দুই বিদেশি হত্যার ঘটনায় সরকার ‘কল্পকাহিনী’ সাজিয়ে নেতাদের জড়ানোর ‘অপচেষ্টা’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ।
Published : 23 Oct 2015, 05:02 PM
শুক্রবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “সরকার এমনসব কল্পকাহিনী বানিয়ে দলের নেতাদের হয়রানি করছে যা ইতিহাসে অতীতে কোনো দিন কেউ দেখেওনি, শুনেওনি। হাবিব উন নবী খান সোহেল বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি। তাকে বলা হচ্ছে তিনি নাকি জঙ্গি। তার সর্ম্পকে নানা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।”
“এখন শুনতে পারছি, দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সোহেল এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানকেও জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।”
এসব ‘অপচেষ্টা’ থেকে সরকারকে বিরত থাকার আহ্বানও জানান তিনি।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ইতালির নাগরিক চেজারে তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডের পর ৩ অক্টোবর রংপুরে খুন করা হয় জাপানের নাগরিক কুনিও হোশিকে।
রাজধানীর কূটনীতিক পাড়ায় সন্ধ্যার পর তাভেল্লাকে গুলি চালিয়ে হত্যার পর যেভাবে খুনিরা মোটর সাইকেলে পালিয়ে গিয়েছিল, তিনশ কিলোমিটার দূরে রংপুরের পল্লীতে কুনিওর হত্যাকাণ্ডও ছিল একই কায়দায়।
জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে সংগঠনের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের বিরুদ্ধে সরকারের অব্যাহত ষড়যন্ত্র ও গণমাধ্যমে ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডে এফবিআই না আসার বিষয়টি তুলে ধরে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হান্নান শাহ বলেন, “অতীতে যেমন বিভিন্ন ঘটনা বিশেষ করে ব্লগার হত্যার পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমেরিকা থেকে এফবিআই এসে উপস্থিত হয়েছিল। এতদিন হয়ে গেল, দুই-দুইজন বিদেশি নাগরিক খুন হলেন, এফবিআই আসতে দেখি নাই। তারা আসেন না কেন? তাহলে কী বলতে হয়- ডাল ম্যা কুচ কালা হ্যায়।”
“উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর মতো বিএনপির ওপরও সরকার দোষ চাপানোর কথা বলছে।”
চেকপোস্টে কর্তব্যরত পুলিশের এসআইয়ের হত্যাকাণ্ডে উদ্বেগ প্রকাশ করে হান্নান বলেন, “চেকপোস্ট বসিয়ে বিদেশিসহ জনগণকে নিরাপত্তার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই নিরাপত্তার প্রথম শিকার দেখলাম একজন এএসআই ডেড। ”
“এই যদি অবস্থা হয়। দেশিরা-বিদেশিরা নিরাপদ না। আজ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও নিরাপদ নয়। আপনারা (সরকার) কী মনে করেন, দেশে এরকম অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বজায় রেখে, হিংসা-বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়ে আপনারা সুখে শান্তিতে থাকবেন। ইতিহাস তা বলে না।”
সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আমি বলব, অবিলম্বে সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিন। বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করে বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসন করার জন্য সচেষ্ট হউন।”
“অন্যথায় ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। তাই সময় থাকতে সাবধান। সময় থাকতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব, দেশকে টেনশন মুক্ত করুন। ”
কক্সবাজার ও গাইবান্ধায় ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যের ‘নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের’ কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “তাদের ওইসব কর্মকাণ্ড কী জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নয়? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি জঙ্গি খুঁজেন কোথায়। বিদেশে গিয়ে খালি জঙ্গি জঙ্গি বলেন। নিজের ঘরে ওইসব জঙ্গি ধরেন।”
বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে শায়খ আবদুর রহমান, বাংলা ভাইসহ শীর্ষ জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান হান্নান শাহ।
এর আগে আলোচনা সভার শুরুতে চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের কর্মীদের হাতে পল্টন থানার সভাপতি সাহাদাত হোসেন তুহিন লাঞ্ছিত হন। তবে নেতাদের হস্তক্ষেপে তা বেশিদূর এগোয়নি।
সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি মুনির হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, যুব দলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।