বিএনপি না এলেও নেতারা ঠিকই ভোটে আসবে: হাছান মাহমুদ

দল ছেড়ে বিএনপির উকিল আবদুস সাত্তারের ভোট করার সিদ্ধান্তে সেই ইংগিতই দেখছেন তথ্যমন্ত্রী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2023, 10:02 AM
Updated : 6 Jan 2023, 10:02 AM

বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না এলেও দলটির ‘অনেক নেতা’ ভোটে অংশ নেবে এবং তাদের ‘ঠেকানো যাবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।  

শুক্রবার রাজধানীর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকের সাথে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। 

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন উকিল আবদুস সাত্তার। দলীয় সিদ্ধান্তে গত ১১ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। 

বিএনপি ওই আসনে উপনির্বাচনে না গেলেও উকিল সাত্তার আবারো প্রার্থী হয়েছেন। সেজন্য তিনি দলের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। আর দল তাকে বহিস্কার করার কথা বলেছে।   

বিষয়টি কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দিকে ইংগিত করে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, "আসলে বিএনপির সিদ্ধান্তগুলো তো সমুদ্রের ওপার থেকে আসে। বাংলাদেশের বাস্তবতা সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। তারা ১৫-১৬ বছল ধরে দেশের বাইরে। দেশের পরিস্থিতি কী সে সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই।

“ব্যাক্তিগতভাবে আমি মনে করি, বিএনপির এমপিদের পদত্যাগ করা অদূরদর্শী একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। আব্দুস সাত্তার সাহেবের নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হচ্ছে, আসলে বিএনপির সম্মুখসারির অনেক নেতাই নির্বাচনমুখী। তারা নির্বাচন করতে চায়। 

“এবং তাদের অনেকেই মনে করে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে প্রতিহত করার যে চেষ্টা বিএনপি করেছিল, সেটা ভুল ছিল।” 

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, “২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি করবে না, সেই দোলাচলের মধ্যে থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাটাও বিএনপির ভুল ছিল। অর্থাৎ, পূর্ন শক্তি নিয়ে নির্বাচন করা উচিত ছিল। এবারও তাদের সংসদ সদস্যেদের পদত্যা্গ, সেটি তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই পদত্যাগ বিএনপির জন্য শুভ হয়নি। 

“উকিল আব্দুস সাত্তার সাহেবের নির্বাচন করা এটাই ইঙ্গিত দেয়, বিএনপি যদি ভবিষ্যতে নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেয়, বিএনপির নেতারা কিন্তু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। বিএনপির নেতাদের ঠেকানো যাবে না নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে।” 

সরকার ‘সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চায়’– বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যে প্রতিক্রিয়ায় হাছান মাহমুদ বলেন, "আসলে তো উনারা সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এবং উনারা সন্ত্রাসের ওপর ভর করেই রাজনীতিটা করে। আওয়ামী লীগ জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠন করেছে এবং দেশ পরিচালনা করছে। 

“আমাদের জনগণ যতদিন চাইবে, ততদিনই আমরা দেশ পরিচালনা করব। জনগণ না চাইলে আমরা একদিনও থোকব না। বিএনপি বরং পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায় এবং পেছনের দরজা দিয়েই ক্ষমতায় গেছে।"

মহামারী ও ইউক্রেইন যুদ্ধের মধ্যে বিশ্বব্যাপী সংকটেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “গত বছর জাতির জীবনে দুটি তীলক তিনি পরিয়ে দিয়েছেন; একটি হচ্ছে পদ্মা সেতু, আরেকটি মেট্রো রেল। দেশের প্রতিটি মানুষ উদ্বেলিত হয়েছেন। সমগ্র পৃথিবী প্রশংসা করেছে।” 

সরকার দ্রব্যেমূল্য সহনীয় রাখার ‘যথাসাধ্য চেষ্টা’ করেছে এবং অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি ‘সহনীয়’ পর্যায়ে রয়েছে বলে দাবি করেন তথ্যমন্ত্রী। 

বিএনপির ‘ষড়যন্ত্রের রাজনীতি’ না থাকলে দেশ আরো দ্রুত এগোতো মন্তব্য করে তিনি বলেন, "যদি বিএনপি ও তার মিত্রদের নেতিবাচক রাজনীতি না থাকত, গুজব ছড়ানোর রাজনীতি না থাকত এবং মানুষকে বিভ্রান্ত না করে, একই সাথে বিদেশিদের পদলেহনের রাজনীতি না করে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি যদি না থাকত, আমাদের দেশ আরো বহু দূর এগিয়ে যেতে পারত।” 

গাইবান্ধার উপ-নির্বাচনের প্রসঙ্গ ধরে মন্ত্রী বলেন, "নির্বাচন কমিশনই বলছে গাইবান্ধা নির্বাচন অত্যন্ত সুন্দর এবং সফল একটি নির্বাচন তারা করতে পেরেছে। আমরা দেখছি অবাধ ও সুষ্ঠু একটি নির্বাচন হয়েছে। প্রচণ্ড শীত সেখানে, এজন্য ভোটার টার্নআউট কম হলেও সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন হয়েছে। গতবার নির্বাচন স্থগিত না হলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়লাভ করত। মানুষের মধ্যে, ভোটারদের মধ্যে একটি হতাশা ছিল যে, গতবার ভোট দিয়ে তারা ফল পায়নি। এবার পেয়েছে।"