“আমি মনে করি গত ২০ বছর যাবত আধুনিকতার নামে, আমাদের ধর্মকে ‘অ্যাটাক’ করার একটা প্রবণতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে”, বলেন বিজেপি নেতা।
Published : 23 Nov 2024, 09:37 PM
সংবিধান সংশোধন করে ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (স.) কে নিয়ে কটূক্তির ঘটনায় শাস্তির বিধান সংযোজনের পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ।
বিএনপির সাবেক শরিক দলের নেতা মনে করেন, সংবিধান পরিবর্তন করা জরুরি, তবে এটা করার নৈতিক অধিকার রাখে কেবল নির্বাচিত সরকার।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে ‘সংবিধান সংস্কার’ বিষয়ে এক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংবিধান জরুরি মত দিয়ে পার্থ বলেন, “কিন্তু সংবিধান সংস্কার করবে কে? আমি এখনও বিশ্বাস করি, সংবিধান সংস্কার করতে হলে জনগণের সরকার প্রয়োজন। আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচিত সরকারই সংবিধান সংস্কার করার নৈতিক অধিকার রাখে।”
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে যেসব বিষয়ে সংস্কারের কথা বলছে, তার মধ্যে আছে সংবিধানও। এ সংক্রান্ত একটি কমিশন কাজ করছে আলী রিয়াজের নেতৃত্বে, যিনি এই দায়িত্ব পাওয়ার আগে সংবিধান নতুন করে লেখার কথা বলেছিলেন।
তবে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সংবিধান সংশোধনের আলোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে সংবিধানে ৯৩ অনুচ্ছেদের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, যেখানে স্পষ্টতই রাষ্ট্রপতির এ বিষয়ে আদেশ জারির ক্ষমতা নেই। এর মধ্যে পার্থও নির্বাচিত সরকার দ্বারা সংবিধান সংশোধনের কথা বললেন।
ব্ল্যাসফেমি কেন চান পার্থ
সংবিধান সংশোধন করে কী কী চান, তাতে কী থাকা এবং না থাকা উচিত, তার একটি সুপারিশ তুলে ধরেন বিজেপি নেতা।
নানা সময় ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ‘ধর্ম অবমাননা’কে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে ব্ল্যাসফেমি আইনের দাবি জানিয়ে আসছে, সেই সুরেই কথা বলেন তিনি।
পার্থ বলেন, “সংবিধানের ২ (ক) নম্বর অনুচ্ছেদের সংস্কার করে ইসলাম ধর্ম ও মহানবীকে নিয়ে কটূক্তি করার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি শাস্তির বিষয়ে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ইসলাম ধর্ম, সংস্কৃতিকে যথাযথ সম্মান দেওয়ার প্রস্তাব করছি।”
এই অনুচ্ছেদে বলা আছে, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করবে।
কেন এই ধারায় ব্ল্যাসফেমির বিধান যুক্ত করতে চাইছেন, তার ব্যাখ্যা দিয়ে পার্থ বলেন, “আমি মনে করি গত ২০ বছর যাবত আধুনিকতার নামে, গ্লোবালাইজেশন বা কালচারের নামে আমাদের ধর্মকে ‘অ্যাটাক’ করার একটা প্রবণতা অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।”
ধর্মকে কথিত ‘আক্রমণের জন্য’ মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে ২০১৩ সাল গণজাগরণ মঞ্চকে দায়ী করে বিজেপি নেতা বলেন, “আমি এটা লক্ষ্য করেছি গণজাগরণ মঞ্চের সেই সময় থেকে। অনেকেই সেই অবস্থানের উপর ভিত্তি করে আমাদের ধর্ম এবং মহানবীকে বিভিন্নভাবে অপমান এবং কটূক্তি করার পায়তাঁরা করেছিল।”
