“প্রবলেমটা হচ্ছে যে, জাতিসংঘ যখন বলে, তখন আমরা সেগুলো সবাই বিশ্বাস করি। যখন আমরা রাজনৈতিক দলগুলো বলি, তখন অনেকেই বিশ্বাস করতে চায় না।”
Published : 13 Feb 2025, 03:34 PM
শেখ হাসিনা ‘ফ্যাসিস্ট’ প্রমাণিত হওয়ায় ভারত সরকার অবিলম্বে তাকে বাংলাদেশের কাছে ফেরত দেবে এবং তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে আশা করছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে দলটির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রত্যাশার কথা বলেন।
তিনি বলেন, “আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই, জাতিসংঘের যে পর্যবেক্ষণ কমিটি এসেছিলেন, তাদের যে রিপোর্ট, সেই রিপোর্টকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই, তারা সঠিকভাবে বলেছেন যে, একজন ব্যক্তি, বিশেষ করে ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্দেশেই সমস্ত হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে।
“যে গণহত্যা হয়েছে, তার নির্দেশে হয়েছে এবং যত মানবাধিকার লঙ্ঘন যা কিছু হয়েছে সব তার নির্দেশে এখানে হয়েছে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দেওয়া, ইন্সটিটিউশনগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া… আজকে সেটাই রিপোর্টে ফুটে উঠেছে যে তার নির্দেশেই হয়েছে।”
ওই গণ অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গতবছরের ৫ অগাস্ট থেকে ভারতে অবস্থান করছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্দোলন দমাতে ‘গণহত্যা’ চালানোর অভিযোগে ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে ফেরত পাঠানোর জন্য ইতোমধ্যে ভারত সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। তবে ভারত সরকার এখনও তার জবাব দেয়নি।
ফখরুল বলেন, “এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে হাসিনা একজন ফ্যাসিস্ট এবং তিনি এদেশের মানুষের ওপর অত্যাচার করেছেন, নির্যাতন করেছেন, হত্যা করেছেন এবং তাকে (শেখ হাসিনা) অবিলম্বে… আমরা আজকে এখান থেকে তাই বলছি…. ভারত সরকার তাকে ফেরত দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের হাতে দেবে এবং তাকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তাকে এবং তার সহযোগী যারা ছিল তাদের সবাইকে; এটাই হচ্ছে আমাদের প্রত্যাশা।”
২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ অগাস্ট বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাবলি নিয়ে তৈরি করা ওই প্রতিবেদন বুধবার প্রকাশ করা হয়। জেনিভায় সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার টুর্ক।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যা ও নির্বিচার গুলির একাধিক বড় অভিযান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ও তদারকিতে হয়েছে বলে উঠে এসেছে ওই প্রতিবেদনে।
মির্জা ফখরুল বলেন, “এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ায় আমরা স্বস্তি প্রকাশ করছি যে, সত্য যেসব ঘটনা ঘটেছে সেগুলো আজকে উদঘাটন হয়েছে। প্রবলেমটা হচ্ছে যে, জাতিসংঘ যখন বলে, তখন আমরা সেগুলো সবাই বিশ্বাস করি। যখন আমরা রাজনৈতিক দলগুলো বলি, তখন অনেকেই বিশ্বাস করতে চায় না। যাই হোক, আমি জাতিংসংঘের পর্যবেক্ষণ যে টিম এসেছিল, তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
তারেকের সঙ্গে ‘বৈঠক করবেন’ ব্রিটিশ হাই কমিশনার
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার আগে যুক্তরাজ্যের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার জেমস গোল্ডম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন মির্জা ফখরুল।
জেমস গোল্ডম্যান বেলা ১১টার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে পৌঁছান। প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক শেষে তিনি চলে যান।
বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, “এটা পূর্বনির্ধারিত বৈঠক। আজকে আবার কাকতালীয়ভাবে ব্রিটিশ হাই কমিশনার সারাহ কুক আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবের সাথে লন্ডনে দেখা করবেন। কিছুক্ষণ পরই মিটিং হবে।
গুলশানের এ বৈঠকে সারাহ কুকেরই থাকার কথা ছিল জানিয়ে ফখরুল বলেন, “ব্রিটিশ হাই কমিশনার নেই, সেজন্য ডেপুটি এসেছেন। আমাদের মধ্যে রুটিন আলোচনা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি, রাজনৈতিক অবস্থা, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছেন সেগুলো সম্পর্ক এবং কবে নির্বাচন হচ্ছে প্রভৃতি বিষয়গুলো সম্পর্কে তারা জানতে চেয়েছেন।”
বৈঠকের পর জেমস গোল্ডম্যান সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
আগের সরকার ‘অস্বীকার করেছিল’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, “গুম হওয়া হত্যা করা এটা শুধু পার্টিকুলার কোনো দল নয়, এখানে (আয়না ঘরে) বাংলাদেশের মানুষকে গুম করা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষকে হত্যা করা হয়েছে নির্মমভাবে। এই কথাগুলো আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি।
“যখন আয়না ঘরের রিপোর্টটা বের হয় আল-জাজিরাতে, আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে, তখন কিন্তু এটা সরকার পুরোপুরি ডিনাই করেছিল। তারা বলেছিল যে, এই ধরনের কিছু নাই। কিন্তু প্রথম থেকেই এই কাজগুলো হচ্ছিল।”
ফখরুল বলেন, “আপনার মানুষকে তুলে নিয়ে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে জঙ্গি! সে জঙ্গি সংগঠন করছে এই ধরনের কথা বলে আটক করে নির্যাতন করে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন কথা বের করার চেষ্টা করেছে। কিছু লোককে তারা রেখে দিয়েছিল যে, বিভিন্ন সময়ে তাদেরকে দিয়ে জঙ্গি নাটক সাজাবে, ভুলে গেছেন নাকি আপনারা?
“একেকটা বাড়িতে জঙ্গির টেনিং হচ্ছে, পড়াশুনা হচ্ছে, জঙ্গিবাদ তৈরি করা হচ্ছে, বোমা তৈরি করা হচ্ছে এসব দেখিয়েছে। কিন্তু আজকে প্রমাণিত হয়ে গেল যে, আমরা যে কথাগুলো বলেছি সেগুলো সত্যি।”
বিএনপিস মহাসচিব বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার ওই সময় অত্যন্ত সচেতনভাবে বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, গণতন্ত্রকে ধবংস করেছে এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা বিরোধী দলকে ধ্বংস করেছে।”