জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ লোপাটের ঘটনায় গভর্নরের ব্যাখ্যা দাবি করেছে বিএনপি।
Published : 11 Mar 2016, 10:26 PM
শুক্রবার রাতে ঢাকায় এক আলোচনা সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮০০ কোটি টাকা হ্যাকড হয়ে গেছে; সেটা ফিলিপাইনের পত্রিকায় এসেছে, আমাদের পত্রিকাও খবরটি এসেছে।
“বাংলাদেশ ব্যাংক কিন্তু এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দেয়নি। এই বিষয়ে কোনো বক্তব্য না দিয়ে গভর্নর ভারতে চলে গেলেন। গভর্নরের কাছে অবশ্যই এই জাতি দাবি করছে, তাদেরকে এ বিষয়ে একটা সঠিক ব্যাখ্যা দিতে হবে।”
গত মাসে সুইফট (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন) মেসেজিং সিস্টেমে জালিয়াতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে ভুয়া নির্দেশনা পাঠিয়ে বাংলাদেশের প্রায় এক বিলিয়ন টাকা সরানোর চেষ্টা হয়।
এর মধ্যে ৮১ মিলিয়ন ডলার যায় ফিলিপিন্সের একটি ব্যাংকের পাঁচ অ্যাকাউন্টে। এছাড়া আরেক ভুয়া আদেশে শ্রীলঙ্কার একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর অ্যাকাউন্টে ২০ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হলেও বানান ভুলে সন্দেহ জাগায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়।
চীনা হ্যাকাররা এই সুইফট সিস্টেমে জালিয়াতির মাধ্যমে এই কাণ্ড ঘটায় বলে ফিলিপিন্সের সংবাদপত্র ‘দি ফিলিপিন্স ডেইলি ইনকোয়ারার’ প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
জনগণের টাকা এভাবে লোপাট ঠেকাতে না পারায় নৈতিক অবস্থান বিবেচনায় অর্থমন্ত্রী ও গভর্নরের পদত্যাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, “তাদের ( কেন্দ্রীয় ব্যাংক) উচিৎ, এটা নৈতিকতা দাবি করে, এটা মোরালিটি ডিমান্ড করে . . . মানুষের টাকা বিশেষ করে আমাদের যারা বিদেশে চাকরি করে, তারা ঘাম ফেলে যে অর্থ উপার্জন করে- সেই টাকা হ্যাকড হয়েছে। আজকের পত্রিকায় বলা হয়েছে, এটা জালিয়াতি হয়েছে, চুরি হয়েছে।’
“গ্রাউন্ড অব মোরালিটি ডিমান্ড করে হি সুড রিজাইনড। কারণ ৮০০ কোটি টাকা জালিয়াতি হয়েছে। ঠিক একইভাবে অর্থমন্ত্রী ঘটনা জানতেন না, যা আরও এক মাস আগে হয়েছে। তারও না জানার জন্য পদত্যাগ করা উচিৎ।”
ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি রেস্তোরাঁয় ‘রাজনীতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা ও অবদান’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘জিয়া সাইবার ফোর্স’ নামে একটি সংগঠন। এতে ‘মেধাবী’ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের সন্মাননাও দেওয়া হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রশংসা করে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, “যখন আমরা পত্র-পত্রিকার সত্য কথা পাই না, যখন আমরা পত্র-পত্রিকায় গণতন্ত্রের কথা পাই না, যখন পত্র-পত্রিকায় মানুষের অধিকারের বিষয়গুলো ঠিক সেইভাবে উঠে আসে না- তখন সোশাল মিডিয়াতে অনলাইনে সব তথ্য ও সত্য কথাগুলো আমরা জানতে পাই।”
“সেজন্যই গোটা পৃথিবীতে এই সোশাল মিডিয়া ও অনলাইন অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে; বদলে দিচ্ছে রাষ্ট্রকে, বদলে দিচ্ছে সমাজকে।”
দেশ, মানুষ ও গণতন্ত্রের জন্য কাজ করতে গিয়ে তরুণদের ‘দায়িত্বশীলতার’ পরিচয় দেওয়ার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, “এমন কিছু করা যাবে না যেখানে দেশের ক্ষতি হতে পারে, মানুষের ক্ষতি হতে পারে, গণতন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে। দেশকে সুন্দর করে গড়ে তোলবার জন্য এই মিডিয়াকে (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম) কাজে লাগতে হবে।”
দেশের অর্থনীতির অবস্থা প্রসঙ্গে এই বিএনপি নেতা বলেন, “আজ ৮০০ কোটি, চার হাজার কোটি বা পাঁচ হাজার কোটি লুট হলেও এখানে কিছু হয় না। এখন লুটপাট এমন একটা পর্যায় চলে গেছে, মানুষের বোধ নেই।
“আমাদের ব্যাংকের এটিম কার্ড থেকে টাকা চুরি হয়ে যাচ্ছে। আজ নিরাপত্তা কোখায়? আজ সম্পত্তির নিরাপত্তা, জীবনের নিরাপত্তা কোথাও নেই। গণতন্ত্র নেই, সেই কারণে কারোই কোনো নিরাপত্তা নেই।”
এই অবস্থার মধ্যে বর্তমান সরকার প্রতি মুহূর্তে গণতন্ত্র ও উন্নয়ন নিয়ে গলাবাজি করছে বলে মন্তব্য করে ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে’ খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব সংগ্রামে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক শফিক রেহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন, রুহুল কবির রিজভী, অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, ছাত্রদলের সহসভাপতি এজমল হোসেন পাইলটসহ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা বক্তব্য রাখেন।