আমীর খসরু বলেন, “জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে, যে ঐক্যমত সৃষ্টি হয়েছে সেটাকে অক্ষুন্ন রাখতে হবে, বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারকে সমর্থন করতে হবে।”
Published : 08 Sep 2024, 07:38 PM
অন্তর্বতীকালীন সরকারকে সহযোগিতায় জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
একই সঙ্গে শেখ হাসিনার পতনের পর দেশের মানুষের মনোজগতে যে পরিবর্তন ঘটে গেছে, তা অনুধাবনেরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে রোববার এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তিনি।
‘অন্তর্বতীকালীন সরকারের এক মাস: কেমন গেলো, কেমন যেতে পারতো’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজক ছিল এবি পার্টি।
সভায় আমীর খসরু বলেন, “আমরা রাজনীতি করি, আমরা অনেক কথা বলি, অনেক বক্তব্য দেই, যার যার প্রেক্ষাপট থেকে আমাদের কথাগুলো বলি এবং বলব। কিন্তু বটম লাইন হচ্ছে, আজকে অন্তর্বতীকালীন সরকারকে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে আমাদেরকে সমর্থন করে কাজগুলো (সংস্কার) সম্পন্ন করতে হবে।
“জাতীয় ঐক্যের এই মুহূর্তে কোনো বিকল্প নাই। জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে, যে ঐক্যমত সৃষ্টি হয়েছে সেটাকে অক্ষুন্ন রাখতে হবে, বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারকে সমর্থন করতে হবে।”
তিনি বলেন, “এই যে মুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি এটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। শেখ হাসিনার পলায়নের পরে বাংলাদেশের মানুষের মনোজগতে যে পরিবর্তন এসেছে, সেটা আমাদেরকে বুঝতে হবে। এই মনোজগৎ হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে চায় পরিপূর্ণভাবে … দাঁড়ি কমা থাকবে না। বাংলাদেশের মানুষ মুক্ত অবস্থায় বাঁচতে চায়, বাংলাদেশের মানুষ রাজনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে সমতল লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চায়।”
আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না অন্তর্বতীকালীন সরকারের উদ্দেশে বলেন, “যখন তারা (সরকার) বলছেন, ‘সংস্কার করব আমরা, ততদিন সময় দিন’। তখন তো বলতে হব, কী কী এজেন্ডা সংস্কারে আছে সেটা বলেন এবং তার জন্য কয়দিন লাগবে সেটা বলেন। এই ব্যাপারে এই এক মাসে আমি কোনো লাইফ দেখতে পারছি না।
“এখন হয়তবা তাদের কাছে আছে অথবা তারা মনে করছেন এখনই বলা যাবে না। এটা সত্যি, যদি জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে না যান, তাহলে কোনোদিনই সফল হবেন না।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “ত্রিশ দিন পার হয়েছে, এখন পর্যন্ত আপনারা কাজের কোনো এজেন্ডা প্রকাশ করেননি। বাংলাদেশের মানুষ আমরা এখন পর্যন্ত জানতে পারিনি।
“গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডার সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনা করে কী কী গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করতে হবে, কোথায় হাত দিতে হবে, কোথায় আমাদের পরিবর্তন করতে হবে, একটা বোঝাপড়া, একটা সমঝোতা … এটা তৈরি করে অন্তর্বতীকালীন সরকার একটা মডারেটর হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।”
তিনি বলেন, “যারা এখন অন্তর্বতীকালীন সরকারে আছেন, আপনাদের কাজ এবং এখতিয়ার সম্পর্কে আপনাদের পরিষ্কার ধারণা থাকবে, বোঝাপড়া থাকবে। আপনারা একটা দৌড় শুরু করেছেন কিন্তু কোথায় আপনারা থামবেন, কোথায় আপনাদের যতি টানতে হবে, কোথায় বিরতি দিতে হবে, এ ব্যাপারে আপনাদের পরিষ্কার বোঝাপড়া, পরিষ্কার হিসাব থাকা দরকার।”
আওয়ামী লীগের সময়ে সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকা জাতীয় পার্টির সমালোচনা করেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী।
তিনি বলেন, “স্বৈরাচার এরশাদকে নয় বছরে আমরা পতন করালাম, সেই এরশাদকে কোলে তুলে নিলো গত ১৭টি বছর। সেই জাতীয় পার্টি উপরেরটাও খাইল, গাছেরটাও খাইল, তলারটাও খাইল, মন্ত্রিত্ব নিলো, সমস্ত রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা নিলো।
“এখন দেখতেছি তারা বলে- ‘জুলাই বিপ্লবে আমরা বিবৃতি দিয়েছি, জুলাই বিপ্লবকে আমরা সমর্থন করেছি’। আর তাদেরকে জামাই আদর দিয়ে সব জায়গায় ডাকা হচ্ছে। এটা মানা যায় না। এই পতিত স্বৈরাচারের সাথে যারা সহযোগী, জাতীয় পার্টি একই দোষে দুষ্ট। তারা না থাকলে এতদিন শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে পারত না।”
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষা এই রাষ্ট্র হবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। কেউ যদি অন্যকিছু চিন্তা করেন সেটা বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেবে না।
“গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হবে এবং গণতান্ত্রিক সংবিধান হবে। এই লক্ষ্য ছাত্র-জনতার লক্ষ্য, এই লক্ষ্য ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সামনে এসেছে। কাজেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, গণতান্ত্রিক সংবিধান কীভাবে অর্জন করা যাবে, এটা কোনো একক দল কিংবা গোষ্ঠীর প্রশ্ন না। বাংলাদেশে কীভাবে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং সংবিধান অর্জন করা যাবে, তার জন্য প্রয়োজনীয় আলাপ-আলোচনা দরকার।”
এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্ত দেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, খেলাফত মজলিশের আহমেদ আবদুল কাদের, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা আশরাফ আলী আকন্দ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, ন্যাশনাল পিপপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণঅধিকার পরিষদের মিয়া মোহাম্মদ মশিউজ্জামান, এবি পার্টির আব্দুল ওহাব মিনার, বিএম নাজমুল হক, নাসরিন সুলতানা মিলি এবং রাষ্ট্র বিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী প্রমুখ।