আরও পড়ুন
পাকিস্তানের ব্লাসফেমি আইন ও নাগরিকের অধিকার
ব্লাসফেমি আইন বনাম মতপ্রকাশের স্বাধীনতা
আবার জঙ্গি: পাকিস্তানি বনাম বাংলাদেশি গণমানস
'ব্লাসফেমি আইন করতে বাধ্য হবেন প্রধানমন্ত্রী'
আর কী কী দাবি
পার্থ বলেন, “সংবিধানের ১৪৫ নম্বর অনুচ্ছেদ সংস্কার করে সব আন্তর্জাতিক চুক্তি জনগণের সামনে জানিয়ে দিতে হবে। জনগণ জানতে চায়, জনগণ কী দিল, জনগণ জানতে চায় জনগণ কী পেল।
“আমরা সব দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চাই, কারও সাথে ‘স্বামী-স্ত্রীর’ সম্পর্ক রাখতে চাই না।”
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সংসদে নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার অধিকার দেওয়ার সুযোগও চেয়েছেন পার্থ। ৭৫ অনুচ্ছেদেও সংস্কার চেয়েছেন তিনি।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার তাগিদও দিয়েছেন বিজেপি নেতা। তিনি বলেন, “এটা তো বাংলাদেশে একটা পাগলেরও দাবি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার হওয়া। বাংলাদেশের গাছ, পাতা, ইট বালি, পশু-পাখি সবাই এটা উপলব্ধি করে। এই দাবি গত ১৭ বছর ধরে করে আমরা করে আসছি। এখনও করছি। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকতে হবে।”
সংবিধান পরিবর্তন ‘জরুরি’
সংবিধানকে আরও বেশি ‘সময়োপযোগী’ ও প্রাসঙ্গিক করার উচিত বলে মনে করেন পার্থ।
তিনি বলেন, “সংবিধানকে প্রাসঙ্গিক হতে হবে। আমরা এটা উপলব্ধি করি যে বাংলাদেশের সংবিধান পরিবর্তন প্রয়োজন।
“আজ থেকে ৪০ বা ৫০ বছর আগে যে সংবিধান লেখা হয়েছে, সেটা সেই সময়ের জন্য হয়ত ভালো ছিল। কিন্তু আজকের দিনের সংবিধান এই কথা বলে না। সুতরাং আমরা এই সংবিধান সংস্কার চাই।”
এই সংবিধান ‘ফ্যাসিস্ট বানানোর কারখানায়’ পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করে বিজেপি নেতা বলেন, “এই সংবিধানকে ব্যবহার করে বারবার মানুষের উপর ‘অত্যাচার’ করেছে, ভোটের অধিকার ধ্বংস করে ফেলেছে।
“সুতরাং আমরা মনে করি, শুধু এই সরকার কেন, যেকোনো সরকার সামনে আসবে, এই সংবিধান দ্বারা পরিচালিত হলে তাদের ‘ফ্যাসিস্ট’ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।”
তবে পার্থ চান না অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানে হাত না দিক।
তিনি বলেন, “আমরা সংবিধানের সংস্কারের যে প্রস্তাব দিচ্ছি, অবশ্যই এই প্রস্তাবগুলি কোনো নির্বাচিত সরকারের ঠিক করা উচিত বা বিবেচনা করা উচিত।
“যেহেতু এই সরকার জনগণের সরকার, জনগণের ভোট দ্বারা নির্বাচিত সরকার না, কিন্তু আমরা মনে করি, যদি আমরা সবাই একমত হই, তাহলে আমরা সে প্রস্তাবগুলো দিতে পারি এবং এগুলি যুগোপযোগী এবং অন্তর্বর্তী সরকার এগুলো আমলে নিতে পারে।”
আলোচনায় বিজেপির মহাসচিব আব্দুল মতিন সাউদ, বাংলাদেশ জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, জাতীয় যুব সমিতির আহ্বায়ক হারুনুর রশীদও বক্তব্য রাখেন।