই ধরনের অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “ক্ষমতাসীনদের জাল ভোটের মহোৎসবে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা আজ মহাশ্মশানে পরিণত হয়েছে। যারা এই নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে তাদেরকেই সহায়তা করে এসেছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন।
“কমিশনের কর্মকর্তারা লাজ লজ্জাহীন এক উদ্ভট প্রাণীতে পরিণত হয়েছে। প্রাণহানিতে তাদের বিকার নেই, শাসক দলের ক্যাডারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনে তারা নিশ্চুপ থাকে।”
এক প্রশ্নের জবাবে রিজভী চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, “যদি স্বচ্ছ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতো, আমি আপনাদের চ্যালেঞ্জ করে বলছি, ৯০ শতাংশ ইউপি চেয়ারম্যান পেত বিএনপি। … যেখানে এক একটি ধাপে ছয়শতের বেশি ইউপিতে নির্বাচন হয়েছে, সেখানে হয়ত বিএনপি বড়জোর ১৫-২০টা পেয়েছে। এটা কী সেই দল ২০টা ইউপি চেয়ারম্যান পায়?”
জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র ও আওয়ামী ক্যাডাররা ভোটাধিকার হরণ করেছে, কেড়ে নিয়েছে, এটা তারই ফলাফল। এটা জনগণের রায়ের সঠিক প্রতিফলন নয়।”
সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লা, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, ফরিদপুর, ঝিনাইদহ, শরীয়তপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, মাগুরা, মুন্সীগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, নাটোর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, টাঙ্গাইল, পাবনা ও ঢাকার বিভিন্ন ইউনিয়নের নির্বাচনী সহিংসতা, ভোটকেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের চিত্র তুলে ধরেন রিজভী।
“বরাবরের মতোই চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের কর্তৃক লাইন ধরে নৌকা প্রতীকে সিল মারা, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, ব্যাপক জাল ভোট প্রদান, বিএনপির এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া, ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়া ও নিরুপায় হয়ে ভোট বর্জনের ঘোষণা ও বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অস্ত্রে মহাড়ার ঘটনা ঘটেছে।
“এবারও সকাল ৮টায় ভোট শুরু হওয়ার কথা থাকলেও অনেক জায়গায় ভোট শুরু হয়ে যায় আগের রাতেই। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা অসংখ্য কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট প্রদানের মহোৎসব চালিয়েছে।”
আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলেছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, “এই ব্যবস্থা যদি অব্যাহত থাকে সমানের যে কোনো নির্বাচনই আওয়ামী লীগের ঘরোয়া অনুষ্ঠানে পরিণত হবে।
“ভোটারবিহীন সরকার গায়ের জোরে পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাকেই তাদের অনুকুলে নিয়ে নিয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই- শেখ হাসিনার কেন্দ্রীভূত নির্দয় স্বৈরশাসন ও একদলীয় শাসন ব্যবস্থার ভিত্তিভূমি তৈরি করা।”
চতুর্থ ধাপের ১০৯ ইউপিতে বিএনপির প্রার্থী না থাকার জন্য নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বলেন, “গণতন্ত্র হত্যার জল্লাদ হিসেবে এদের নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে।
“মানুষের ভোটাধিকার দুর্বিনীত শাসক দলের অনুকুলে হরণ করতে সহায়তা করার জন্য এই কমিশনের পদাধিকারীরা দেশবাসীর কাছে দুষ্কৃতিকারী হিসেবেই গণ্য হবেন।”
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হারুনুর রশীদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা শরীফ জামাল হীরু ও আ ক ম মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন।