যমুনাকে সরু করার পরিকল্পনাকে ‘আত্মঘাতী’ বলছে বিএনপি

নদীটির প্রশস্ততা সাড়ে ৬ কিলোমিটার কমাতে চায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2023, 02:13 PM
Updated : 14 March 2023, 02:13 PM

যমুনা নদীর প্রশস্ততা কমাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড যে পরিকল্পনা করছে, তা পরিবেশ ও জলবায়ুর জন্য মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনবে হবে বলে সতর্ক করেছে বিএনপি।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “বাংলাদেশের যমুনা নদী সংকুচিত করবার একটি ভয়াবহ ক্ষতিকর প্রকল্প নিয়ে গতকাল (সোমবার) জাতীয় স্থায়ী কমিটির (বিএনপির) সভায় আলোচনা হয়েছে।

“সভা মনে করে, এই প্রকল্প বাংলাদেশের পরিবেশ, প্রকৃতি, জনগণের জীবিকা, জলবায়ুর মারাত্মক ক্ষতি করবে। এই ধরনের আত্মহননকারী সিদ্ধান্ত বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি।”

মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত জানাতে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, “যমুনা নদী সংকুচিত প্রকল্প নামে একটি পাইলট প্রকল্প সরকার করছে। ইতিমধ্যে কিছু টাকাও বরাদ্দ করা হয়েছে। এটা একটা ভয়াবহ সুইসাইডাল প্রকল্প।

“সরকারের সমস্যাগুলো এই জায়গায় যে, যেগুলো প্রয়োজন সেখানে তাদের দৃষ্টি নেই। বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণ মুক্ত করার কোনো উদ্যোগ নেই, কোনো প্রকল্প নেই, শীতলক্ষ্যা নদীকে দূষণমুক্ত করার কোনো উদ্যোগ নেই, কোনো প্রকল্প নেই। কোথায় যমুনা নদী একটা- আবহমানকাল ধরে হাজার বছর ধরে প্রবাহমান বিভিন্ন নদীর সব আবর্জনা নিয়ে গিয়ে তলিয়ে ফেলছে … পলি তৈরি করছে, সেই নদীকে সংকুচিত করতে চায় কার স্বার্থে?”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “স্বার্থ একটাই। এক নম্বর এই যমুনা নদীকে অকেজো করে ফেলা, দুই নম্বর হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে তাদের সম্পদ বৃদ্ধি করা। এই প্রকল্প অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে জনগণকে পরিষ্কার ধারণা দিতে হবে।”

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় যমুনা নদীর তীর রক্ষা এবং ঝুঁকি প্রশমনে টেকসই অবকাঠামো শীর্ষক প্রকল্পটি পাঠায় পরিকল্পনা কমিশনে। এতে প্রস্তাব করা হয়েছে, যমুনা নদীর প্রশস্ততা প্রতি বছর বড় হয়ে যাচ্ছে, বর্ষার তা ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটারও হয়ে যায়। নদীর প্রশস্ততা সাড়ে ৬ কিলোমিটার সংকুচিত করা হবে।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এ প্রকল্প প্রস্তাব নিয়ে বেশ কয়েকজন বিরোধিতা করেন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে। ১ হাজার ১০৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

প্রকল্পটি নিয়ে সোমবার আলোচনা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও। সোমবার দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে ওই বৈঠক হয়।

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, “এই সরকার বিদ্যুৎ খাতকে প্রধান দুর্নীতি খাত হিসেবে বেছে নিয়েছে এবং এখান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে ফেলেছে। একেকজন সিঙ্গাপুরে গিয়ে সিআইপি হচ্ছে, নাম্বার টু, নাম্বার থ্রি হয়ে যাচ্ছে তারা... এত বেশি টাকা তারা বাংলাদেশ থেকে লুট করে নিয়ে গেছে।”

বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে জনগণের দুর্ভোগ বর্ণনা করতে গিয়ে নিজের উত্তরার ভাড়া বাসার বিল তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

“আপনারা বিশ্বাস করেন, আমি রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছি। আমার ওয়াইফের সাথে ডেইলি কথা হয় যে, বিদ্যুতে এতো পয়সা দেব কেন? দিতে হচ্ছে। অবাক হবেন শুনলে- কোনো মাসে আমার ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিল আসে। আমার এসি খুব কম চলে। বাসায় আমরা দুজন মানুষ। কী করে মানুষ বাঁচবে?

“তাদের (সরকার) তো এসব বিল দিতে হয় না, সরকার দেয়, জনগণের পয়সা থেকে নেয়। আমাদের তো জনগণকে নিজের পকেট থেকে দিতে হয়।”

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ‘ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি’ দায়ী বলে অভিযোগ করেন ফখরুল। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ও আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করছে বলেও দাবি করেন তিনি।

চলতি অর্থবছরের ৬ মাসে রেন্টাল ও আইপিপি কেন্দ্রগুলোতে ৭০% উৎপাদন বন্ধ থাকার পরেও সরকার ক্যাপাসিটি চার্জের পেছনে ২১৬ কোটি ডলার গুনেছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, অবিলম্বে ক্ষতিকর রেন্টাল ও আইপিপি চুক্তি এবং আদানির গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি বাতিলের দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন উপস্থিত ছিলেন।