“একাত্তরে রৌমারীর যে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ছিল সেটিকে পুনরুজ্জীবিত করার যে চেষ্টা করেছি, একাত্তরের পরাজিত শক্তি হিসাবে জামায়াতের সেটা গায়ে লেগেছে”, বলেন হাসনাত কাইয়ুম।
Published : 30 Nov 2024, 08:36 PM
‘একাত্তরের পরাজিত শক্তি’ হিসেবে জামায়াতের ইসলামী একাত্তরকে মুছে ফেলতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম।
মুক্তিযুদ্ধের সময় কুড়িগ্রামের রৌমারীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পুনরুজ্জীবিত করার জন্যই সেখানে কৃষক সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল জানিয়ে তিনি অভিযোগ করেন, ‘এ জন্যই এই সমাবেশ পণ্ড করেছে জামায়াত।’
শুক্রবারের সেই হামলায় জামায়াতকে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন সহযোগিতা করেছে এমন অভিযোগ করে শনিবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। এসময় তিনি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে হামলাকারী জামায়াত নেতা-কর্মীদের বিচারের পাশাপাশি তাদের ‘প্রশ্রয় দেওয়ায়’ পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থার দাবি জানানো হয়।
রাজধানীর তোপখানা রোডে সংগঠনের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত কাইয়ুম বলেন, “একাত্তরে রৌমারীর যে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ছিল সেটিকে পুনরুজ্জীবিত করার যে চেষ্টা করেছি, একাত্তরের পরাজিত শক্তি হিসেবে জামায়াতের সেটা গায়ে লেগেছে।
“জামায়াত যে একাত্তরের ভূমিকাকে মুছে ফেলতে চায় সেখানে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। একাত্তরে তাদের যে মনস্তত্ত্ব ছিল, একাত্তরকে মুছে ফেলার রাজনৈতিক পরিকল্পনা সেটি মুছে ফেলার জন্য তারা স্বরূপে সেখানে আক্রমণ করেছে।”
আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীকে আদর্শিকভাবে ‘পরিপূরক’ দাবি করে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতা বলেন, “আজ পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী একাত্তরের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে নাই, ভুল স্বীকার করে নাই। এত বড় ‘গণহত্যার’ পরও আওয়ামী লীগের অনুশোচনা নাই।”
হাসনাত কাইয়ুম বলেন, তাদের সংগঠনের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রংপুর বিভাগীয় সমন্বয়ক রায়হান কবিরকে জামায়াতের রৌমারীর আমির বলেছেন, রাষ্ট্র সংস্কার করবে ইউনূস সরকার, এটি তার দায়িত্ব। আর তাদেরকে না জানিয়ে সমাবেশ কেন আয়োজন করা হয়েছে।
ওসি ও টিএনও একদম ‘আওয়ামী লীগের পুলিশের মত’ কথা বলেছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ আমলের পুলিশরা যেমন সমস্ত ঘটনা ‘অস্বীকার করেছে’, রৌমারী থানার ওসি লুৎফর রহমানও বলেছেন ‘এখানে সমাবেশ হয়নি, কেউ সমাবেশ ভাঙেনি। সমাবেশের বাইরে কোথাও কোথাও ধাক্কাধাক্কি করেছে।’ টিএনও বলেছে, ‘এখানে সমাবেশের অনুমতি নিয়েছে কে?’।”
বাংলাদেশের মানুষ বাকস্বাধীনতার জন্য লড়াই করে রক্ত দিয়ে ৫ আগস্ট এ দেশকে ‘নতুন বাংলাদেশে’ রূপান্তরিত করেছে উল্লেখ করে হাসনাত কাইয়ুম বলেন, “টিএনওদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে হবে, কৃষকের কথা বলতে হবে, রৌমারীর উন্নতির কথা বলতে হবে-এ মানসিকতা নিয়ে তাদেরকে প্রশাসনে থাকতে দেওয়ার হবে না। তাদের বিচার করতে হবে।
“জামায়াতে ইসলামীকে পরিষ্কার করে রৌমারীর ঘটনার সম্পর্কে ব্যাখ্যা হাজির করতে হবে। আক্রমণ করে বাংলাদেশে রাজনীতি করবে এ পরিস্থিতি এখনো জনগণ মেনে নেয়নি। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ ও ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের চেতনা- গণ আকাঙ্ক্ষা ও গণচেতনাকে বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশে তাদের রাজনীতি করতে হবে।”
রৌমারীর সমাবেশ কেন
সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত কাইয়ুম বলেন, তারা আগামী ২৬ জানুয়ারি চিলমারীতে একটা কৃষকদের মহাসমাবেশ করার পরিকল্পনা করেছেন। সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য চিলমারীর আশেপাশে কুড়িগ্রাম জেলায় প্রধানত আমরা কৃষক সমাবেশগুলো আয়োজন করা হয়েছে। কুড়িগ্রাম ও রংপুর বিভাগের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ হওয়ার কথা।
“এ প্রক্রিয়া যখন চলমান তখন গতকাল শুক্রবার রৌমারীতে একটা পূর্বনির্ধারিত কৃষক সমাবেশ ছিল। সমাবেশের দাবিগুলো ছিল, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় মুক্তাঞ্চল রৌমারীর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে, ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বপাশের ভাঙন রোধে প্রকল্প গ্রহণ, জামালপুর থেকে রৌমারী পর্যন্ত রেললাইন ও গ্যাস লাইন সম্প্রসারণ, রৌমারী নদীবন্দর ও চিলমারী বন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দরে রূপান্তর ও হাট-ঘাট ও জলমহালের ইজারা বাতিল।”
সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অর্থনৈতিক সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া, জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য সোহেল শিকদার, মাহবুবুর রহমান সেলিম, ঢাকা দক্ষিণ মহানগর কমিটির দপ্তর সমন্বয়ক এহসান আহমেদ, রাষ্ট্র সংস্কার যুব আন্দোলনের সদস্য মো. মহসিন, রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি আহমেদ ইসহাকও উপস্থিত ছিলেন।
গ্রেপ্তার দাবি গণসংহতি আন্দোলনের
রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের কৃষক সমাবেশে হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন।
আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে সমাবেশের উপর কোনো রাজনৈতিক দলের হামলা ও সমাবেশে বাধা দেওয়া অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনা।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “সমাবেশে স্থানীয় প্রশাসন যাতে পক্ষপাতিত্বের কোনো আচরণ না করেন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাংলাদেশের জন্য ‘নতুন গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত’ প্রতিষ্ঠারও শর্ত সকল মত, বৈচিত্র্য ও অধিকার রক্ষা করা। আমরা এই কাজে জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকলের ঐক্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাই।”