বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে হত্যা মামলায় আসামি করা মানবাধিকার ‘লঙ্ঘন’: আওয়ামী লীগ

“এসব ঘটনা মানবাধিকারের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। আমরা এর নিন্দা এবং অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানাচ্ছি,” বলেছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

গত ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর ঢাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা ও লুটপাট চালায় একদল মানুষ। জেলায় জেলায় ঘটেছে একই ঘটনা।

বিরুদ্ধমত দমনে হত্যা মামলাকে ‘হাতিয়ার’ করা হচ্ছে অভিযোগ করে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ দাবি করেছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে এসব মামলায় আসামি করে মানবাধিকার ‘লঙ্ঘন’ করা হচ্ছে।

শনিবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এমন অভিযোগ তুলে এসব ঘটনার নিন্দা করেছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

আওয়ামী লীগের পক্ষে দেওয়া বিবৃতিতে নাছিম বলেছেন, “বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঢালাওভাবে হত্যা মামলার আসামি করছে। ইতোমধ্যে বহু বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্টদের নামে মামলা হয়েছে এবং একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

“এসব ঘটনা মানবাধিকারের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। আমরা এর নিন্দা এবং অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।”

প্রবল গণআন্দোলনের মুখে ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর সাংবিধানিক সংকটের মধ্যে তিন দিন পর গঠন করা হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস।

ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এরই মধ্যে ঢাকাসহ জেলায় জেলায় মামলা হয়েছে। তাকে যেসব মামলায় আসামি করা হয়েছে, সেগুলোতে তার দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদেরও আসামি করা হয়েছে। আলোচিত পুলিশসহ সাবেক সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে।

বিবৃতিতে নাছিম অভিযোগ করেছেন, “বিরুদ্ধমত দমনে অন্তবর্তীকালীন সরকার হত্যা মামলাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। যাদেরকেই এই অনির্বাচিত সরকার প্রতিপক্ষ মনে করছে, তাদেরকেই হত্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে।”

বিবৃতিতে নাছিম সাংবাদিকদের হত্যা মামলায় আসামি করা প্রসঙ্গে বলেছেন, “সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরা এলাকায় একটি হত্যা মামলায় সাংবাদিক শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রূপাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

“গত বৃহস্পতিবার যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা আরেকটি হত্যা মামলায় আওযামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু, একাত্তর টিভির সাবেক বার্তা প্রধান সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, সময় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আহমেদ জোবায়ের, এটিএন নিউজের সাবেক বার্তা প্রধান মুন্নী সাহা, একাত্তর টিভির প্রিন্সিপাল করেসপনডেন্ট ফারজানা রুপা, একাত্তর টিভির চাকরিচ্যুত হেড অব নিউজ শাকিল আহমেদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খানকে আসামি করা হয়েছে।”

এসব মামলা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও তা তোয়াক্কা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছিম বলেছেন, “সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করার প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশি বিদেশি বিভিন্ন সংগঠন। কিন্তু এসব প্রতিবাদ ও উদ্বেগের তোয়াক্কা করছে না সরকার। গ্রেপ্তারকৃতদের পক্ষে আইনি লড়াইয়ের জন্য কোনো আইনজীবীকে লড়তে দেওয়া হচ্ছে না, যা সুষ্পষ্টভাবে মানবাধিকারের লঙ্ঘন।”

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির কণ্ঠ স্তব্ধ করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ এনেছেন তিনি।

নাছিম বলেন, “গত ২০ অগাস্ট ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন এবং গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকারসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে তথাকথিত 'গণগত্যা'র মামলা দায়ের হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির কণ্ঠ স্তব্ধ করে দিতেই এমন অশুভ চেষ্টা চলছে বলে আমরা মনে করি।”

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনির ওপরে আদালত প্রাঙ্গণে হামলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।

শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে মামলা দেওয়ারও প্রতিবাদ করা হয় বিবৃতিতে।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে মাঠে নামা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেষপর্যন্ত সরকার পতনের একদফায় রূপ নেওয়ার আগে পরে ঢাকাসহ সারাদেশে সাড়ে পাঁচশর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ বিরোধী ও বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্মসহ আন্দোলনে দমনে পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার কথা এসেছে জাতিসংঘের কাছ থেকেও।

এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব হত্যা মামলা হয়েছে, সেগুলোর ঘটনাকাল কোটা থেকে সরকার পতন আন্দোলন ঘিরে রয়েছে। বেশিরভাগ মামলায় দলটির শীর্ষ নেতাদের ‘হুকুমদাতা’ হিসেবে আসামি করার কথা সামনে এসেছে।