প্রতি পৌরসভায় একটি রাজনৈতিক দলের এক লাখ টাকা করে ব্যয়ের সুযোগ রেখে পৌরসভা নির্বাচন বিধিমালা সংশোধন করছে নির্বাচন কমিশন।
Published : 04 Nov 2015, 11:32 AM
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার নির্বাচন কমিশরার এ সংক্রান্ত খসড়া অনুমোদনের পর বুধবারই তা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন ইসির যুগ্ম সচিব জেসমিন টুলী।
এই বিধিমালা কার্যকর হলে পৌর নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হলে মেয়র পদে ৪০০ এবং কাউন্সিলর পদে ৫০ জন ভোটারের সমর্থনযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
জেসমিন টুলী বলেন, “মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পলে নির্বাচন বিধিমালা, আচরণ বিধিমালা ও সমর্থন যাচাই বিধিমালা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করবে ইসি।”
এই প্রথমবারের মতো স্থানীয় সরকারের পৌরসভা নির্বাচন হতে যাচ্ছে দলীয় মনোনয়নের ভিত্তিতে। সে অনুযায়ী দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন, দলীয় ব্যয়, স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নসহ বেশ কিছু বিষয়ে সংশোধনী আনা হচ্ছে এই বিধিমালায়।
জেসমিন টুলী জানান, প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় বিদ্যমান বিধিমালায় ঠিক করে দেওয়া আছে। এবার দলভিত্তিক ভোট হবে বলে দলীয় নির্বাচনী ব্যয়ের সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে।
কোনো নিবন্ধিত দল পৌর নির্বাচনে মেয়র বা কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দিলে সব মিলিয়ে প্রতি পৌরসভায় এক লাখ টাকার বেশি ব্যয় করতে পারবে না।
কোনো দল ভোটের খরচ মেটাতে অনুদান নিলে ২০ হাজার টাকার বেশি চেক নিতে পারবে না। দলের ক্ষেত্রে এসব বিধি লঙ্ঘন হলে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানারও বিধান রাখা হয়েছে।
সব ঠিক থাকলে আসছে ডিসেম্বরে দেশের তিন শতাধিক পৌরসভার মধ্যে আড়াইশ পৌর এলাকায় ভোট আয়োজন করবে ইসি।
সংশোধিত বিধি কার্যকর হলে দল মনোনীত প্রার্থীদের ক্ষেত্রে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা সম মর্যাদার ও ক্ষমতাপ্রাপ্ত কার্যনির্বাহকের স্বাক্ষরসহ প্রত্যয়নপত্র দিতে হবে। রিটার্নিং অফিসারের পাশাপাশি ইসি সচিবালয়েও দলীয় মনোনয়নের কপি পাঠাতে হবে।
এক দলের পক্ষে একাধিক মনোনয়নের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে একই প্রস্তাবক-সমর্থক দিয়ে কোনো প্রার্থীর একাধিক মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে রাখা হয়েছে বিধিনিষেধ।
কোনো দল প্রাথমিকভাবে একাধিক প্রার্থীকে এক পদে মনোনয়ন দিলেও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত দলীয় প্রার্থিতা নিশ্চিত না করলে তাও বাতিল হয়ে যাবে।
স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিষয়ে ইসির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মেয়র পদে সংশ্লিষ্ট পৌরসভার ৪০০ জন ভোটারের সমর্থন এবং সংরক্ষিত ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৫০ জনের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা দিতে হবে। তবে আগে নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে সমর্থনযুক্ত তালিকা দিতে হবে না।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, সংসদের মতো স্থানীয় নির্বাচনেও এ বিধানে আটকে যাবে মনোনয়নের বাইরে আগ্রহী ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীরা।
সিটি করপোরেশনের মতো পৌরসভার নির্বাচনেও সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তি হিসেবে সংসদ সদস্য বা সিটি মেয়র প্রচারণায় অংশ না নিতে পারবেন না।
এরপরেই আইনমন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের জন্য বিধিমালার সংশোধন পাঠানো হয়। দলগুলোর কাছে ইসির খসড়া পাঠানোর বিষয়টিতে ইসির সম্মতি মিললে বৃহস্পতিবারই তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। ভেটিংয়ে ইসির সংশোধনী প্রস্তাবে কাটছাঁটও হতে পারে। মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পেলে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করবে ইসি।
প্রস্তাবিত বিধিমালা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে কিনা জানতে চাইলে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফৈার ডটকমকে বলেন, “আইনমন্ত্রণালয়ে পাঠাব। তবে রাজনৈদিক দলের কাছে পাঠানোর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ইসির সিদ্ধান্ত পেলে জানাব।”
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিধিমালা সংশোধনে অতীতে কখনো মতামত নেওয়া হয়নি। এখন কেন দরকার পড়বে? সময় কম, মতামত নেওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি না।”