এক-এগারোর কুশীলবদের আওয়ামী লীগ সরকার বিচার না করে পুরস্কৃত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ।
Published : 11 Jan 2016, 04:58 PM
সোমবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “যারা এক-এগারো সংঘটিত করেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, জনগণের ওপর অন্যায়-অত্যাচার করেছে, তাদের বিচার করতে হবে।
“আওয়ামী লীগ সরকার তাদের বিচার তো করেইনি, বরং তাদের অনেককে পুরস্কৃত করেছে।”
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ এই দিনটিতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিএনপি সমর্থক সংগঠন স্বাধীনতা ফোরাম আয়োজিত এক আলোচনা সভায় একথা বলেন হান্নান শাহ।
২০০৬ সালের শেষে দিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের মেয়াদ ফুরোনোর পর রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিলে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ।
দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের সহিংস অবস্থানের মধ্যে সেনা হস্তক্ষেপে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি করেন ইয়াজউদ্দিন। ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়।
এরপর দুই বছর ক্ষমতায় ছিল সেনা নিয়ন্ত্রিত ওই সরকার। রাজনৈতিক দল ভাঙার নানা চেষ্টার মধ্যে দুই প্রধান নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে বন্দি করা হয়।
আট বছর পর এই দিনটি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি।
স্বাধীনতা ফোরামের আলোচনায় হান্নান শাহ বলেন, “এক-এগারোর ষড়যন্ত্র ছিল, যাতে এদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন না হয়। মিথ্যা অভিযোগ এনে রাজনীতিবিদদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা হয়েছে, অনেকটা সফলও তারা।”
এক-এগারোকে ‘আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল’ মন্তব্য করলেও সাবেক এই সামরিক কর্মকর্তা মনে করেন, পরিস্থিতির জন্য বিএনপিও দায় এড়াতে পারে না।
“আমি যদি প্রশ্ন করি, দুর্নীতির অভিযোগ এনে যে তালিকাটি ওই সময়ে করা হয়েছিল, তা কখন বানানো হয়েছিল, কারা বানিয়েছিল? বিএনপি কি সেই দায়িত্ব এড়াতে পারবে? আমার ঘরে চুরি, আমি সজাগ থেকেও না দেখি- তাহলে আমি কোন পর্যায়ে পড়ি- একটু চিন্তা করেন।”
এক-এগারোর প্রেক্ষাপট তৈরির পেছনে সাবেক সামরিক শাসক ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ও তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী তৎপর ছিলেন বলেও দাবি করেন হান্নান শাহ।
ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে চার উপদেষ্টার পদত্যাগকেও ‘ষড়যন্ত্রের’ অংশ মনে করেন তিনি।
“আওয়ামী লীগের সমর্থিত উপদেষ্টারা সবুজ সংকেত পেয়ে পদত্যাগ করেছিলেন, মি. সামী (শফি সামী), অমুক-তমুক সবাই। তারপরও বিএনপি বুঝে নাই একটা ষড়যন্ত্র বা দুর্যোগ আসতেছে। কিন্তু আমি বুঝেছিলাম।”
চারদলীয় জোট সরকারের মেয়াদ শেষের দিন ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরে পল্টনে সহিংসতায়ও ‘বিশেষ গোয়েন্দা বাহিনী’র হাত ছিল বলে দাবি করেন বিএনপি নেতা।
“এসব ছিল ষড়যন্ত্রের অংশ। ১/১১ এর আগে মাঠে-ময়দানে সেনাবাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্ত হল। প্রেসিডেন্ট সাহেব সই করে দিলেন। উনার উপর চাপ আসলো, ফট করে সেই আদেশটি তারা বাতিল করে দিলেন। বিএনপির উচিত ছিল বলা, দেশের পরিস্থিতি খারাপ, সেনাবাহিনী রাখেন। আমাদের দলের তরফ থেকে কোনো বক্তব্য আসলো না। আওয়ামী লীগ আরো উৎসাহিত হল। যারা এই অপকর্মটি করলো, তারা দেশে-বিদেশে আরও উৎসাহিত হলেন। তারিখটা নির্ধারণ করা হলো ১১ জানুয়ারি।”
ফখরুদ্দীন সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগের যে ক’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তা লোকদেখানো ছিল বলে দাবি করেন ওই সময় গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করে আসা হান্নান শাহ।
অবসরপ্রাপ্ত এই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বলেন, “১/১১ ষড়যন্ত্র কোথায় হলো, ক্যান্টনমেন্টে কোথায় হল, ক্যান্টনমেন্টের বাইরে কোথায় হল- অনেক কিছু জানি।
“একটা বড় রাজনৈতিক দলের সমর্থন ছিল। সেটা কারা, আপনারা নিশ্চয়ই জানেন। যারা বলেছিল, তাদের আন্দোলনের ফসল। তাদের সমর্থন আর তথাকথিত সেনা সমর্থিক ফখরুদ্দীন- মইনউদ্দিনের (মইন উ আহমেদ) সমর্থন।”
“আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, এক-এগারোর সঙ্গে জড়িতদের আজকে হোক, কালকে হোক- তাদের বিচার করতে হবে। এখানে বিএনপির যারা নবীন নেতা আছেন, আপনাদের বলে যাব- দয়া করে বিচার একদিন আপনারা করবেন,” আহ্বান জানান তিনি।
দেশ ছাড়ার ‘প্রস্ততি ছিল’ খালেদার
জরুরি অবস্থার সময় কী ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন, তাও তুলে ধরেন সামরিক বাহিনী থেকে এসে রাজনীতিতে নামা হান্নান শাহ।
আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের নেতাদের কাছে গিয়ে বিফল হয়েছিলেন দাবি করে তিনি বলেন, “যখন চারদিকে অন্ধকার দেখছি, তখন ভাবলাম, এই জীবন বেঁচে থেকে লাভ কী?”
ওই সময় কীভাবে গণমাধ্যমের সামনে এসে খালেদা জিয়ার পক্ষে কথা বললেন, তাও বলেন তখন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে থাকা হান্নান শাহ।
ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মইনুল সড়কে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সস্ত্রীক সাক্ষাতের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “দেখার এক পর্যায়ে বেগম জিয়া আমাকে বললেন, আমাকে না কি লোকজন চায় না, দল চায় না। আমি বললাম, ম্যাডাম ১০০% মিথ্যা কথা বলেছে। কে বলেছে?
“তিনি বললেন, ডিজিএফআইয়ের অমুক মেজর অমুক মেজর জেনারেল এসেছিল। ভুঁইয়া অ্যান্ড কোম্পানি। ডিজিএফআইয়ের লোকজন এসে বলেছে, ম্যাডাম আপনাকে লোকজন চায় না, আপনি বরং বাইরে চলে যান। সেই অনুযায়ী উনি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। এক পাশে সুটকেসগুলো রাখা। খুবই ব্যথা লাগল। আফটার অল উনি আমার নেত্রী। প্রেসিডেন্ট জিয়ার স্ত্রী।”
“দৃশ্যটা না দেখলে আপনারা কল্পনা করতে পারবেন না। লাস্টলি আমি ম্যাডামকে বললাম- আপনি কী ঠিক করেছেন, যাবেন? উনি বললেন, ৪৫ বছরের সংসার, এটা ছেড়ে কে যেতে চায়। আমি তো ক্লু পেয়ে গেলাম। আমি ম্যাডামকে বললাম, আপনার মনে অবস্থা বুঝি। আপনার মনের কথাটা আমি দলের নেতা-কর্মীদের তথা দেশের মানুষকে জানিয়ে দিই।”