মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মন্তব্যের প্রতিবাদে তার বাসা ঘেরাও করতে গিয়ে পুলিশের বাধায় গুলশান দুই নম্বর মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রগতিশীল বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
Published : 29 Dec 2015, 11:57 AM
আগের ঘোষণা অনুযায়ী মঙ্গলবার সকালে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা গুলশান ২ নম্বরে অবস্থান নেন। সেখানে তারা খালেদা জিয়ার শাস্তি এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বক্তব্য বন্ধে সংসদের আগামী অধিবেশনেই আইন করার দাবি জানান।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ও একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ‘অবমাননাকর’ বক্তব্যেরও নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তারা।
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, বেলা ১১টার দিকে গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বরে জড়ো হয়ে সেখানে আধা ঘণ্টা বিক্ষোভ প্রদর্শন ও মানববন্ধন করেন বিপুল সংখ্যক মানুষ।
এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে মুক্তিযোদ্ধা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা অনেক পুরনো এবং যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতের পাশাপাশি বাংলাদশের মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক ইতিহাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন দেশের অন্যতম শীর্ষ একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির শহীদের সংখ্যা নিয়ে মন্তব্যের জন্য খালেদা জিয়াকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করারও দাবি জানান তিনি।
যতদ্রুত সম্ভব 'গণহত্যা অস্বীকার অপরাধ আইন' প্রণয়নের দাবি জানিয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপের আদলে ‘জেনোসাইড ডিনায়াল ল’ করার দাবি জানিয়ে আসছি। সেই আইনটি করা হলে মু্ক্তিযুদ্ধে নিয়ে এই রকম বিভ্রান্তিকর ও বিকৃত মন্তব্য করার সাহস কেউ পেতো না।”
গত ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের এক আলোচনা সভায় খালেদা মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, “আজকে বলা হয়, এতো লক্ষ লোক শহীদ হয়েছেন। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে যে আসলে কত লক্ষ লোক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। নানা বই-কিতাবে নানারকম তথ্য আছে।”
এরপর ২৫ ডিসেম্বর খালেদার ওই বক্তব্যে সমর্থন জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা জরিপ করে দেখতে বলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। একাত্তরে শহীদ বুদ্ধিজীবীরা ‘নির্বোধের মতো মরেছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তাদের এই বক্তব্যের পর তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। বক্তব্য প্রত্যাহার করে খালেদাকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। এক আইনজীবী উকিল নোটিস পাঠিয়ে বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিতে বলেন এবং খালেদার নামে আদালতে দুটি মামলাও করা হয়।
পরে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ফেইসবুকে এক পোস্টে খালেদা জিয়ার বাড়ির সামনে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তার ‘বিতর্কিত বক্তব্যের’ প্রতিবাদ জানাতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
খালেদার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার করার দাবি জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, “তার (খালেদা) বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল। যেখানে সংবিধানে ত্রিশ লাখ শহীদের বিষয়টি স্বীকৃত, সেখানে তিনি এর সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন, এর অর্থ কী দাঁড়াচ্ছে?”
ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, “খালেদা জিয়া ও তার দলের নেতারা ক্রমাগতভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বিভ্রান্তিকর কথা বলেছেন। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের অপমান করছেন। আমরা বাংলাদেশের কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষই এটা মেনে নিতে পারি না।”
'খুব শিগগিরই' জাতীয় সংসদে ‘মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার অপরাধ আইন’ প্রণয়নের প্রস্তাব করা হবে, যাতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যারা বিভ্রান্তিকর তথ্য দেবেন বা কথা বলবেন তাদের আইনের আওতায় আনার বিষয় থাকবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “খুব শিগগিরই জাতীয় সংসদে ‘মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার অপরাধ আইন’ প্রণয়নের প্রস্তাব করা হবে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যারা বিভ্রান্তিকর তথ্য দেবেন বা কথা বলবেন তাদের আইনের আওতায় আনার বিষয় এখানে থাকবে।”
শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কাজী মুকুলসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা মঙ্গলবারের এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
দুই এক দিনের মধ্যে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে অবস্থান কর্মসুচি থেকে জানান বক্তারা।
গুলশান থানার পরির্দশক ফিরোজ করিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শান্তিপূর্ণভাবেই ওই কর্মসূচি হয়েছে। অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা সেখানে ঘটেনি।