“বিভিন্ন পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ ছিল না, কিন্তু ঘোমটা পরে সবখানেই প্রার্থী ছিল।”
Published : 11 Apr 2023, 04:02 PM
বিভিন্ন পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী না থাকলেও ‘ঘোমটা পরে’ সবখানেই তাদের প্রার্থী ছিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, “এই ঘোমটা পরা প্রার্থী কিন্তু সিটি নির্বাচনেও থাকবে। সিলেটের আরিফ বর্তমান মেয়র অলরেডি ঘোষণা দিয়েছেন। কাজেই অন্যান্য সিটিতেও ঘোমটা পরা তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে। এটা বিএনপির রাজনীতির আরেক ভণ্ডামি। এটা ভণ্ডামি, তারা করছে।”
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের। কয়েকটি জেলার আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, দলীয় সংসদ সদস্য ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে ওই সভা হয়।
তিনি বলেন, “সিটি নির্বাচনে আমরা তাদেরকে আমন্ত্রণ করছি না। নির্বাচন অংশগ্রহণ করা তাদের অধিকার। জাতীয় নির্বাচনে যেমন সিটি নির্বাচনেও তেমন। আমরা লক্ষ্য করেছি যে, বিভিন্ন পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ ছিল না, কিন্তু ঘোমটা পরে সকল খানেই প্রার্থী ছিল।
“আগামী নির্বাচনেও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী, স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী বিএনপির নেতৃত্বে অপশক্তির কারো ছায়া এখনও বিস্তার। এই অপশক্তি যে বিষ বৃক্ষের জন্ম দিয়েছে, এই বিষ বৃক্ষের উদঘাটন হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম লড়াই চলবে।”
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হতে আর সাড়ে সাত মাস বাকি। নভেম্বর থেকে ২৯ জানুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে ইসির। ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সংসদ নির্বাচনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে কমিশন।
তার আগে গাজীপুর, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করতে হবে। আগামী মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুনের মধ্যে তিন ধাপে এই পাঁচ সিটিতে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে সেতুমন্ত্রী বলেন, “তারা (বিএনপি) বলে ত্রিশটির বেশি সিট নাকি আওয়ামী লীগ পাবে না, প্রমাণ করবেন কীভাবে? নির্বাচনে আসেন, জনগণ ভোট দেবে।
“মনে কি নেই ২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে বেগম খালেদা যে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ৩০টা আসনও পাবে না। মনে আছে? মির্জা ফখরুলের দেশনেত্রী কথা কি বলেননি? পরে দেখা গেল ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি…২৯ এর সাথে এক ৩০টি আসন তারা পেয়েছিল। এখন আবার সেই পুরনো দম্ভোক্তি তারা করে যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “আসন্ন নির্বাচনে তাদের কপালে ৩০ সিট আছে বলেই মনে করে, তাদের কপালে ৩০ সিট জুটবে কিনা সেটা ভেবেই বিএনপি নির্বাচন বানচালার চক্রান্ত করছে। নিজেরাই ৩০ আসন পায় কিনা দেখুক।”
বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “পাবলিক খায় না, পাবলিক যদি না খায় ওই আন্দোলনের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সেই আন্দোলনের ডাক দেওয়া যাবে, ঢেউ আসবে না। ডাক দেওয়া যাবে জোয়ার আসবে না। এখন পর্যন্ত আসেনি। ভবিষ্যতেও আসার সম্ভাবনা নেই। মরুভূমিতে বৃষ্টি ঝরানোর চেষ্টা করছে, লাভ নাই। আপনাদের অঙ্গন মরুভূমি হয়ে গেছে।”
‘জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক নয়, পাঠক’
বিএনপি স্বাধীনতা বিশ্বাস করে না দাবি করে সেতুমন্ত্রী বলেন, “বিএনপি এখনও স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত দিবসগুলোকে অস্বীকার করে। তারা পালন করে না। তারা উপেক্ষা করে। এর মধ্যে ১৭ এপ্রিল একটা। এই দিন দেখবেন বিএনপির কোনো কর্মসূচি নেই, তারা পালন করে না।
“যে ভাষণ একটি জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, ৭ মার্চ তারা স্বীকারও করে না, পালনও করে না। এরা নাকি স্বাধীনতা বিশ্বাসী। দেখবেন বিজয় দিবসে তাদের প্রোগ্রামে বঙ্গবন্ধু নেই, স্বাধীনতা দিবসেও দেখবেন বঙ্গবন্ধু নেই, জিয়া রহমান যা শুরু করে দিয়ে গেছে, সেই ধারা বিএনপিতে এখনো অব্যাহত রয়েছে।”
জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষণার ‘অন্যতম পাঠক’ হিসেবে বর্ণনা করে কাদের বলেন, “তারা বিজয় দিবস পালন করে তাদের বিজয়ের মহানায়ক নেই। তারা স্বাধীনতা দিবস পালন করে তাদের স্বাধীনতার স্থপতি নেই। ক্ষমতায় থাকতে তারা এটা করেছে। এখনও তারা একই ভাবধারায় রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তারা ধারণ করে না। স্বাধীনতার আদর্শ তারা বিশ্বাস করে না। এটা আজকে বাংলাদেশের প্রমাণিত সত্য।
“তারা স্বাধীনতার ঘোষক বলে যাকে দাবি করেন, যিনি ঘোষণার অন্যতম পাঠক। আবুল কাশেম সন্দীপ, এম এ হান্নান, এরকম অনেক পাঠক ছিল। জিয়াউর রহমান ও তাদের মধ্যে একজন ঘোষণার পাঠক। ঘোষণার পাঠক ঘোষক হতে পারে না। ঘোষণা বৈধ অধিকার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া আর কারও ছিল না। বঙ্গবন্ধুরই একমাত্র বৈধ অধিকার ছিল। সত্তরের নির্বাচনের যে মেন্ডেট এদেশের জনগণ তাকে দিয়েছিল।”
স্বাধীনতার ঘোষণার বৈধ অধিকার যার নেই, তাকে বিএনপি ঘোষক বানাতে চায় বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
“একটা বাশির ফুঁ-তে স্বাধীনতা হয়নি। সংগ্রাম আন্দোলনের একটা ইতিহাস যেখানে বীরের বীরত্ব আছে, পাশাপাশি ষড়যন্ত্রও আছে। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ ইতিহাসে কূটনীতিক হতে পারে, কিন্তু নায়ক মহানায়ক তাকে বানানো তাদের একটা উদ্ভট কল্পনা, যার সাথে বাস্তবের কোনো সংযোগ নেই।
“এটা বিকৃত ইতিহাসের নির্লজ্জ বিবৃতি যে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক। জিয়াউর রহমান ইতিহাসের নায়ক নয়, ইতিহাসের কূটনীতিক। তারা আজকে অনেক কিছু বলে, তাদের বলার কোনো শেষ নেই। আমরা আমাদের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাব। এই দেশ মুক্তিযুদ্ধের দেশ, এই দেশ স্বাধীনতা সংগ্রামের দেশ।”
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খানসহ খুলনা বিভাগীয় নেতৃবৃন্দ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।