সংবাদ সম্মেলন করে এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ নদভীর

“উনি নাকি স্বতন্ত্র প্রার্থী। আমার মনে হয় এলাকায় স্বতন্ত্র নেই, জামাত আছে। জামাতের সমস্ত ক্যাডার এখন মাঠে,” বলেন এই সাবেক এমপি।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2024, 11:40 AM
Updated : 21 March 2024, 11:40 AM

সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে জামায়াত ইসলামী সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনেছেন ভোটে পরাজিত সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী।

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন এই অভিযোগ করেন নদভী। পাশাপাশি তিনি এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অভিযোগও করেন।

গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে জয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব। আর দুইবারের এমপি নদভী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচন করেও হেরে যান।

অতীতে এ আসনটি পরিচিত ছিল জামায়াত ইসলামীর দুর্গ হিসেবে। প্রতিবারই এ আসন থেকে জয়ী হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করত জামায়াত ইসলামী।

২০১৪ সালে এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় নদভীকে। পরপর দুইবার তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও আওয়ামী লীগের অনেকেই তাকে মেনে নিতে পারেননি।

বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে নদভী বলেন, “নির্বাচনের পর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত এমপির প্রত্যক্ষ মদদে তার উগ্র সমর্থকরা সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করার অপরাধে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপর নগ্ন হামলা, বাড়ি-ঘর ভাঙচুর ও মিথ্য মামলা করেছে।

“নির্বাচনের পর এলাকায় একাধিক খুন-খারাবি, চাঁদাবাজি ও ধারাবাহিক চুরি-ডাকাতির ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে।”

নদভী বলেন, “আমি এমপি হওয়ার আগে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় কোনো জাতীয় দিবস পালন কঠিন ছিল। আমি এমপি হওয়ার পর সাতকানিয়া-লোহাগাড়া হয়ে গেছে টুঙ্গিপাড়ার মত। ১০ বছর ছিল শান্তিপূর্ণ।

“অথচ ভোটের পর এই কয়দিনে এলাকায় ছয় জন মার্ডার হয়েছে। আগের ১০ বছরে একজনও মার্ডার হয়নি। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে কি ঘটে জানি না। উনি নাকি স্বতন্ত্র প্রার্থী। আমার মনে হয় এলাকায় স্বতন্ত্র নেই, জামাত আছে। জামাতের সমস্ত ক্যাডার এখন মাঠে।”

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিজয়ী প্রার্থীর (এম এ মোতালেব) পক্ষের সাথে জামায়াতে ইসলামীর ‘সমঝোতা হয়ে থাকতে পারে’ মন্তব্য করে নদভী বলেন, “হয়ত তাদের সাথে সমঝোতা হয়েছে ভোটে আমাকে ঠেকালে, উপজেলার ভোটে তাদের (জামায়াত) দেওয়া হবে। কারণ এখন উপজেলা নির্বাচন ঘিরে তাদের সক্রিয় দেখা যাচ্ছে কেন।

“আমার সময়ে তো জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা এলাকায় ছিল না। এখন হাজারা হাজার ক্যাডার সবাই মাঠে কেন? তিনি (এম এ মোতালেব) আওয়ামী লীগের না স্বতন্ত্র এমপি। তার ছোট ভাই মাওলানা মাহমুদুল হক জামায়াতের সিনিয়র নেতা।”

নদভী বলেন, “আমার সময়ে এলাকায় ওয়াজ হত- হেদায়েতুল ওয়াজ। কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে। আমি এক শ্রেণির ওয়াজিয়ানদের সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় আসতে দিইনি।

“এখন তারা আসছে। ওয়াজের শুরুতেই তারা আমাকে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এবং বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র ভারতকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করছে। এমন বক্তব্য দেয় যেন এটা ইসলামিক স্টেট হয়ে যাবে এবং এর শুরু হবে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া থেকে।”

সাবেক সংসদ সদস্য নদভী বলেন, “সাতকানিয়ায় এখন এমপি একজন না, ১০-১২ জন। সবচেয়ে শক্তিশালী এমপি ডা. আ ন ম মিনহাজুর রহমান (দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য)।

“দুই দিন আগেও দেওদিঘী বাজারে ইফতার বিতরণ ও মাদক বিরোধী সমাবেশের কথা বলে লোকজন আনেন তিনি। পরে লোকজন এসে দেখে সবার হাতে আমার বিরুদ্ধে ব্যানার ফেস্টুন!”

নির্বাচনের পর ‘অপপ্রচারে লিপ্ত একটি কুচক্রী মহল’ বিমান টিকেটের ভুয়া ছবি বানিয়ে ফেইসবুকে প্রচার চালিয়েছে অভিযোগ করে নদভী বলেন, “আমরা নাকি বিদেশে চলে গেছি। আমি এখনো এখানেই আছি। এই সময়ে আমার বিদেশে ৫-৬টি কনফারেন্সের দাওয়াত ছিল। আমি কোথাও যাইনি।”

Also Read: সাবেক এমপি নদভীর দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করবেন মোতালেব

টিআর-কাবিখা ও সরকারি প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে নদভী বলেন, “কেউ যদি প্রমাণ দিতে পারে সরকারি কোনো প্রকল্পের এক টাকার অনিয়ম আমি করেছি, তাহলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব।

“আমার প্রতিষ্ঠিত এনজিও সংস্থা আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে গত ২৬ বছরে সাতকানিয়া-লোহাগাড়াসহ সারাদেশে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। বিভিন্ন দুর্যোগে ৫ লাখ মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। আমি কেন দুর্নীতি করতে যাব।”

গত নির্বাচনে সাতাকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে বঙ্গবন্ধুর প্রতীক নৌকাকে ‘ডুবানোর’ জন্য ঢাকায় থাকা প্রভাবশালী মহলের কলকাঠিতে চক্রান্তের নীল নকশা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয় দাবি করে নদভী বলেন, “নৌকার পক্ষে কাজ করায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর যে অত্যাচার শুরু হয়েছে তার সব তথ্য অচিরেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে ডকুমেন্টসহ পৌঁছে দেব।

“কুচক্রী মহলটি অশুভ তৎপরতা, অপপ্রচার ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ না করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।”

নদভীর অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সংসদ সদস্য এম এ মোতালোবের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।