বিদেশি খুনে দলীয় নেতা এম এ কাইয়ুমকে জড়িয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বক্তব্যকে ‘আজগুবি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে বিএনপি।
Published : 28 Oct 2015, 05:14 PM
গুলশানে ইতালির নাগরিক চেজারে তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে কাইয়ুমের নাম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলার পর তার প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে দলটি।
এতে বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, বিদেশি খুনের পর সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের কথায় বিরোধী জোটকে জড়ানোর যে আশঙ্কা তারা প্রকাশ করছিলেন, মন্ত্রীর কথায় তাই সত্যি হল।
“স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে এটা প্রমাণিত হল যে, সরকার বিদেশি খুনে বিএনপির কোনো কোনো নেতার নাম জড়িয়ে দলটিকে যে হয়রানি করবে, সেই আশঙ্কা আবার প্রতিষ্ঠিত হল।”
হত্যা-খুনের রাজনীতিতে বিএনপি বিশ্বাস করে না দাবি করে রিপন বলেন, “বিএনপির কোনো কোনো নেতার নাম জড়িয়ে সরকারের তরফ থেকে যেসব আজগুবি, কাল্পনিক ও অসত্য অভিযোগ করা হচ্ছে, তাতে সত্যের লেশমাত্র নেই। আমরা তাদের এহেন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”
ইতালির নাগরিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তারের পরদিন মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বিএনপি নেতা কাইয়ুমের নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।
এর প্রতিবাদ জানাতে বিএনপি নয়া পল্টনে সংবাদ সম্মেলন ডাকে। তবে মন্ত্রী ইতোমধ্যে তার বক্তব্য থেকে সরে গিয়ে বলেছেন, কাইয়ুমকে সন্দেহ করছেন তারা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কাইয়ুম ঢাকা মহানগর কমিটিরও যুগ্ম আহ্বায়ক। সাদেক হোসেন খোকা মেয়র থাকার সময় তিনি গুলশান-বাড্ডা এলাকার কমিশনার ছিলেন।
ঢাকায় তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডের তদন্তে তার নাম আসার পাশাপাশি রংপুরে আরেক বিদেশি কুনিও হোশি হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবীবুননবী খান সোহেলের ভাই রাশেদুননবী খান বিপ্লবকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রিপন বলেন, “আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, দুজন বিদেশি খুনের পর থেকেই সরকারের তরফ থেকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছিল। সে প্রেক্ষাপটে ঢাকা মহানগর নেতা এম এ কাইয়ুম ও হাবিব উন নবী খান সোহেলকে জড়িয়ে যে প্রোপাগান্ডা করা হচ্ছে, তাতে প্রকৃত অপরাধীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে আমরা আশঙ্কা প্রকাশ করছি। এর ফলে হত্যাকাণ্ডেরর মোটিভ ও খুনিদের বিচার করাও সম্ভব হবে না বলে আমরা মনে করি।”
এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সরকার ‘অপরাজনীতি’ করছে দাবি করে তিনি বলেন, “সরকারের এহেন পদক্ষেপ তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে প্রতিহিংসার অনলে পুড়িয়ে ধ্বংস করার দুরভিসন্ধি ছাড়া কিছু নয়।”
“সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে- ব্লেম গেইম খেলা বন্ধ করুন,” বলেন তিনি।
দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের ‘নিরপেক্ষ’ তদন্ত দাবি করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
ওই তদন্তে বিএনপির কোনো নেতার নাম চলে এলে কী বলবেন- প্রশ্ন করা হলে রিপন বলেন, “বিএনপি হত্যা-খুনের রাজনীতি করে না। সুতরাং কোনো নিরপেক্ষ তদন্তে বিএনপির কোনো নেতা-কর্মীর সংশ্লিষ্টতা থাকার কোনোই কারণ নেই।”
নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগাম নির্বাচনের দাবিকে পাশ কাটাতে যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপিকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচিত করার চেষ্টাও সরকার করেছিল বলে দাবি করেন রিপন।
“কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আদালত গত ৭ জুলাই এক রায়ে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, বিএনপি কোনোভাবেই একটি সন্ত্রাসী সংগঠন নয়।”
সংবাদ সম্মেলনে রিপনের সঙ্গে ছিলেন বিএনপি নেতা জিয়াউর রহমান খান, আবদুস সালাম আজাদ, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করীম শাহিন, তকদির হোসেন জসিম প্রমুখ।